চলচ্চিত্র পরিচালনা এমন একটি কাজ যেখানে সাধারণত পুরুষদের পদধ্বনিই বেশি শোনা যায়। এখানে রয়েছে পুরুষদের একচ্ছত্র আধিপত্য। খুব কম সংখ্যক নারী এই পেশায় সাফল্য অর্জন করেছেন। হাতে গোনা মাত্র কয়েকজন জিতেছেন অস্কার অথবা গোল্ডেন বেয়ার। কোন নারীর এই জগতে সাফল্য-পরিচিতি বা জনপ্রিয়তা পাওয়া কঠিন- আর যদি তিনি হন সৌদি আরবের তাহলে তো কথাই নেই। তবে হাইফা আল মনসুর নামে সৌদির প্রথম নারী নির্মাতা সেই প্রচলিত প্রথা ভেঙে দিয়ে হাঁটছেন সাফল্যের পথে। শুধু তা-ই নয়, চলচ্চিত্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে তিনি সৌদি আরবের সংস্কৃতিতে বিপ্লব ঘটাতে চান।
গত ২৮ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভালে প্রদর্শীত হয়েছে তার নির্মিত ‘দ্য পারফেক্ট ক্যানডিডেট’ ছবি। ছবিটি তুমুল প্রশংসা পেয়েছে। জেন্ডার পলিটিকস নিয়ে নির্মিত এই ছবিটি ফিল্ম ফেস্টিভালের প্রতিযোগিতা বিভাগে লড়ছে বিভিন্ন দেশের ছবির সাথে।
এর আগে তার ডকুমেন্টারি ‘ছায়াবিহীন নারী' নির্মাতা হিসেবে তাকে জনপ্রিয়তা এনে দেয়। তবে খ্যাতির বিড়ম্বনাও তাকে সহ্য করতে হয়েছে। তার মতে, 'কর্পোরেট দুনিয়া হোক কিংবা রাজনীতি বা ছবি নির্মাণ, সব যায়গাতেই নারীকে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। অনেক প্রতিবন্ধকতা আসে যা পুরুষের সামলাতে হয় না। এমনকি কেমন পোশাক পরা হচ্ছে বা কী কথা বলা হচ্ছে, সেটাও বিচার করা হয়।'
তিনি বলেন, 'আমি পলিটিকাল নই। আমি সংস্কৃতি বদলাতে চাই, সেটা হয়তো অনেক ধীরে হবে এবং সেটা লম্বা প্রক্রিয়া। আমাদের সমাজে সংগীত এবং থিয়েটার নেই। এটা এমন একটি সমাজ যার বেড়ে ওঠার সুযোগ নেই। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি যে, সৌদি সমাজের দৃষ্টিকোণ পাল্টাচ্ছে।'
উল্লেখ্য, হাইফা আল মনসুর একটি শিক্ষিত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছেন, বড় হয়েছেন। তার বাবা ছিলেন কবি এবং তিনি সবসময় চেয়েছেন মেয়ে ক্যারিয়ার গড়ুক। সে কারণেই তিনি হাইফাকে কায়রোর অ্যামেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য পাঠান। মেয়েকে সাহিত্য পড়াতে চেয়েছেন তিনি। কিন্তু হাইফার ঝোঁক এবং মনোযোগ ছিল চলচ্চিত্রে, সিনেমায়। ৪৫ বছর বয়সের এই নির্মাতা তার ক্যারিয়ারে যে সব কাজ করেছেন তার বেশির ভাগই প্রশংসিত হয়েছে। ১৯৯৭ সালে 'হু?' নামের একটি শর্ট ফিল্ম তৈরির মাধ্যমে নির্মাতা হিসেবে তার অভিষেক ঘটে। হাইফা আল-মনসুর বেশ কিছু বছর বাহরাইন ছিলেন। পরে তার স্বামী আমেরিকান কূটনীতিক ব্র্যাডলি নিমান ও দুই সন্তান অ্যাডাম এবং হেইলিকে সাথে নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় চলে যান।
আমেরিকাতে থেকেই তিনি নিয়মিত নির্মাণ কাজ চালিয়ে যান। তার নির্মাণ করা কাজগুলোর গল্প ও বিষয় সবসময়ই সৌদি আরব ও নারী কেন্দ্রীক হয়ে থাকে। তার প্রথম ডকু ফিল্ম তৈরি সাধারণ সৌদি নারীদের জীবনকে ঘিরে, যার নাম ‘ছায়াবিহীন নারী'। এই ডকুমেন্টারিটি তৈরি করা হয়েছে অনেকগুলো শর্ট ফিল্মের সমন্বয়ে। সেখানে হাইফা সৌদি নারীদের দৈনন্দিন জীবন তুলে ধরেন। এরপর আরও অনেক কাজ করেছেন তিনি। তবে হাইফা আল-মনসুরের এই নির্মাতা হওয়ার গল্প মোটেও সহজ ছিল না। নানা চড়াই উৎরাই তিনি নির্মাতা রুপে নিজেকে মেলে ধরেছেন। কেননা, রক্ষণশীল দেশ সৌদি আরবে দীর্ঘ ৩৫ বছর সিনেমা প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা ছিল। তবে ২০১৮ সালের আগস্টে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয়া হয় এবং সিনেমা প্রদর্শন করা শুরু হয়। সূত্র : ভ্যারাইটি ও ডেডলাইন
বিডি-প্রতিদিন/শফিক