যে কোনো বৈরী সময়ে সংগীতশিল্পীরা হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেন গানকে। এবারের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে বেশ কিছু গান। এর মধ্যে কিছু গান তৈরি হয় সময়ের চাহিদা মেনে। চলমান পরিস্থিতিতেও প্রকাশিত হয়েছে তেমনই কিছু গান। সে গানগুলো নিয়ে লিখেছেন - পান্থ আফজাল
আওয়াজ উডা বাংলাদেশ
আলোচনার জন্ম দেওয়া র্যাপার হান্নানের ‘আওয়াজ উডা বাংলাদেশ’ গানটি ১৮ জুলাই প্রকাশ পায়। গানটি নিজের ফেসবুকে শেয়ার করে হান্নান ক্যাপশনে লিখেছিলেন, ‘আমরা কোনো সংস্থার বিরোধিতা করছি না। এর পরিবর্তে, আমরা আমাদের সমবয়সিদের কণ্ঠকে প্রসারিত করতে চাই এবং আমাদের দেশকে প্রভাবিত করে এমন সমস্যাগুলোর ওপর আলোকপাত করতে চাই।’ এরপরই ‘আওয়াজ উডা বাংলাদেশ’ গান গেয়ে আলোচনায় আসা বাংলাদেশি র্যাপার হান্নান হোসাইন শিমুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। নেওয়া হয় রিমান্ডে।
ভয় বাংলায়
ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান, যার গান নাড়া দেয় সমাজকে। তিনি নানা শব্দ-সুরে গান বেঁধে তা নিজ কণ্ঠে তুলে নেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ জুলাই প্রকাশিত হয় তেমনই একটি গান - ‘ভয় বাংলায়’। যদিও ২০১৯ সালে নিহত বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের স্মৃতিতে গানটি বেঁধেছিলেন তিনি। তবে চলমান সময়ের সঙ্গেও এ গানের সামঞ্জস্য রয়েছে বিধায় পুনরায় এটি প্রকাশিত করেছেন শিল্পী। তিনি কণ্ঠে আর ধারণ করেন, ‘আমরা জেগে আছি সবাই বাংলাদেশের পাশে’, ‘আমার সূর্য’সহ বেশ কয়েকটি গান।
চলো ভুলে যাই
তরুণতুর্কি পারসা মেহজাবিন পূর্ণি ২৭ জুলাই ফেসবুকে প্রকাশ করেন ‘চলো ভুলে যাই’। শুধু উকুলেলে বাজিয়েই গানটি করেন তিনি। তার মতে, তিনি মাত্র ১০ মিনিটেই বেঁধে ফেলেন গান। এরপর গানটি করেছেন। পারসা বলেন, ‘কতটা কষ্ট নিয়ে গানটা লিখেছি, আমিই জানি। আমি সব সময় সত্যের পক্ষে, মঙ্গলের পক্ষে।’ গানটিতে তিনি কোনো কপিরাইট রাখেননি।
কথা ক
হপহপ গানের শিল্পী মুহাম্মদ সেজান। নিজের ইউটিউব চ্যানেল ১৬ জুলাই উন্মুক্ত করেন গান ‘কথা ক’। বৈরী সময়েও তাঁর গানটি অভূতপূর্ব সাড়া পায়। এটি সেজানের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলেই প্রকাশ পায়।
ও প্রধান
ব্যান্ড ‘শহরতলী’র ভোকাল জিল্লুর রহমান সোহাগ ছাত্র-জনতার আন্দোলন নিয়ে বাঁধেন গান - ‘ও প্রধান’। ২৫ জুলাই গানটি প্রকাশ করেন নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে। গানটি নিয়ে সেসময় মিলেছে সাধারণের প্রশংসা। গানটি নিয়ে জানতে চাইলে সোহাগ বলেন, ‘এটা খুব সোজাসাপ্টা কথার গান। আমি কী বলতে চাই, তা গানের কথাতেই স্পষ্ট। একজন সংবেদনশীল মানুষ হিসেবে আমি সময় ও পরিস্থিতি নিয়ে গানটি করেছি।’
শোন মহাজন
শূন্য ব্যান্ডের গান ‘শোন মহাজন’। ২০১৪ সালে ‘ভাগো’ অ্যালবামের গাওয়া এই গানটি কণ্ঠে তোলেন ব্যান্ডটির ভোকাল ইমরুল করিম এমিল। সেই গানটি এ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনেও প্রেরণা জুগিয়েছিল লক্ষ কোটি ছাত্র-জনতার। এ ছাড়াও এমিলের কণ্ঠে ‘রাজাহীন রাজ্য’, ‘শত আশা ছাত্রদের প্রেরণা জুগিয়েছে।
স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি
প্রতিবাদী শিল্পী হায়দার হোসেনের গাওয়া ‘স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি’ গানটি আজও একইভাবে সমসাময়িক। এ গানটিও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের গান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। সঙ্গে তাঁর গাওয়া ‘আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া’ গানটিও ছিল আন্দোলনের অন্যতম রসদ।
আমরা বীর
সম্প্রতি প্রকাশ পেল অনি হাসানের ‘আমরা বীর’ শিরোনামের গান। গত শুক্রবার অনি হাসান তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করেছেন গানটি। আন্দোলনে নিহত হওয়া শিক্ষার্থীদের উৎসর্গ করা হয়েছে গানটি। অনি হাসান বলেন, ‘একজন শিল্পী হিসেবে আমরা এ আন্দোলনের শুরু থেকে আমাদের দেশের আপামর জনসাধারণের সঙ্গে আছি। যত দিন এই দেহে প্রাণ আছে, তত দিন আমরা দেশের মানুষের জন্য কথা বলে যাব। গানটি আমাদের শহীদ ভাই-বোনদের উৎসর্গ করছি, যারা এখনো রাজপথে আছে, তাদের এ গানের মাধ্যমে আলোড়িত করার চেষ্টা করছি।’
এই শিকল-পরা ছল
কাজী নজরুল ইসলামের ‘এই শিকল-পরা ছল’ গানটি নতুন করে গেয়েছেন পাঁচ সংগীতশিল্পী। শিরোনামহীন ব্যান্ডের শেখ ইসতিয়াক, ক্রিপটিক ফেইটের সাকিব চৌধুরী, অ্যাভোয়েডরাফার রায়েফ আল হাসান রাফা, সোনার বাংলা সার্কাসের প্রবর রিপন ও পাওয়ার সার্জ ব্যান্ডের জামশেদ চৌধুরী-এই পাঁচ সংগীতশিল্পী নতুন করে গাইলেন শিকল পরা ছল। গানের মাঝে মাঝে প্রত্যেকে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন নিয়েও কথা বলেছেন।
দেশ সংস্কার নিয়ে আরও কিছু গান
আন্দোলন নিয়ে আরও কিছু গান আসে অন্তর্জালে। এর মধ্যে রয়েছে র্যাপার তানজের ‘ছাত্র’, কোল্ডক্রাফট ও বিহানের ‘বায়ান্ন’, গোল্ড কিউব ও স্ক্যারি ক্রাউ-এর ‘দেশ সংস্কার’, অ্যাজ অমিক্সে ‘রক্ত’, ম্যাক-ই-ম্যাক ও জিকে কিবরিয়ার ‘সেøাগান’ ও ‘ইনকিলাব’, সিয়াম ফারদিনের ‘আবু সাঈদ’, নাহিদ হাসানের ‘জবাব দেনা’, রেভল্যুশন ইন মোশনের ‘পাল্টে দে ইতিহাস’, ভয়েস অব রেভল্যুশনের ‘রাজাকার’, লুনাটিক্স বীর ও রিদমাস্ত্রের ‘দেশ কার’সহ প্রকাশিত আরও বেশ কয়েকটি গান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বড় অস্ত্র হয়ে ওঠে। এখানেই শেষ নয়, মৌসুমী - ইথুন বাবুর ‘দেশটা তোমার বাপের নাকি’ এবং নব্বই ও শূন্য দশকে প্রকাশিত মাকসুদ ও ঢাকার ‘আবার যুদ্ধে যেতে হবে’, আর্কের ‘আর কত মৃত্যু’, ওয়ারফেজের ‘জনস্রোত’ গানগুলো প্রতিবাদী জনতার মাঝে নতুন করে সাড়া ফেলে।