মঙ্গলবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা
জেল হত্যা দিবসে আওয়ামী লীগের বিশাল শোডাউন

খালেদা বিদেশে বসে গুপ্তহত্যা চালাচ্ছেন : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

খালেদা বিদেশে বসে গুপ্তহত্যা চালাচ্ছেন : প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আন্দোলনে ব্যর্থ ও রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হয়ে বিএনপি নেত্রী বিদেশে গিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন। বিদেশি, লেখক, প্রকাশক, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গুপ্তহত্যায় নেমেছেন। দেশের ভাবমূর্তি ও শান্তি নষ্ট করছেন। আজ জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে গতকাল বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন। প্রধানমন্ত্রী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যারা গুপ্তহত্যা করছে এদের লিংক, মুরব্বি ও বড় ভাইদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তি দেবই দেব। যারা এসব ঘটাচ্ছে তাদেরও কোনো ছাড় নেই। আমরা যা বলি, তা করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ৩০ মিনিটের ভাষণে দুই বিদেশি হত্যাসহ মুক্তমনা লেখক, প্রকাশকদের হত্যাকাণ্ডের বিষয় উল্লেখ করে বলেন, এসব ঘটনার সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত জোট সম্পৃক্ত। তিনি বলেন, যখনই হত্যায় জড়িতরা ধরা পড়ছে, দেখা যাচ্ছে তারা হয় শিবির, না হয় বিএনপি। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আজকে ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের আমরা বিচার করছি, সে বিচার নস্যাৎ করার জন্যই, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতেই গুপ্তহত্যা করা হচ্ছে। চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্যই এই ষড়যন্ত্র। দেশে না পেরে এখন বিদেশে বসে তিনি (খালেদা জিয়া) গুপ্তহত্যা শুরু করেছেন। গুপ্তহত্যা খুন যাই করুক না কেন কেউ দেশের অগ্রযাত্রা ও উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিনি (খালেদা জিয়া) নিজেই নিজের অফিসে বসে আন্দোলন করলেন।

জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা   -বাংলাদেশ প্রতিদিন

 

অফিসে বসে বললেন, সরকার উৎখাত না করে নাকি ঘরে ফিরবেন না। তার আন্দোলন কী? মানুষ পুড়িয়ে মারা, মানুষ খুন করা, মানুষ হত্যা করা? ছোট্ট শিশু, দুধের শিশু, কলেজের ছাত্রী, সেও রেহাই পায়নি। বাসের ড্রাইভার, হেলপার, সাধারণ মানুষ রেহাই পায়নি। শেখ হাসিনা বলেন, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করার মতো বীভৎস ঘটনা সেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঘটিয়েছে। এরপর ঘটালেন জিয়াউর রহমানের স্ত্রী। যখন বাংলাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার এ মানুষ খুন করার রাজনীতি প্রতিহত করল, এখন কিন্তু তিনি অবরোধ প্রত্যাহার করেননি, তার অবরোধ চলছেই। কিন্তু মানুষ সাড়া দেয়নি। এখন বিদেশে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। গুপ্ত হত্যা চালাচ্ছেন। এ ব্যাপারে দেশবাসীর সর্বাত্মক সাহায্য ও সহযোগিতা কামনা এবং সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকের কাছে আমার অনুরোধ, যে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও চক্রান্তের বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে। গুপ্তহত্যাকারী খুনিদের খুঁজে বের করতে সরকারকে সহযোগিতা করুন। তিনি বলেন, দেশে সব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, খুনের বিচার হবে। শান্তি বিনষ্ট করার জন্য শাস্তি পেতেই হবে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কোনো কোনো মহল প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, এ দেশে আইএস আছে, এ দেশে সন্ত্রাস আছে। তিনি বলেন, এ দেশে সন্ত্রাসী সৃষ্টি করেছিল বিএনপি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সেই সন্ত্রাস কঠোর হস্তে দমন করেছে। কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করলে তাকে রেহাই দেওয়া হয় না। তার বিরুদ্ধে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং ব্যবস্থা নেব, সে যে দলেরই হোক না কেন। বেলা ১২টা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড এবং ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসেন। দুপুর ২টার আগেই জনসভাস্থলে লক্ষাধিক নেতাকর্মীর সমাগম ঘটে। এই জনসভাকে ঘিরে দলের ঢাকা মহানগর কমিটিতে পদপ্রত্যাশী নেতাদের শোডাউন চোখের পড়ার মতো ছিল। এ ছাড়া ছিল রাজধানীর দলীয় এমপি এবং কাউন্সিলরদের শোডাউন। জনসভাকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে তীব্র যানজেটর সৃষ্টি হয়। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, ’৭৫-এর ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিহত জাতীয় নেতা শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর পুত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, নিহত জাতীয় নেতা শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের পুত্র, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ, ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহের হোসেন মোল্লা, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর রশিদ, যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল, ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও উপ প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। অন্যরা যা বলেন : শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট বাংলাদেশকে পাক্ষাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে এ দেশে হত্যার রাজনীতি শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল প্রথম থেকেই ষড়যন্ত্র করে আসছে। তারা যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য বিশেষ এজেন্ডা নিয়ে মাঠে নেমেছে। শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, আইএস ও জঙ্গিদের নাম করে বিএনপি-জামায়াত দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটাচ্ছে। খালেদা জিয়া জঙ্গি ও সন্ত্রাস দিয়ে একের পর এক অঘটন ঘটিয়ে যাচ্ছেন।

 

 

 

সর্বশেষ খবর