বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

অবৈধভাবে এসআরও সুবিধা নিয়ে ২০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাভার এলাকার একটি কংক্রিট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিনব কৌশলে ২০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির তথ্য উদঘাটন করেছে ঢাকা পশ্চিম কাস্টমস ও ভ্যাট কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটির নাম মেসার্স এনডিই রেডিমিক্স কংক্রিট লিমিটেড। আশুলিয়ার বিরুলিয়ায় দাউন এলাকায় অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটির ভ্যাট নিবন্ধন নম্বর : ০০১১১১৮৮৪-০৪০৩। গতকাল ঢাকা পশ্চিম কাস্টমস ও ভ্যাট কর্তৃপক্ষের একটি দল গোপন খবরের ভিত্তিতে  কারখানাটিতে আকস্মিক পরিদর্শন করে এ তথ্য উদঘাটন করে। ঢাকা পশ্চিম কাস্টমস ও ভ্যাট কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, পরিদর্শনকালে দেখা যায়, এনডিই রেডিমিক্স একটি রেডিমিক্স কংক্রিট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। এ ইউনিট উৎপাদনে কাঁচামাল হিসেবে ক্রাশড পাথর, সিমেন্ট, এডমিক্সার, বালি এবং পানি ব্যবহার করে থাকে। ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কর্তৃপক্ষ রেডিমিক্সের বিষয়ে বিশেষজ্ঞের মতামত নিয়ে জানতে পারেন, এর উৎপাদনে কোনোক্রমেই লাইমস্টোন নামের উপকরণ ব্যবহার হয় না। এ বিষয়ে বুয়েটের মতামত আমলে নেওয়া হয়। পরিদর্শনের সময় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির বিবৃতিও গ্রহণ করা হয়। তিনি স্বীকারোক্তি দেন, রেডিমিক্স কংক্রিট উৎপাদনে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক লাইমস্টোন ব্যবহার করেনি। কাঁচামাল হিসেবে লাইমস্টোন ব্যবহার না হওয়া সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটি পণ্য আমদানি করেছে এবং আমদানির সময় এসআরও সুবিধা বিশিষ্ট এইচএস ২৫২১.০০.১০ ঘোষণা দিয়েছে। এ জন্য এনডিই কর্তৃপক্ষ সাভার ভ্যাট বিভাগে মূসক-৭ এ উপকরণ হিসেবে পণ্যটির ব্যবহারের তথ্য প্রদর্শন করেছিল। এর ফলে অধিক মুনাফার নিমিত্তে আমদানিকৃত সব লাইমস্টোন স্বল্প শুল্ককরাদি দিয়ে খালাস করে খোলা বাজারে বিক্রি করেছে। বিদ্যমান আইনের বিধান অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি যেহেতু চুন বা সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নয়, সেহেতু প্রতিষ্ঠানটি এসআরও সুবিধায় উক্ত কোড ব্যবহার করে লাইমস্টোন আমদানি করতে পারে না। ঘোষিত মূসক-৭ এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পণ্যটি আমদানির সময় মোট রাজস্বের হার ৬৮.৮% বিশিষ্ট কোড ঘোষণা করার পরিবর্তে মোট ৩১% বিশিষ্ট কোড ঘোষণা করে। প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত পাঁচটি বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে পণ্য খালাস করে। এভাবে এসআরও সুবিধায় মোট ২০৪৯৮০ মেট্রিক টন লাইমস্টোন অবৈধভাবে আমদানি করেছে। আমদানিকৃত এসব পণ্যের মূল্য প্রায় ৫২ কোটি ৬২ লাখ টাকা এবং পরিশোধিত মোট রাজস্ব প্রায় ১৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা। কিন্তু এসআরও সুবিধাবিহীন কোডের মোট রাজস্বের হার ৬৮.৮০% অনুযায়ী এই পরিমাণ লাইমস্টোন আমদানির সময় পরিশোধযোগ্য মোট রাজস্বের পরিমাণ হতো ৩৬ কোটি ২০ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটি এভাবে মিথ্যা কোড ও উপকরণ ঘোষণা দিয়ে আমদানি পর্যায়ে প্রায় ২০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনার ড. মইনুল খান প্রতিষ্ঠানের কাঁচামালের ঘোষণায় লাইমস্টোনের নাম মূসক-৭ থেকে বাতিল করে দিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি কাস্টম হাউস, চট্টগ্রামকে প্রতিষ্ঠানের নামে খালাসের অপেক্ষমাণ চালান এসআরও সুবিধায় খালাস না করার জন্য অনুরোধ করেছেন। এ ব্যাপারে মূল্য সংযোজন কর আইন, ২০১২ ও দি কাস্টমস অ্যাক্ট, ১৯৬৯ অনুযায়ী পৃথক মামলা করা হয়েছে। পাশাপাশি আইন অনুযায়ী ফাঁকিকৃত রাজস্ব আদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর