উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। বিশ্বে যেকোনো জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাইলে প্রথম শর্তই হচ্ছে নিজেকে উন্নতশীল দেশের কাতারে নিয়ে যেতে হবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে সেই গন্তব্যের দিকেই নিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
বঙ্গবন্ধু কন্যা কিংবা আওয়ামী লীগের দেশি বিদেশী কট্টর সমালোচকরাও এই সত্যকে স্বীকার করেন। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের ৫টি সম্ভাবনাময় দেশের মধ্যে অন্যতম। আর তা সম্ভব হয়েছে একমাত্র শেখ হাসিনার ভিশনারি নেতৃত্বের কারণেই। বিএনপি নেতারাও অভিযোগ করে বলেন, সরকার উন্নয়ন দেখিয়ে গণতন্ত্রকে দাবিয়ে রাখতে চায়। এটা যদিও তাদের নিতান্তই রাজনৈতিক অভিযোগ। কারণ তারা দেশে সবখানেই তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করছেন। এমনকি অগণতান্ত্রিক এবং অরাজনৈতিক সংস্কৃতি সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে দেশে শত শত জীবন্ত মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে।
যাই হোক আগের কোথায় আসি। উন্নয়ন করতে গেলে অন্যতম শর্ত হচ্ছে সরকারের ধারাবাহিকতা থাকতে হবে। সিঙ্গাপুর লি কুয়ান এবং মালয়েশিয়াতে মাহাথির মোহাম্মদরা পেরেছেন দীর্ঘদিন ক্ষমতায় ছিলেন বলেই। তখন ওদের দেশের সুশীল সমাজও গণতন্ত্র , দুর্নীতি, লুটপাট অনেক অনেক অভিযোগ করেছে, কিন্তু কিছুই ধোপে টেকেনি।
বর্তমান সরকারের সময় সকল সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে, এটা যেমন কট্টর সমালোচকরা স্বীকার করে, আবার উন্নয়ন করে ভারতীয় উপমহাদেশের এই দেশগুলোতে ভোটের ফলাফল ঘরে তোলা যায় না এটাও তেমনি সত্য। খুব বেশি দূরে না যাই, উন্নয়নে ভোট আসলে বরিশালের প্রয়াত সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরণ কিংবা রাজশাহীর সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন কখনো পরাজিত হতেন না।
আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করি, বঙ্গবন্ধু কন্যার একনিষ্ঠ কর্মী, তারা যদি শুধু উন্নয়নের দিকে তাকিয়ে ভোটের রেজাল্ট পক্ষে আনার চেষ্টা করি এটা হবে মারাত্মক ভুল। মনে রাখা উচিত, আগামী নির্বাচনে কমপক্ষে ২৫-৩০ শতাংশ হবে তরুণ ভোটার। যাদের বয়স হবে ২২/২৩ বছর। এরা কিন্তু বিএনপি-জামাতের দুঃশাসন দেখেনি। তাদের দেশ লুটপাটের রাজনীতি দেখেনি। ওই সময় তাদের বয়স ছিল ১২/১৩ বছর কিংবা এরও নিচে।
তারা দেখেনি, নৌকায় ভোট দেওয়ার কারণে ২০০১ এর পর বাবার কোল থেকে কন্যাকে কেড়ে নিয়ে চোখের সামনে ধর্ষণ করা হয়েছে। অসহায় বাবা বলতে বাধ্য হয়েছেন, আমার মেয়েটা অনেক ছোট আপনারা একজন একজন করে আসেন। এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা এই প্রজন্ম জানে না।
তারা জানে না, শুধু ধানের শীষে ভোট না দেওয়ার কারণে দেশব্যাপী কিভাবে মহিমা-পূর্ণিমা-ফাহিমারা ধর্ষিত হয়েছে। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে, ঘর-বাড়ি, জমি, পুকুর, এমনকি হালের বলদ কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের উপর নেমে এসেছিল অকথ্য নির্যাতন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় লঙ্গর খানা খোলা হয়েছিল নির্যাতিত মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য।
এই প্রজন্ম জানে না, দেশে কিভাবে বিএনপি জামায়াত সরকারের তত্ত্বাবধানে শায়খ রহমান, বাংলা ভাইদের মাধ্যমে দেশে জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটেছিলো। কিভাবে আওয়ামী লীগের ২৪০০০ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে ওই প্রজন্মতো দূরে থাক, আমি নিশ্চিত আওয়ামী লীগের তরুণ অনেক নেতা কর্মীরাও তা জানে না।
সুতরাং, আমরা যদি শুধু শেখ হাসিনার উন্নয়নের উপর ভরসা করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চাই, এটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। মনে রাখবেন, বঙ্গবন্ধু কন্যার দ্বারা এই দেশের উন্নয়ন হবে এটা অস্বাভাবিক কিছু না। এই দেশের উন্নয়ন করা ছাড়া ওনার সামনে বিকল্প কোনো পথও খোলা নেই। কারণ, বাংলাদেশ যদি কোনোদিন ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়, তাহলে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এর জন্য দায়ী করবে কিন্তু আওয়ামী লীগকে, বঙ্গবন্ধুকে। বলবে দেশকে স্বাধীন করেছে ঠিকই কিন্তু গড়তে পারেনি।
সুতরাং এই অপবাদ থেকে জাতির পিতাকে মুক্তি দিতে বঙ্গবন্ধু কন্যা কখনোই চাইবেন না এই দেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হোক, নিজের বাবার ইমেজ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হোক।একটি সমৃদ্ধশালী দেশ গঠনের জন্যই বঙ্গবন্ধু দেশকে স্বাধীন করেছিলেন। তাঁর আমৃত্য স্বপ্ন ছিল, একটি উন্নত দেশ গঠন করা।
সুতরাং এই দেশের উন্নয়ন একমাত্র শেখ হাসিনার দ্বারাই সম্ভব। এটা ইতিমধ্যে প্রমাণিত, কারণ এর আগে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা শুধু লুটপাট করেছেন আর নিজেদের ভাগ্য গড়েছেন।
(লেখকের ফেসবুক পেইজ থেকে সংগৃহীত)
বিডি-প্রতিদিন/১৪ জুন, ২০১৭/মাহবুব