শিক্ষকতা, অভিনয় ও নির্দেশনা- তিন মাধ্যমের কোনটিতে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখে আনন্দ পাচ্ছেন?
অবশ্যই অভিনয়ে। কারণ অভিনয় না করলে আর অভিনয়ের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত না করলে আমি যে ত্রপা মজুমদার- এটা কেউই জানত না। অভিনয় শিল্পীর কাতারে নিজের নামটা লিখাতে পেরেছি বলেই আজ আমাকে অনেকেই চিনে। সবার ভালোবাসাও পাচ্ছি। শিক্ষকতাতে গিয়েও ভালো করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। কারণ শিক্ষকতাও এক ধরনের পারফরমেন্স। যেমন শিক্ষক দাঁড়াবে, সামনে অনেক স্টুডেন্ট। পারফরমেন্সই তো। আর নির্দেশনাতেও অভিনয় আমাকে অনেক হেল্প করে।
একজন শিল্পী তো অভিনয়ের সব মাধ্যমেই কাজ করে। কিন্তু আপনাকে মঞ্চের বাইরে টিভি নাটকে খুব একটা দেখা যায় না। এর কারণ কী?
মঞ্চে কাজ করে আমি যতটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি টেলিভিশনে ততটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না। একেকজনের পছন্দ একেক রকম। শিক্ষকতা, মঞ্চ ও আমাদের বিজ্ঞাপনী সংস্থার কাজের ব্যস্ততার পর টেলিভিশনের জন্য সময় বের করাটা অনেক কষ্টকর। এ ছাড়া বর্তমানে যে ধরনের নাটক হচ্ছে সে ধরনের নাটকে অভিনয়ের প্রতি আমার মন টানে না। মানসম্পন্ন টিভি নাটক হচ্ছে না বলেও টিভি নাটকের ক্ষেত্রে আমার আগ্রহ অনেকটা কম। এরপরও ছুটির দিনগুলোতে সময় বের করে টিভি নাটকে কাজ করি। সেটাও পছন্দের ওপর নির্ভর করে। সম্প্রতি বদরুল আনাম সৌদের নির্দেশনায় একটা নাটকে অভিনয় করলাম। নাটকটি এস এ টিভিতে প্রচার হবে।
কি কারণে আপনার মনে হলো, এখন টিভি নাটক সঠিক পথে নেই?
এটা তো সাদা চোখেই দেখা যাচ্ছে। আগে কত সুন্দর গল্প হতো, সংলাপে গভীরতা ছিল। আর নির্মাণে ছিল পাণ্ডুলিপির অর্থের প্রকাশ। এখন তো তেমনটি হচ্ছে না। গল্প এবং পাণ্ডুলিপিতে খুবই অবহেলা দেখা যাচ্ছে। যেনতেনভাবে কাজ করার প্রবণতা সবার মাঝে। কোনো সিস্টেমই তো নেই। তার মানে এই নয়, একেবারেই ভালো নাটক হচ্ছে না। ভালো নাটক হচ্ছে, কিন্তু সংখ্যায় অনেক কম। আর সেই ভালো নাটক দেখার মতো অবস্থাও নেই। বিজ্ঞাপন যন্ত্রণা।
আচ্ছা আমরা মঞ্চেই ফিরে আসি। বেইলি রোডের মহিলা সমিতি ও গাইড হাউসের মঞ্চে যখন নাটক মঞ্চায়ন হতো তখন যে জৌলুস ছিল, এখন আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত শিল্পকলার মঞ্চে সেই জৌলুস নেই। কারণটা কী?
জৌলুস নেই এটা একেবারে ভুল কথা। নিয়মিত নাটক হচ্ছে। কারিগরি ও প্রযুক্তিগত মানও বৃদ্ধি পেয়েছে। সুযোগ-সুবিধা বাড়লেও এখনকার নাটকে বৈচিত্র্য নেই। নানা সংকটের কারণে নাটকের শিল্পমান ধরে রাখাটাও কষ্টকর হচ্ছে। মহিলা সমিতির ছোট মঞ্চে যে পরিমাণ দর্শক পাওয়া যেত, শিল্পকলা একাডেমির বর্তমান মঞ্চে সে পরিমাণ দর্শক পাওয়া যায় না। যার কারণে মনে হচ্ছে, নাটকের জৌলুস কমে গেছে। বাস্তবে নাটকের কোনো জৌলুস কমেনি। জৌলুস আগের মতোই আছে। আগে দর্শক বেশি হতো এখন কম হয়। আর এর নেপথ্যে অনেক কারণ রয়েছে।
তো দর্শক কমে যাওয়ার কারণটা কী?
ঢাকা শহরের ট্রাফিক জ্যামই হচ্ছে মঞ্চনাটকে দর্শক কমে যাওয়ার একমাত্র কারণ। নাটক দেখার ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও শুধু ট্রাফিক জ্যামের কারণেই অনেক দর্শক মঞ্চনাটক দেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যানজটের মধ্যে উত্তরার দর্শকের পক্ষে সেগুনবাগিচায় এসে নাটক দেখা সম্ভব না। এ জন্য রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে মঞ্চ তৈরি করা আবশ্যক। বিভিন্ন স্থানে মঞ্চ ছড়িয়ে না গেলে নাটক টিকে থাকবে না।
নাটক নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
কুহকজাল'র নির্দেশনার পর নতুন কোনো নাটকের নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। নতুন নাটকের নির্দেশনা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। শিগগিরই মঞ্চের দর্শকরা আমার নির্দেশনার নতুন নাটক দেখতে পাবে।
মোস্তফা মতিহার