বশির ভাই ছিলেন পূর্ণাঙ্গ গানের মানুষ : সৈয়দ আবদুল হাদী
বশির ভাইয়ের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয় ১৯৬০ কি ৬২-এর দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গানের অনুষ্ঠানে। তিনি আমার থেকে বয়সে বড় ছিলেন। কিন্তু বশির ভাই যখন আমার সঙ্গে মিশতেন তখন বোঝার কোনো উপায় ছিল না তিনি আমার বড়। এত মিশুক মানুষ আমি আর দুটি দেখিনি। গানের বিষয়ে যদি বলতে হয়, আমি বলব, তিনি ছিলেন একজন পূর্ণাঙ্গ গানের মানুষ। গান নিয়ে একটা মানুষ এত কিছু জানে বশির ভাইয়ের সঙ্গে না মিশলে বোঝা যেত না। গানের সর্বস্তরে তার বিচরণ ছিল। আমি নিজেও অনেক সময় গান নিয়ে বশির ভাইয়ের সঙ্গে আলোচনা করতাম। মানুষটা আমাদের সংগীতাঙ্গনে অনেক কিছু দিয়ে গেছেন।
তিনি ছিলেন পূর্ণাঙ্গ গানের প্রতিষ্ঠান : খুরশীদ আলম
বশির আহমেদ এ দেশের সংগীত জগতের কিংবদন্তি। আমি ছাড়াও সমসাময়িক সবার অগ্রজপ্রতিম ছিলেন তিনি। গানের ক্ষেত্রে তার অনবদ্যতার কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। তিনি নিজেই ছিলেন একটি পূর্ণাঙ্গ সংগীত প্রতিষ্ঠান। গানের ক্ষেত্রে অসাধারণত্বের মতো আচার-ব্যবহারেও ছিলেন অনন্য। সহজ-সরল মনের এই মানুষটি এক অতুলনীয় এবং মোহনীয় শক্তিতে ছোট-বড় সবাইকে দ্রুত আপন করে নিতে পারতেন। এত বড়মাপের শিল্পী হওয়া সত্ত্বেও কথাবার্তা, চলন-বলন, আচার-ব্যবহারে তা কখনো কাউকে বুঝতে দিতেন না। আমি তার চেয়ে ১০-১৫ বছরের জুনিয়র হওয়া সত্ত্বেও আমার প্রতি তার ব্যবহার দেখে সত্যি অভিভূত হতাম। তিনি বুঝতেই দিতেন না আমি তার অনেক জুনিয়র। বলতে গেলে বন্ধুর মতো আচরণ করতেন। তার মৃত্যু মানে নক্ষত্রের পতন।
সংগীতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র : আবদুল জব্বার
বশির আহমেদ ছিলেন আমাদের সংগীত জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার অসাধারণ গায়কী ও গানের ধারা আমাদের শিখিয়ে গেছেন যা ভোলার মতো নয়। আমরা যেমন গান দিয়ে এই দেশকে স্বাধীন করেছি তেমনি তিনিও তার গান দিয়ে আমাদের দেশের গানের ভাণ্ডারকে পরিপূর্ণ করেছেন। তিনি হয়তো বা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন কিন্তু তার গাওয়া গান সারা জীবন আমাদের মুখে উচ্চারিত হবে।
বশির ভাই একজন পরিপাটি মানুষ : সুবীর নন্দী
বশির ভাই ছিলেন গানের স্কুল। একটি গানের স্কুলে যেমন সব ধরনের গান শিখানো হয়, তেমনি বশির ভাই এমন কোনো গান নেই যে, তিনি জানতেন না। আমাদের বাংলা গানের নতুন একটি ধারা তিনি তৈরি করে দিয়ে গেছেন। ১৯৬৭ সালে একটি গানের অনুষ্ঠানে বশির ভাইয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। গান গাওয়া শেষে বশির ভাই আমাকে বললেন, 'তুমি অনেক ভালো গান গাও। কোথায় শিখছ গান। ভালো করে গান করো।' সেই থেকে বশির ভাইয়ের সঙ্গে আমার একটি ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পর আমি নানা সময় বশির ভাইয়ের সঙ্গে আড্ডা দিয়েছি। ওই সময় আমি নতুন একটি গান করতে গেলে বশির ভাইকে দেখিয়ে নিতাম। তার একটা জিনিস আমার সব সময় ভালো লাগত। আমি তাকে সব সময় দেখতাম তিনি গান গাওয়ার সময় পরিপাটি হয়ে আসতেন।
তার গান দিয়েই আমার পথচলা : রফিকুল আলম
বশির ভাইয়ের একটি জনপ্রিয় গান ছিল- 'দেয় না দূরে সরিয়ে আমায়'। এ গানটি দিয়ে আমি প্রথম ক্যামেরার সামনে আসি। তার গান দিয়েই আমার পথচলা। আমাদের বাংলা গানের সম্রাট ছিলেন তিনি। একটা মানুষের এত গান হিট হতে পারে তা বশির ভাইকে না দেখলে বোঝা যাবে না। যুদ্ধ শেষে যখন বাংলাদেশ টেলিভিশন মাত্র যাত্রা শুরু করে, তখন বিটিভিতে 'গীতবিতান' নামের একটি লাইভ গানের অনুষ্ঠান হতো। ওই অনুষ্ঠানে গান গাইতেন সিনিয়র শিল্পীরা। একবার আমিও ডাক পেলাম ওই অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার জন্য। অনুষ্ঠানটি বশির ভাই দেখেছিলেন। একদিন বশির ভাই আমাকে তার বাসায় ডেকে পাঠান। আমার গানের অনেক প্রশংসা করেন। মানুষটার মায়া-মায়া মুখটা আজও আমার চোখের সামনে ভেসে আছে।