রাজধানীর মনিপুরে স্কুল থেকে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছিল ৯ বছরের জাহিদ। কিন্তু বেপরোয়া একটি মোটরসাইকেলের নিচে পড়ে শিশুটি এখন হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে। চালক পালিয়ে যাওয়ার জন্য জাহিদের শরীরের ওপর মোটরসাইকেলটি তুলে দেয়। এতে জাহিদের ডান পায়ের হাড্ডিটা ভেঙে দু’খণ্ড হয়ে যায়। ফেসবুকে ভিডিও পোস্টে তারই মর্মান্তিক বর্ণনা দিলেন জাহিদের বাবা আজমীর বাবু। তিনি জনপ্রিয় কম্পোজার হিসেবেও পরিচিত। মঙ্গলবার রাতে ফেসবুকের সেই ভিডিও পোস্টে তিনি বলেছেন:
আমি আসলে খুব একটা সংকটময় মুহূর্তের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমি বিষয়টা সকলের সঙ্গে শেয়ার না করে পারছি না। আমার ছেলে ক্লাস থ্রিতে পড়ে। নাম জাহিদ। ও মনিপুর বয়েজ মেইন শাখায় (দিবা) পড়ছে। গত ১৯ তারিখে ও স্কুল শেষ করে বাসায় ফেরার সময় অতর্কিতভাবে তিনজন আরোহীসহ একটি মোটরসাইকেল ওর পায়ের ওপর দিয়ে চলে যায়। প্রত্যক্ষদর্শী ও ভ্যানচালকসহ সবাই আমাকে যেটা জানিয়েছে- সেটা হচ্ছে, ও রাস্তার পাশে ছিল। তারা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আমার ছেলে গায়ের ওপর মোটরসাইকেল তুলে দেয়। আমার ছেলে পড়ে যায়। তারা পালিয়ে যাওয়ার জন্য আমার ছেলের পায়ের ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে চলে যায়।
তিনি বলেন, আমার ছেলে ছোট মানুষ, ৯ বছর মাত্র বয়স। তিনজন আরোহীসহ একটা মোটরসাইকেল ওর পায়ের ওপর দিয়ে যাওয়ার কারণে ডান পায়ের হাড্ডিটা ভেঙে দু’খণ্ড হয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের পরিবারের সবাই এটা নিয়ে মর্মাহত। আমার ছেলে এখন আল-রাজি হাসপাতালে আছে। ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ও হাসপাতালে রয়েছে। পা’টা চরমভাবে জখম হয়েছে। আসলে চিকিৎসা কোন পর্যায়ে যাবে এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। ডাক্তারের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত তেমন আশার বাণী পাইনি।
আজমীর বাবু বলেন, যিনি এ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী তিনি মনিপুর এলাকায় থাকেন। খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি, মোটরসাইকেলটির যিনি চালক তার নাম শুভ। এটি চুরির মোটরসাইকেল যেটি সে তার বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে ছিনতাই করে। ওইদিন তারা ছিনতাই করে ফেরার সময় আমার ছেলের গায়ে পড়ে। এর যথেষ্ট প্রমাণ, এলাকার সব লোকের সাক্ষী, যে ভ্যানচালক আমার ছেলেকে প্রতিদিন নিয়ে যায় তার চেষ্টায় মোটরসাইকেল চালকের বাড়ির ঠিকানা আমি পেয়েছি। তার বাবা-মায়ের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। তার একটা বড় ভাই আছে। সেই ভাই হাসপাতালে এসে আমার ছেলেকে একবার দেখে গেছে। ছেলেটা (মোটরসাইকেল চালক) এখনও পলাতক আছে, আমরা ওকে পাইনি।
দুর্ঘটনায় আইনি সহায়তার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এই অভিযোগ নিয়ে মিরপুর-২ নম্বর থানায় গিয়েছিলাম। তারা আমার অভিযোগ নেয়নি। তাদের ইতিবাচক একটা যুক্তি ছিল যে, পরিবহন আইনে যদি মামলা করা হয় তাহলে ছেলেটা সঙ্গে সঙ্গে জামিনে ছাড়া পেয়ে যাবে। কারণ আমাদের দেশের পরিবহন আইনের মামলা খুবই শিথিলযোগ্য। তাদের যুক্তি আমার খুব একটা অপছন্দ হয়নি। এ কারণে আমি তাদের খুব একটা দোষ দিইনি।
তিনি বলেন, আমার বর্তমান পরিস্থিতিটা সবার সঙ্গে শেয়ার করছি এ কারণে- আমাদের বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ আসলে কী? আমরা কার দায়িত্বে কীভাবে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাবো। বাচ্চারা এভাবে আহত হয়ে আসবে এবং আমরা কোনও বিচার পাবো না? যে চালক অ্যাকসিডেন্টটা করেছে বা অপরাধটা করেছে তাকে চিনেছি, তার পরিবারকে চিনেছি, তার বাড়ি চিনেছি। কিন্তু কী অসহায় একজন পিতা আমি, আমার ছেলের এতো বড় একটা ক্ষতি হলেও তাকে আমি বিচারের আওতায় আনতে পারছি না।
তিনি সকলের কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, একজন বাবা হিসেবে আমি অনুরোধ করছি এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে আপনারা যে যেভাবে পারেন ফেসবুকে পোস্ট দেবেন যাতে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আসতে পারি। আমাদের বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ এবং বাচ্চাদের নিরাপত্তা আমরা যেন নিশ্চিত করতে পারি। আমার মতো একজন বাবার আবেদন আমরা যেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছে দিতে পারি। অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আমরা আশা করবো। আমার একমাত্র ছেলের ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকার।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা
 
                         
                                     
                                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        