রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

আরও ১২ জনের নাম বললেন সম্রাট

নিজস্ব প্রতিবেদক

আরও ১২ জনের নাম বললেন সম্রাট

ক্যাসিনোকা সহ অপরাধ জগতে সহযোগী রাঘববোয়ালদের আরও ১২ জনের নাম ফাঁস করেছেন যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি (বর্তমানে বহিষ্কৃত) ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। আড়ালে থাকা এ রাঘববোয়ালদের প্রশ্রয়ে অল্পদিনেই টাকার পাহাড় গড়েন তিনি। ওই টাকার ভাগ পেতেন আড়ালে থাকা রাঘববোয়ালরাও। সেসব রাঘববোয়ালের পাশাপাশি সম্রাটের টাকা ও অস্ত্রের সন্ধান করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। র‌্যাবের রিমান্ডে এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে সম্রাটকে। তবে প্রথম দিনই গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন যুবলীগ নেতা সম্রাট।

এদিকে সম্রাটের সহযোগী হিসেবে চাঁদপুর সদরের ১০নম্বর লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেলিম খানের নাম বেরিয়ে এসেছে। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগেরও সভাপতি। এক সময় রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন প্রাডো ও র‌্যাভ-৪ জিপে চলাফেরা করেন বলে জানা গেছে। তার বিলাসী জীবনের পাশাপাশি রয়েছে বিশাল ‘হুন্ডা বাহিনী’। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর পর থানায় নিজের লাইসেন্স করা দুটি আগ্নেয়াস্ত্র জমা দিয়ে আত্মগোপন করেন সেলিম। চাঁদপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসিম উদ্দিন জানান, কয়েকদিন আগে তিনি অস্ত্র জমা দিয়েছেন। কী জন্য দিয়েছেন সে ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না। সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানের বিরুদ্ধে করা মামলা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। রমনা থানায় দায়ের করা মামলা দুটি হস্তান্তর করা হয় র‌্যাবে। বৃহস্পতিবার ডিবির হেফাজতে থাকা সম্রাট ও আরমানকে র‌্যাব-১ এর কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানায়, শুরু থেকেই সম্রাট ও আরমানকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের জয়েন্ট ইন্টারগেশন সেলে (জেআইসি) জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। নতুন করে ১২ রাঘববোয়ালের নাম পাওয়া গেছে তাদের কাছ থেকে। তদন্তের স্বার্থে নাম সহসাই প্রকাশ করা হবে না। কারণ নাম প্রকাশ হলে আত্মগোপনে যাওয়ারও একটা আশঙ্কা থাকে। আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নাম বেশি পাওয়া গেছে। যারা নিয়মিত তার কাছ থেকে টাকার ভাগ নিয়েছেন। সম্রাটের কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছেন এরকম কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাও রয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট জানিয়েছেন, কাকরাইল, ফকিরাপুল, কমলাপুর, মতিঝিল এলাকায় ভবন নির্মাণ করতে গেলেই চাঁদা দিতে হতো তাকে। তিনি সরাসরি কারও মুখোমুখি হতেন না। তবে চাঁদার জন্য হুমকি-ধমকি দিত তার লোকজন। একইভাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রতিটি মার্কেট থেকে আসতো কোটি কোটি টাকা। সিটি করপোরেশনের মার্কেটগুলোতে অবৈধভাবে দোকান তৈরি করে বিপুল অর্থের বিনিময়ে হস্তান্তর করতো সম্রাটের অনুসারীরা। গুলিস্তানের বঙ্গবাজারের সিটি প্লাজা, জাকের মার্কেট, নগর প্লাজা, মহানগর কমপ্লেক্স, আদর্শ মার্কেট, সুন্দরবন স্কয়ারসহ বিভিন্ন মার্কেট থেকে টাকা আসতো সম্রাটের কাছে। সিটি প্লাজা, জাকের মার্কেট ও নগরপ্লাজায় সহ¯্রাধিক অবৈধ দোকান তৈরি করে দোকান প্রতি হাতিয়ে নিয়েছে ১৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা করে। টাকা না পেলে দোকানে তালা দিয়ে দিতো তার বাহিনীর সদস্যরা। এমনকি সিটি করপোরেশন থেকে বৈধ বরাদ্বপত্র দেওয়ার নামে দ্বিতীয় দফা গত ফেব্রুয়ারিতে আরও ১০ থেকে ১৫ লাখ করে টাকা নিয়েছে। এই টাকা দিয়ে দলের বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করতেন এবং দলের কর্মীদের সহযোগিতা করতেন। ব্যক্তিগত কাজে তেমন টাকা ব্যয় করেননি বলে জানান তিনি। ঘনঘন বিদেশে গিয়ে মূলত জুয়া খেলতেন। মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে তার বাড়ি রয়েছে। অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুরে কোথায় কোন ব্যাংকে তার টাকা রয়েছে সে বিষয়ে কিছু জানাননি সম্রাট।

সর্বশেষ খবর