আতাউর রহমান
সময়ের পরিবর্তন হওয়ায় মানুষের রুচির পরিবর্তন হয়েছে। স্যাটেলাইট চ্যানেলের মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধিও মঞ্চনাটকে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। পেশাদারিত্বের অভাবেও মঞ্চনাটকের গৌরবজনক অধ্যায়ের কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। মানুষের ব্যস্ততা ও রাজধানীর যানজটের কারণে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অনেকে নাটক দেখতে পারছে না। এ ক্ষেত্রে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে মঞ্চস্থাপন করা গেলে দর্শকরা মঞ্চনাটকের প্রতি নতুন করে উৎসাহী হতো। ঢাকা তো বড় হয়েছে, তাই না? ঢাকা উত্তর আর ঢাকা দক্ষিণ। সুতরাং মানুষও ছড়িয়ে পড়েছে। বসবাস, কর্মস্থল মিলে নিশ্চয় সবাই ঢাকার মিডল পয়েন্টে নেই। তাই দর্শক কমছে। এই যানজটের শহরে দূর থেকে কষ্ট করে কে আসবে নাটক দেখতে?
ড. ইনামুল হক
সময় পরিবর্তন হওয়াতে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের রুচিরও পরিবর্তন হয়েছে। মঞ্চে ভালো কাজ হচ্ছে না- এটা বলা যাবে না। তবে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সুন্দরভাবে উপস্থাপন হচ্ছে না বলে মানুষ দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। আমার জানা মতে, মঞ্চের এক সময়ের নিয়মিত দর্শকদের বেশির ভাগই বর্তমানে গুলশান, বনানী এবং উত্তরায় থাকে। ঢাকা শহরের যানজটের কারণে ও সময়ের অভাবে মঞ্চের দর্শক কমে গেছে। বিশ্বায়নের এই যুগে মানুষের রুচির পরিবর্তন ঘটেছে। শিল্প-সংস্কৃতির ওপর ভিত্তি করেই দেশের কাঠামো বিন্যাস হয়ে থাকে এবং মুক্তিযুদ্ধেও মঞ্চনাটকের বিশেষ অবদান ছিল। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূলে মঞ্চনাটক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও ঘরে ঘরে শিল্পচর্চার পরিবেশ তৈরি হয়নি। ঘরে ঘরে শিল্পচর্চার পরিবেশ তৈরি করতে পারলে নাটক আবারও তার স্বর্ণালি অতীতে ফিরে যাবে। এ জন্য ইনফ্রাস্টাকচার তৈরি করা জরুরি হয়ে পড়েছে। শিল্পচর্চার ইনফ্রাস্টাকচার তৈরিতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।
কেরামত মওলা
টেলিভিশন মিডিয়ার দাপটে মঞ্চ এখন তটস্থ। টিভি নাটক হচ্ছে প্রতিদিনের খোরাক, প্রতিদিনই তা শেষ হয়ে যায়। কিন্তু মঞ্চ হচ্ছে মানুষের জীবনাচরণের খোরাক, শিল্পের রস আস্বাদনের খোরাক। আগের তুলনায় মঞ্চের ব্যাপ্তি বেড়েছে। তবে মানুষের রুচিতে ঘুণে ধরেছে। মঞ্চের অবক্ষয় হয়নি, অবক্ষয় শুরু হয়েছে মানুষের আচরণের, রুচির, চিন্তা ও চেতনার। মানুষের মনন, মানসিকতা, রুচি, দেশপ্রেমের অবক্ষয় ঘটেছে বলে মানুষ এখন মঞ্চনাটককে গ্রহণ করার মানসিকতা হারিয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীর একস্থান থেকে অন্যস্থানে যেতে জনসাধারণকে যানজটসহ নানাধরনের ভোগান্তি পোহাতে হয় বলেও মঞ্চের দর্শক কমে গেছে।
ফেরদৌসী মজুমদার
সবধরনের শিল্পেই মন্দাভাব আসে এবং পরিবর্তন ঘটে। এটা শুধু বাংলাদেশেই নয় সারা বিশ্বেও সব শিল্পেই উত্থান-পতন ঘটে। নাটকের দলের তুলনায় মিলনায়তনের প্রতুলতা রয়েছে বলে অনেকে নাট্যচর্চা করতে পারছে না। তবে দর্শক কমার অন্যতম কারণ হিসেবে যানজটই দায়ী। ঢাকার যানজটের কারণে দর্শকদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়েছে বলে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অনেকেই এখন আর মঞ্চনাটক দেখতে আসেন না। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মঞ্চনাটকের উত্থান-পতন ঘটলেও মঞ্চনাটকের সাধ এবং আকর্ষণ চিরকালই থাকবে।
নাসিরউদ্দিন ইউসুফ
মানুষের রুচি, মনন ও মানসিকতার পরিবর্তন ঘটলে এবং রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আরও কিছু মঞ্চের নির্মাণ হলে মঞ্চনাটক শীঘ্রই তার সেই হারানো অতীত পুনরুদ্ধার করতে সম্ভব হবে- এমনটি বলা যায়। নাট্যকর্মীদের আবেগ, অনুভূতি ও মতামত বিশ্লেষণে আমার তাই মনে হয়েছে। মঞ্চ তার স্বর্ণালি দিনে ফিরে আসুক এমন প্রত্যাশা এই অঙ্গনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার। আমারও। শুধু কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে, সেই সমস্যাগুলো দূর করতে হবে। এ জন্য ভাবার বা কাজ করার মানুষও রয়েছে। শুধু প্রয়োজন একটু আন্তরিকতা।