শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

বাংলা পৃথিবীর সেরা একটি ভাষা

বিপ্রদাশ বড়ুয়া

বাংলা পৃথিবীর সেরা একটি ভাষা

কাঠের তৈরি একটি গাধা। পায়ে চাকা আছে চারটি। টেনে নিয়ে যাচ্ছেন বইপ্রেমিক একদল শোভাযাত্রাকারী। গায়ে বড় বড় করে লেখা রয়েছে ‘গাধা বই পড়ে না’। না, এটি আমাদের কোনো শহরের নয়, মুম্বাই শহরের একটি বইয়ের দোকানের সামনের বিজ্ঞাপনের কথা লিখছি। আমাদের দেশের এক সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান আমার বই ছাপা প্রসঙ্গে বারবার বলেন, ‘বই বিক্রি হয় না’।

বই যদি বিক্রি না হয় তাহলে এত ঘটা করে বছরের পর বছর একুশের বইমেলা হয় কেন। হয়ই যদি তবে সাত দিন থেকে পুরো ফেব্রুয়ারি মাস কেন হয়। আর এক মাস শেষ হওয়ার পরও প্রকাশকরা মেলার আয়ু বাড়াতে বলেন কেন! অলাভজনক ব্যবসা কি তাহলে বেশিদিন চললে লাভজনক হয়ে ওঠে! বিশ্বের কোথাও এই অলাভজনক ব্যবসার মেলা সাত-দশ দিনের বেশি চলে না। তেহরান, দিল্লি, কলকাতা, বেইজিং, টোকিও, ফ্রাঙ্কফুর্ট, লাইফজিগ প্রভৃতি নামিদামি বইমেলার অক্ষয় আয়ু ওই সাত-দশ দিনই। বিশ্বের বাঘা বাঘা সুশৃঙ্খল বইমেলা দেখার সুযোগ আমার হয়নি। সবচেয়ে বিশৃঙ্খল মেলা দেখা হওয়া নৈমিত্তিক ব্যাপার। প্রকাশনার সঙ্গে পেশাগত যোগ ছিল বলে এর ঘাপ-ঘোপও দেখে ফেলেছি। আনন্দ-সম্মানও লুটে নিয়েছি সহযাত্রীদের সঙ্গে। জেনেছি এটি অলাভজনক নয়, ব্যবসা হিসেবেও মোটেই না। আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ দিকনির্দেশকারী ঘটনা ১৯৫১, ১৯৭১, ১৯৭৫। স্বপ্নভঙ্গ হয় ২০০২ এবং লিখি ‘অশ্রু ও আগুনের নদী’ উপন্যাস। তার আগে পরপর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে আহত হয়ে লিখি ‘সমুদ্রচর ও বিদ্রোহীরা’ উপন্যাস। ‘ইয়াসমিন’ উপন্যাস লিখি ওই কিশোরীর নির্যাতন ও হত্যা নিয়ে। ‘শ্রামণ গৌতম’ ও ‘কালোনদী’ উপন্যাসও লিখি ভিতরের টানে। রাজনৈতিক ও সমাজ, বিচিত্র রাষ্ট্র-রাষ্ট্র খেলা আমার অজস্র ছোট গল্পে উঠে এসেছে। একুশে ও বইমেলার সৃষ্টিই বলব নিজেকে। ১৯৫১ সালে আমি পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। ষষ্ঠ শ্রেণিতে উঠে স্কুল থেকে বেরিয়ে না বুঝে বা বুঝে ক্লাস থেকে বেরিয়ে মিছিলে যোগ দিয়েছি। চাকরির সঙ্গে লেখাও একসময় পেশা হয়ে ওঠে। সব লেখার মধ্যে ‘অতল জলের আয়না’ লিখেছি সুদীর্ঘ সময় নিয়ে। গল্প ও শিশুজগতের দুয়ার খুলেছি যখন-তখন। আর প্রকৃতির বিশাল জগৎ বলতে গেলে আমার অনুস্মৃতির খোলা জানালা, আমার আত্মার বোন। ওতে আমি একরকম মাতাল সুরকার। ওকে আমি কখনো দোষ দেব না, কাকের সঙ্গেও আমি বন্ধুত্ব পেয়েছি। শেয়ালেরও। বাংলা ভাষায় অপ্রয়োজনে বিদেশি শব্দের মেহনের কোনো দরকারই নেই। বাংলা ভাষা পৃথিবীর সেরা চারটি ভাষার একটি, শব্দভান্ডার সুবৃহৎ তা জ্ঞানেন্দ্রমোহন ও হরিচরণের অভিধান নাড়াচাড়া করলেই অবাক মানিক। ভাষাকে সমৃদ্ধ করার জন্য আমি অন্যের দুয়ারে প্রার্থী হব! নিজের থাকতে কেন ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরণ করব? বিদ্যাসাগর, মাইকেল, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ আমার আছে। অন্যের ভান্ডার বা ব্যাংকে যাব কোন দুঃখে? পাঠক ও সাধারণ মানুষকে আমি হীনমন্যতায় ঠেলে দেব কেন? সৃষ্টিশীল শিল্পী-সাহিত্যিক তা করেন, যেমন রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল করেছেন সংগীত ও সাহিত্যে। লাইফজিগ, ফ্রাঙ্কফুর্ট, টোকিও ও দিল্লির বইমেলা আমি দেখিনি। কলকাতার বইমেলা দেখেছি। মাঘের বসন্ত বাতাসে কলকাতার গড়ের মাঠের বইমেলায় আমি ভেসেছি। সেখান থেকে প্রতিদিনের বইমেলা পঞ্জি পাঠিয়েছি ১৯৯৯ সালের ভোরের কাগজের জয়-জয়কার সময়ে। আমাদের সংস্কৃতিমন্ত্রী থেকে সেরা শিল্পী-সাহিত্যিক আমন্ত্রিত হয়ে ওই মেলার ধনাত্মক দিক দেখে এসেছেন। ওই বইমেলার আয়োজক কলকাতা প্রকাশক গিল্ড। ওই বইমেলার আসল নাম ‘কলকাতা পুস্তক মেলা’। ফ্রাঙ্কফুর্টে চারতলা বিশাল বিশাল অন্তত নয়টি হলঘর। একটির সঙ্গে অন্যটি জুড়ে দেওয়া। এসকেলেটর, লিফট, সিঁড়ি সবই আছে। থরে থরে ভিতরে-বাইরে আছে অনুসন্ধান কেন্দ্র। আমি নিজেই ঢাকা বইমেলায় স্টল খুঁজে পাই না। তার প্রচুর ব্যবস্থা কেন নেই! কেন প্রবেশ মূল্য নেই? সেই টাকা দিয়ে মেলার সুযোগ-সুবিধা কেন বাড়ানো হয় না? কেন ধূলিধূসরিত হয়ে বইমেলা থেকে ঘরে ফিরত হবে? মাস্তান, নারীলোভীদের দোর্দ- প্রতাপ কেন? পুলিশরা কী করেন? কেন ঢাকার ফুসফুস সোহরাওয়ার্দীকে আরও রুগ্ন করা? কেন বই শিল্প হয় না বা শিল্পের সুবিধা পায় না। কর্ণফুলী ও খুলনা কাগজ কল বন্ধ হতে বসেছে আর বিদেশ থেকে কাগজ আসবে? কেন কোনো প্রকাশকের একটি বইয়ের জন্য স্টল বন্ধ হয়ে যায়? বিশ্ব বইমেলা থেকে শিখে কলকাতা পুস্তক প্রকাশক গিল্ড রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন কাজে অংশ নেয়, আমাদের প্রকাশক সংস্থার খবর কী!

সর্বশেষ খবর