আক্রান্তের হারে বিশ্বের সর্বাধিক করোনা রোগীর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে এখন এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এমনকি এগিয়ে রয়েছে ইতালি, জার্মানি, স্পেন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সের মতো করোনায় মৃত্যুপুরীতে পরিণত হওয়া ইউরোপের দেশগুলো থেকেও। এ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার আট দেশের মধ্যে আক্রান্তের হারে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। নমুনা পরীক্ষার বিচারে আক্রান্তের হার বিশ্লেষণ করে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে। এ ছাড়া করোনায় মৃত্যুর মিছিলও দ্রুত দীর্ঘ হচ্ছে বাংলাদেশে। গত এক দিনেই দেশে রেকর্ড ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৫৪৫ জন। রোগ শনাক্তের ১৩ সপ্তাহে এসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫০ জনে। আর আক্রান্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭ হাজার ১৫৩ জনে।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১১ হাজার ৮৭৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৫৪৫ জনের। অর্থাৎ নমুনা পরীক্ষায় বাংলাদেশে করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে ২১ দশমিক ৪২ শতাংশ মানুষের। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ১০০ জনের নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৪ দশমিক ৬৮ জনের এবং পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এই হার প্রায় ৯ দশমিক ৫৭ ভাগ। ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী ১৮ লাখের ওপরে রোগী নিয়ে বিশ্বে করোনা আক্রান্তে শীর্র্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান গতকাল ছিল ২১তম যা এক দিন আগে ছিল ২২তম। মাত্র ১৩ সপ্তাহে দেড় শতাধিক দেশকে পেছনে ফেলে আক্রান্তে শীর্ষ ২৫ দেশের তালিকায় প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে হারে আক্রান্ত বাড়ছে তাতে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে শিগগিরই বিশ্বের শীর্ষ করোনা আক্রান্তের দেশে পরিণত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিশ্বের শীর্ষ ৩০টি করোনা আক্রান্ত দেশের মধ্যে আক্রান্তের হারে বর্তমানে শীর্ষে রয়েছে ব্রাজিল। গড় নমুনা পরীক্ষায় দেশটিতে শতকরা ৫৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ মানুষের করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। এরপরই এই তালিকায় পর্যায়ক্রমে রয়েছে ইকুয়েডর (৩৩.৮৯ শতাংশ), মেক্সিকো (৩ শতাংশ), কাতার (২৫.৬২ শতাংশ), চিলি (১৬.৮৩ শতাংশ), ইরান (১৬.৬১ শতাংশ), সুইডেন (১৫.৭২ শতাংশ), পেরু (১৫.৩৭ শতাংশ) ও বাংলাদেশ (১৫.২৬ শতাংশ)। বিশ্বের অনেক দেশে আক্রান্তের হার কমলেও বাংলাদেশে ক্রমেই বাড়ছে। শুরুর পর থেকে গড় নমুনা পরীক্ষায় শতকরা ১৫ জনের করোনা শনাক্ত হলেও বর্তমানে এই হার ২১ শতাংশের উপরে। এ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে আক্রান্তের হারে আফগানিস্তানের (৩৯.৫৩ শতাংশ) পরেই অবস্থান বাংলাদেশের। অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ হয়েও ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও ভারতে আক্রান্তের হার এখনো একক সংখ্যায় রয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশে করোনা পরীক্ষাটা এখনো উদারভাবে করানো হচ্ছে না। করোনা পরীক্ষা করাতে গিয়ে নানা বিপত্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানায় বাংলাদেশে হু হু করে রোগী বাড়ছে। পরীক্ষা কম হওয়ায় শনাক্ত হচ্ছে না। অনেক রোগীই উপসর্গ ছাড়া হাট-বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছে ও রোগ ছড়াচ্ছে। দেশে প্রতি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে করোনা পরীক্ষা হয়েছে এক হাজার ৮৭৮ জনের যা আক্রান্তে শীর্ষ ৩০ দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন পরীক্ষা হচ্ছে চার লাখের বেশি নমুনা। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এই সংখ্যা প্রায় সোয়া লাখ। বাংলাদেশে দৈনিক পরীক্ষা ১০ হাজারের মতো। গত মাসের শুরুর দিকে দেশে ৪২টি পরীক্ষাগারে দৈনিক প্রায় ১০ হাজার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। বর্তমানে ৫২টি পরীক্ষাগারেও নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে ১০ হাজারের মতো। গত যে দুই দিন ১১ হাজারের উপরে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, সেই দুই দিনই শনাক্ত আড়াই হাজার ছাড়িয়েছে।
বাংলাদেশে এক দিনে ৪০ জনের মৃত্যু : টানা ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি শেষে গতকাল প্রথম কার্যদিবসে দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে। রোগী শনাক্তের ১৩তম সপ্তাহে এসে এই রোগে সর্বোচ্চ ৪০ জনের মৃত্যু হয়। এটিই এখন পর্যন্ত এক দিনে সর্বোচ্চ মৃতের সংখ্যা। এ নিয়ে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৫০ জনে। একই সময়ে নতুন করে আরও ২ হাজার ৫৪৫ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। আর এই সময়ে দেশের ৫২টি পরীক্ষাগারে ১১ হাজার ৮৭৬টি নমুনা পরীক্ষা করে ২ হাজার ৫৪৫ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। বর্তমানে দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭ হাজার ১৫৩ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৪০৬ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হলেন ৯ হাজার ৭৮১ জন। গতকাল করোনাভাইরাস সম্পর্কিত সার্বিক পরিস্থিতি জানাতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়োমিত বুলেটিনে এ তথ্য জানান অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা। তিনি জানান, মারা যাওয়া ৪০ জনের মধ্যে ৩৩ জন পুরুষ ও নারী সাতজন। অঞ্চল বিবেচনায় ঢাকা বিভাগে ২৮ জন, চট্টগ্রামে আটজন, খুলনায় দুজন এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে একজন করে রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ২০ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার এক দশমিক ৩৮ শতাংশ।
