বুধবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বীমাশিল্পকে মানব কল্যাণে ব্যবহারের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রতিদিন ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বীমা কোম্পানিগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, প্রতারণা থেকে বীমা গ্রাহকদের রক্ষা করতে একটি ঐক্যবদ্ধ বার্তা প্রদান প্লাটফর্ম চালু করতে হবে। গতকাল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত বীমাসংক্রান্ত ১৫তম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন। মিউনিখ রি ইন্স্যুরেন্স এবং মাইক্রো ইন্স্যুরেন্স নেটওয়ার্কের সহযোগিতায় বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে। ৪২টি দেশের প্রায় চার শতাধিক বিশেষজ্ঞ ও প্রতিনিধি এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছেন। খবর বাসস।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তথ্যের অপ্রাপ্যতা বীমা গ্রাহকদের জন্য বড় সমস্যা। বীমা শিল্পে গ্রাহকদের আস্থার অভাব রয়েছে। কারণ তারা যতগুলো বীমা কিস্তি জমা দিয়েছে, তার সবগুলো কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে আদৌ জমা হয়েছে কি-না, সে ব্যাপারে অন্ধকারেই থেকে যায়। এ সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে একটি ঐক্যবদ্ধ বার্তা প্রদান প্লাটফর্ম চালুর প্রক্রিয়া চলছে।’ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স  ডেভেলপমেন্ট রেগুলেটরি অথরিটির চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান পাটোয়ারী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। এ ছাড়া বক্তৃতা করেন মিউনিখ রি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান টমাস লোস্টার এবং মাইক্রো ইন্স্যুরেন্স নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান ডবল চেম্বারলিন। বিআইএ সভাপতি শেখ কবির হোসেন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। স্বাগত বক্তৃতা করেন সংগঠনের সহ-সভাপতি রুবানা হামিদ।

তিনি বলেন, ‘আমরা চাইছি যারা স্বল্প আয়ের মানুষ, যারা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করেন তাদের আর্থিক ক্ষতি কীভাবে মেটানো যায় এবং তাদের জীবনকে কীভাবে নিরাপদ করা যায়। আর বিশেষ করে জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় তাদের জন্য বিশেষ বীমা স্কিম যদি করে দেওয়া হয় তাহলে তারা অনেকটাই নিশ্চিত থাকতে পারবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যদি এ ধরনের বীমা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তাহলে সেটা একটা নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ প্রাকৃতিক ঝুঁকিপ্রবণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার সরকার হাওর অঞ্চলে আকস্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তাদের আর্থিক ক্ষতি নিরসনের জন্য ‘কৃষি বীমা’ চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, প্রবাসী কর্মীদের জন্য বীমা প্রবর্তনের লক্ষ্যে ‘প্রবাসী কর্মী বীমা নীতিমালা’ জারি করা হয়েছে। এতে প্রায় ১২ মিলিয়ন কর্মীর বীমা ঝুঁকি গ্রহণ সম্ভব হবে। এ বীমার আওতায় একজন প্রবাসী কর্মী সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকার বীমা সুবিধা পাবেন। বীমা দাবি নিষ্পত্তি বীমা শিল্পের একটি পুঞ্জীভূত সমস্যা উল্লেখ করে এ সমস্যা থেকে বীমা শিল্পকে বের করে আনা এবং গ্রাহকদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপেরও উল্লেখ করেন সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, উঁচু ভবনে অগ্নিকা- থেকে সৃষ্ট ঝুঁকির আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ভবন বীমা প্রচলন এবং বেসরকারি  কোম্পানিগুলোর মধ্যে যেসব কোম্পানি এখন পর্যন্ত পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়নি এমন ২৭টি বীমা কোম্পানির তালিকাভুক্তির জন্য ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পিতা-মাতার অবর্তমানে স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন অব্যাহত রাখার জন্য ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা’ প্রবর্তনের কাজ চলমান রয়েছে। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তৎকালীন আলফা ইন্স্যুরেন্সে আঞ্চলিক প্রধান হিসেবে যোগদানের তারিখ ১ মার্চকে ‘জাতীয় বীমা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাবটি বিবেচনাধীন রয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আশা করি, এ সম্মেলনে বিভিন্ন দেশ  থেকে আসা বিশেষজ্ঞরা পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ে ভূমিকা রাখবেন, যা মূলত অন্তর্ভুক্তিমূলক বীমার মাধ্যমে জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় আরও ফলপ্রসূ এবং বাস্তবমুখী কর্মসূচি প্রণয়নে সহায়তা করবে।’

সর্বশেষ খবর