১ অক্টোবর, ২০১৯ ১৭:১০

মাংসবাদী রাজনীতি ঘৃণা করি

আনিসুর রহমান মিঠু

মাংসবাদী রাজনীতি ঘৃণা করি

আনিসুর রহমান মিঠু

লুটেপুটে খাওয়ার রাজনীতি ঘৃণা করি। মাংসবাদী রাজনীতি ঘৃণা করি। সুশাসনের বাংলাদেশ চাই। এতো রক্তের বিনিময়ে অর্জিত দেশের সমাজ ব্যবস্থার এই করুণ পরিণতি কাম্য নয়। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় দেশ সেবকরা লুটেপুটে খাবে এটা জনগণের গা-সহা হয়ে গেছে। এতে মানুষ মোটেও অবাক হয় না!

যেমন সূর্য আলো দেবে, চাঁদ জোছনা দেবে, পাখিরা আকাশে উড়বে, আর উনারা রাষ্ট্রের সম্পদ লুটে পুটে খাবে! খুবই সাধারণ ঘটনা।

সরকারী কর্মচারী কর্মকর্তা উন্নয়নে ভাগ বসাবে, ইঞ্জিনিয়ার -ঠিকাদার লভ্যাংশ ভাগাভাগি করবে, পুলিশ-নেতা ভাগাভাগি করবে এ সবই গা-সহা হয়ে গেছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আর ছাত্রের গোপনে টাকা ভাগাভাগির বিষয়টি কেন জানি নিতে পারছি না।

একজন ভিসির বক্তব্যে আমি ব্যথিত হয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে দশ টাকা চপ, চা, সমুচা পাওয়া যায়! তাই এ বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ!

ভাবছিলাম, কোথায় যাচ্ছি আমরা, ভিসির এমন ব্যাখ্যা। জ্ঞান চর্চায় আমরা কিভাবে এগিয়ে, আরো কিভাবে আগানো যায়, কিভাবে আমাদের ছাত্ররা অন্য দেশের ছাত্রদের পিছনে ফেলে এগুবে সেসব কথা না বলে সমুচা, চপ, চা!

বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী ভিসির আচরণ দেখে আমি অধিক শোকে পাথর হয়ে গিয়েছি। ছাত্র-শিক্ষক অবৈধ টাকার ভাগাভাগি! কি ভয়ংকর অধঃপতন আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায়।

একজন ভিসির পরিবারের সদস্যরা যদি এই পর্যায়ে নেমে যায় তাহলে সমাজে অবশিষ্ট কি থাকলো? প্রাইমারি স্কুলের হেড মাস্টারের কাছেও আমি এমনটি আশা করি না।

তার চাইতে আরো ভয়ংকর হচ্ছে দেশের বেশির ভাগ ছাত্র, যারা রাজনীতিতে যুক্ত তারা বুঝতেই পারছে না কি দোষে নেত্রী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি/সাধারণ সম্পাদককে সরিয়ে দিলেন!

যেখানে ঠিকাদারি কাজে অনায়াসে ১০% টাকা পাওয়া যায়, ছাত্রনেতারা সেটা ৬%-এ নামিয়ে আনলো, এবং সে টাকা তারা পায়ও নি, তাহলে তাদের দোষটা কোথায়?

যুবলীগ মোটামুটিভাবে দেশব্যাপী প্রায় একই কাজ করে যাচ্ছে। নেত্রী ভয়ংকর রাগান্বিত। কিন্তু যুবলীগ কর্মীরা ধরতেই পারছে না তাদের দোষটা কোথায়!

ঢাকার যুবলীগ যুবকদের মনোরঞ্জনের জন্য ক্যাসিনো-বার এসব তারা অনুমতি ছাড়া খুলেছে। এই সামান্য দোষ কি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখা যায় না! তারা সামান্য চাঁদা নেয় এটাই তো তাদের কাজ!

দেশব্যাপী তারা জমির ভেজাল মেটায়, ইট-বালু সাপ্লাই দেয়! কোন বাসায় কেমন টাইলস লাগাতে হবে তারা জানে - তাই কাজটা করে দেয়।

পুকুর জলাশয় ভারাট করে, জমি বিক্রির ব্যবস্থা করে দেয়- এসব কাজ কাউকে না কাউকে তো করতেই হবে।

মাদক ব্যবসায়ীরা যেন বেশি ধনী হয়ে না যায় - সেজন্য সামান্য কমিশন নেয়। পুলিশকেও বলে দেয়, যেন তাদের ব্যবসার সুযোগ দেয়, এতে দোষটা কি হচ্ছে!

টেন্ডার কে পেলে ভালো কাজ করতে পারবে তারা জানে- তাই উপযুক্ত লোকদের কাজ পাইয়ে দেয়; তা না হলে তো উন্নয়নের গতি কমে যাবে! এসবে ভুলটা কোথায় হচ্ছিল?

বর্তমানে সাবেক কিছু মন্ত্রী ভেবেছিলেন সরকার টিকে থাকলে আমি জেলে যাব না! মন্ত্রী থাকতে না পারলেও সমস্যা নেই! তাই দুই হাতে কামিয়ে যাই, কোন সমস্যা হবে না।

সাবেক মন্ত্রীদের মধ্যে যারা বেশি দুর্নীতি করেছে তাদের ধরে জেলে ঢুকিয়ে, তাদের সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাতিল করা ক্যাসিনো ধরার চাইতে বেশি জরুরি।

যে সকল দুর্নীতিবাজের স্ত্রীদের নামে বেশি সম্পদ রয়েছে সে সকল স্ত্রীলোকদেরও সাজা দেয়া উচিত। তা না হলে দুর্নীতির সংস্কৃতি বন্ধ হবে না। কারণ এ সকল অতি লোভী স্ত্রীরা স্বামীদের দুর্নীতিতে ঝাঁপিয়ে পরতে উৎসাহ দেয়।

প্রিয় নেত্রী, এবারের আপনার চ্যালেঞ্জ অনেক কঠিন। তবে মানুষ বিশ্বাস করে আপনার উপর আল্লাহর রহমত আছে, আপনি পারবেন। এবারের যুদ্ধেও জয়ী আপনাকে হতেই হবে। আমাদের দেশের এমন সমাজ ব্যবস্থা আমরা চাই না। আমরা আপনার বাবার স্বপ্নের বাংলাদেশ চাই।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

লেখক: 
স্পেশাল পিপি জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল কুমিল্লা
সাবেক সহ-সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় উপ-কমিটি
সাবেক সাধারণ সম্পাদক, কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগ

বিডি-প্রতিদিন/মাহবুব

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর