সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

অনিশ্চয়তায় ঢাকা-সিলেট চার লেন মহাসড়ক

অর্থ ফেরতের শঙ্কা

নিজামুল হক বিপুল

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করা নিয়ে আবারও সংকট তৈরি হয়েছে। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে প্রকল্পের ভবিষ্যৎ। এবার আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এ প্রকল্পের অর্থ ফেরত যাওয়ার আশঙ্কা করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। আগামী জুনের মধ্যে প্রকল্পটি অনুমোদন না করানো গেলে অর্থ ফেরত যাওয়ার এ আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও কামনা করেছে এডিবি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল জানুয়ারি মাসে। সে লক্ষ্যে এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সঙ্গে চুক্তি করেছিল এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। ভূমি অধিগ্রহণ ও সমীক্ষার কাজও চলছে। এর মধ্য দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার যে অনিশ্চয়তা ছিল, সেটিও অনেকটা দূর হয়েছিল। কিন্তু প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন নতুন করে সমস্যা দেখা দিয়েছে। সূত্র জানায়, এডিবি বলছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্পটি আগামী জুন মাসের মধ্যে অনুমোদন করা গেলে তারা এ প্রকল্পের জন্য অর্থ ছাড় করতে প্রস্তুত। আর জুন মাসের মধ্যে প্রকল্প অনুমোদন করা না গেলে এ প্রকল্পের কাজ এক বছর পিছিয়ে যাবে। এতে নতুন প্রকল্প চলে আসতে পারে এবং এ অর্থ অন্য খাতে চলে যেতে পারে। ফলে এ প্রকল্পে এডিবির অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এডিবি বলছে, আগামী জুলাই মাসের মধ্যে অর্থ ছাড়ের বিষয়টি চূড়ান্ত হলে সেপ্টেম্বরে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হবে। এডিবির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মহাসড়কের রাস্তার নকশা অবশ্যই জুন মাসের মধ্যে অনুমোদিত হতে হবে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, এ প্রকল্পের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে আরও দেড়-দুই মাস সময় লাগবে। এ সূত্র জানায়, এ বিষয়ে এডিবির বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি তাকে অবহিত করেছেন। এ সময় তিনি দ্রুত প্রকল্প অনুমোদনের বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলীসহ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যেন জুন মাসের মধ্যে অনুমোদনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন সে বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সড়ক বিভাগ সূত্র জানায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ২২৬ কিলোমিটার চার লেনে উন্নীত করতে সম্প্রতি ইআরডির সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে এডিবির। চুক্তি অনুযায়ী চলতি বছর এ মহাসড়কের উন্নয়নে দৃশ্যমান কাজ শুরু করার কথা এডিবির। ইতিমধ্যে এডিবি ২০১৩-১৪ সালের দিকে প্রথম সমীক্ষা করে। এরপর এ মহাসড়কের কাজ কারা করবে, এ নিয়ে নানা জটিলতা তৈরি হলে এডিবি আর বেশি দূর এগোতে পারেনি। এখন আবার যেহেতু তারা কাজটি করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে, সে কারণে আগের সমীক্ষার পুনর্মূল্যায়ন প্রয়োজন। তাই নতুন করে সমীক্ষা করে প্রতিষ্ঠানটি। এদিকে চার লেনের ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ভূমি অধিগ্রহণ ও সড়কের পাশের ইউটিলিটি স্থানান্তরের জন্য ইতিমধ্যে সরকার ৩ হাজার ৮৮৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছে। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ৮৫১ কোটি টাকা। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভূমি অধিগ্রহণ ইউটিলিটি স্থানান্তরের কাজ চলছে। সূত্র জানায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করতে শুরুতে এডিবির সঙ্গেই কথা হচ্ছিল সরকারের। কিন্তু মধ্যে চীনের অর্থায়নে জি টু জি ভিত্তিতে এ মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার জন্য ২০১৭ সালের অক্টোবরে চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছিল সরকার। কথা ছিল ২০১৮ সালের শুরুতেই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। কিন্তু চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং এ প্রকল্পের জন্য যে ব্যয় প্রস্তাব করেছিল তা সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের প্রাক্কলনের চেয়ে প্রায় ৪২ শতাংশ বেশি। তাই তাদের প্রস্তাবটি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় গ্রহণ করেনি। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েক দফা আলোচনাও হয়। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। ফলে কাজও ঝুলে যায়। একপর্যায়ে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্পের কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ জন্য ডিপিপিও তৈরি করা হয়। সেটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলেও সেখান থেকে আরও কিছু সংশোধনী চেয়ে ফেরত পাঠানো হয়। সড়ক বিভাগ তা সুবিন্যস্ত করে ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায়। কিন্তু প্রস্তাবটি পরিকল্পনা কমিশনে যাওয়ার পর তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী প্রকল্পটি অনেক ব্যয়বহুল উল্লেখ করে এর জন্য বাইরের কোনো অর্থায়ন পাওয়া যায় কিনা দেখতে আদেশ দেন। এর পরপরই এ প্রকল্পটি ঝুলে যায়। অথচ কথা ছিল সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগেই প্রকল্পটির কাজ শুরু হবে। শেষ পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার। এরপর এ প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে আবারও আগ্রহ দেখায় এডিবি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর