শিরোনাম
বুধবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

যুক্তরাজ্যে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার পাঠাতে চায় বাংলাদেশ

উচ্চশিক্ষায় বিনিয়োগে আগ্রহী ইউকে

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

যুক্তরাজ্যে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, নার্সসহ দক্ষ পেশাজীবী পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। সেবা খাতে বাণিজ্য সুবিধার আওতায় জনশক্তি রপ্তানিতে এ সুবিধা চাওয়া হয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ও দক্ষতা সৃষ্টিতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে।

গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ-ইউকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংলাপ’-এ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন এবং যুক্তরাজ্যের পক্ষে দেশটির হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন নেতৃত্ব দেন।

বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন গতকাল সন্ধ্যায় টেলিফোনে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে গেলেও যুক্তরাজ্য বলেছে তারা পণ্য রপ্তানিতে একই ধরনের বাণিজ্য সুবিধা (ইবিএ) অব্যাহত রাখবে। তবে আমরা তাদের কাছে সেবা খাতেও বাজার সুবিধা চেয়েছি। তারা বলেছে তাদের পলিসি অনুযায়ী এ বিষয়ে সহায়তা করবে। সচিব বলেন, বাংলাদেশের সেবা খাতে বাজার সুবিধার প্রস্তাবটি গৃহীত হলে ব্রিটেনে বাংলাদেশিদের আরও বেশি হারে কাজ পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। এর ফলে করোনা মহামারী-পরবর্তী সময়ে ব্রিটেনে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানিতে খুলে যেতে পারে অপার সম্ভাবনার দুয়ার। সংলাপে অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা জানান, দুই দেশের মধ্যে প্রথমবার অনুষ্ঠিত এ সংলাপে বাংলাদেশ তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে। ১. যুক্তরাজ্যে শুল্ক ও কোটা মুক্ত বাজার সুবিধা অব্যাহত রাখা ২. সেবা খাতে বাণিজ্য সুবিধার আওতায় দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ এবং ৩. বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগ বাড়ানো। অন্যদিকে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষায় বিনিয়োগ সুবিধার পাশাপাশি দেশটি থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণে কাস্টমসের বৈষম্য নিরসন এবং যুক্তরাজ্য থেকে আনা পণ্যের নমুনা (স্যাম্পল) ছাড়ে বিমানবন্দরের দীর্ঘসূত্রতা দূর করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। সার্ভিস ওয়েভার বা সেবা খাতে বাণিজ্য সুবিধার বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বল্পোন্নত দেশগুলো উন্নত দেশগুলোয় পণ্যবাণিজ্যে শুল্ক ও কোটা মুক্ত বাজার সুবিধা পাচ্ছে। এখন যুক্তরাজ্য যদি বাংলাদেশকে একইভাবে সেবা খাতেও বাণিজ্য সুবিধা বা ছাড় দেয় তাহলে দেশটিতে জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ বাড়বে।

 

উদাহরণ দিয়ে কর্মকর্তারা জানান, ধরা যাক জাপান থেকে কোনো চিকিৎসক ব্রিটেনে গেলে তিনি যে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে যান, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে যাওয়া একজন চিকিৎসকের পক্ষে সে ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ থাকে না। এ কারণে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানিতে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যায় স্বল্পোন্নত দেশগুলো। এখন বাংলাদেশ যদি ব্রিটেনে সেবা খাতে বাজার সুবিধা পায়, তবে অপেক্ষাকৃত কম ডিগ্রি নিয়েও বাংলাদেশের একজন পেশাজীবী শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী কিংবা নার্স দেশটিতে কাজের সুযোগ পাবে। সেবা খাতে জনশক্তি রপ্তানিতে বাংলাদেশ ব্রিটেনের কাছে এ সুবিধাটিই চেয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর (ব্রেক্সিট) বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ে এটিই প্রথম সংলাপ। সিদ্ধান্ত হয়েছে, এখন থেকে দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনার জন্য প্রতি বছর দুবার এ সংলাপটি হবে। এ ছাড়া দ্বিপক্ষীয় এ সংলাপটি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহায়তা ফোরামের (টিকফা) মতো চুক্তির কাঠামোয় নিয়ে যাওয়ার বিষয়েও দুই পক্ষ মতৈক্যে পৌঁছেছে। প্রথমবারের এ সংলাপ অনুষ্ঠানের আগে ৯ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ব্রিটেনের বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনা করেন। ওই আলোচনার পর একটি নির্দিষ্ট কাঠামোয় দ্বিপক্ষীয় ইস্যুগুলো তুলে ধরার জন্য নিয়মিত সংলাপের সিদ্ধান্ত হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য যুক্তরাজ্য। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাংলাদেশের অনুকূলে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশটিতে ৩৪৫৩.৮৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, বিপরীতে আমদানি হয়েছে ৪১০.৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর