বিরামহীন গতিতে চলছে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ। এই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের প্রথম টিউব রোরিং শেষ হওয়ার পর চলছে ইন্টারনাল স্ট্রাকচার তৈরির কাজ। দ্বিতীয় টিউবের খনন কাজও চলছে দ্রুততার সঙ্গে। সবমিলিয়ে মেগা এ প্রকল্পের সার্বিক কাজের অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ। এই গতি অব্যাহত থাকলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই যান চলাচলের উপযোগী হবে দেশের একমাত্র টানেল- এমন প্রত্যাশা প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানেলের সার্বিক কাজের অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ। নির্মাণ কাজ কাক্সিক্ষত গতিতে চলছে। আশা করছি নির্ধারত সময়ের মধ্যে টানেল যান চলাচলের উপযোগী হবে।’ সরেজমিন দেখা যায়, কর্ণফুলী নদীর তলদেশ, নদীর দুই তীর এবং আশপাশ এলাকায় চলছে টানেল নির্মাণের মহাযজ্ঞ। নির্মাণ সম্পন্ন হওয়া প্রথম টিউবটি যান চলাচলের উপযোগী করতে তৈরি করা হচ্ছে সড়ক। বর্তমানে প্রথম টিউবে আরসিসি ঢালাই দিয়ে ইন্টারনাল স্ট্রাকচারের কাজ চলছে। এরই মধ্যে প্রথম টিউবে ১০০ মিটার স্ট্রাকচার তৈরি হয়েছে। টিবিএম মেশিন দিয়ে দ্বিতীয় টিউব রোরিংয়ের কাজও চলছে পুরোদমে। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দ্বিতীয় টিউবের রোরিং কাজ হয়েছে ৪৫০ মিটার। এ দুই টিউবের নির্মাণ কাজ শেষ হলে চার লেন দিয়ে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করতে পারবে গাড়ি। টানেলের সংযুক্ত সড়কের উন্নয়ন কাজও চলছে দ্রুততার সঙ্গে। টানেল ব্যবহার করা গাড়িগুলো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে সিটি আউটার রিং রোড দিয়ে পতেঙ্গা প্রান্তে টানেলে প্রবেশ করে আনোয়ারা প্রান্তে পটিয়া-আনোয়ারা-বাঁশখালী সড়কে উঠবে। তাই সংযোগ সড়ক ঘিরে চলছে সড়ক, ব্রিজ, কালভার্ড তৈরির বিরামহীন কর্মযজ্ঞ। আনোয়ারা প্রান্তে টানেলের মুখ থেকে মূল সড়কে উঠতে তৈরি করা হচ্ছে ৭২৭ মিটারের উড়াল সেতু। এরই মধ্যে পিলার তৈরির কাজ শেষ হয়ে গার্ডার ও স্লাব বসানোর কাজ চলছে। রাতদিন পালাবদল করে দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী এবং শ্রমিকরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
চীনের সাংহাই নগরীর আদলে চট্টগ্রাম শহর ও আনোয়ারাকে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’র আদলে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে তৈরি হচ্ছে টানেল। এ টানেলের এক প্রান্তে রয়েছে আনোয়ারার ভারী শিল্প এলাকা। অন্যপ্রান্তে চট্টগ্রাম নগরী, বিমান ও সমুদ্রবন্দর। সরকার বিভক্ত দুই অংশকে একই সুতায় যুক্ত করতে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার টানেল নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৫ সালের নভেম্বরে অনুমোদন পায়। বাংলাদেশ সরকার ও চাইনিজ এক্সিম ব্যাংক এ প্রকল্পের যৌথ অর্থায়ন করছে। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। আগামী ২০২২ সালের মধ্যে এ টানেলটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি পুরোদমে চালু হলে বছরে প্রায় ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে এই টানেল নির্মাণে পাল্টে যাবে চট্টগ্রাম তথা দেশের অর্থনীতি। বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে শিল্পকারখানা ও পর্যটন শিল্পের।