রবিবার, ১৪ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

মডেল স্বর্ণার প্রতারণার যত কৌশল, অভিযোগের পাহাড়

নিজস্ব প্রতিবেদক

মডেল স্বর্ণার প্রতারণার যত কৌশল, অভিযোগের পাহাড়

প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার মডেল ও অভিনেত্রী রোমানা ইসলাম স্বর্ণার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অসংখ্য অভিযোগ আসছে। সৌদি প্রবাসী কামরুল ইসলাম জুয়েলের অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়া থেকে তাকে গ্রেফতারের পর এসব অভিযোগ আসা শুরু হয়। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে স্বর্ণাকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, প্রবাসী কামরুলের মামলায় গ্রেফতারের পর থেকে স্বর্ণার আরও প্রতারণার খবর আসছে। অনেকে সরাসরি বা ফোনে অভিযোগ জানাচ্ছেন। তবে কেউ লিখিত অভিযোগ দেননি। লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার লালমাটিয়া ডি-ব্লকের একটি বাসা থেকে স্বর্ণাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার অন্য দুজন হলেন- স্বর্ণার মা আশরাফি ইসলাম শেইলি ও ছেলে আন্নাফি। প্রবাসী কামরুলের করা প্রতারণা মামলায় অভিনেত্রী স্বর্ণা এখন জেলে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ব্ল্যাকমেইল করে সৌদি প্রবাসী কামরুলকে বিয়ে করেন স্বর্ণা। এর পরই পাল্টে যেতে থাকে তার জীবনযাপন। কামরুলের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া টাকার মাধ্যমে এসব হয়েছে। স্বর্ণা এবং তার পরিবার প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত। এ চক্রের সঙ্গে রিজভী এবং সিহাব নামে দুজন আছে। তারা বিভিন্নভাবে স্বর্ণাকে সহযোগিতা করত। তবে এদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

জানা গেছে, প্রতারণার মাধ্যমে বিয়ে করে প্রবাসী কামরুলের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় প্রায় ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন স্বর্ণা। শুধু কামরুলই নয়, আপত্তিকরভাবে ছবি তুলে একের পর এক ব্ল্যাকমেইল করে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন স্বর্ণা। স্বর্ণা একা নন, তার এই কাজে পরিবারের অন্য সদস্যরাও জড়িত।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অভিনেত্রী স্বর্ণা, তার মা, ছেলে, ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী সবাই সৌদি প্রবাসী কামরুলের কাছ থেকে টাকা হাতিয়েছেন। কামরুল বিদেশ থেকে আসার পর তাকে বাসায় নিয়ে অচেতন করে উলঙ্গ অবস্থায় তার ছবি তোলেন স্বর্ণা ও তার পরিবারের সদস্যরা। এরপর মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে সেই ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন।

পুলিশ জানায়, স্বর্ণা মডেল পরিচয়ে ফেসবুকে ভিন্ন ভিন্ন আইডি খুলতেন এবং আপত্তিকর ছবি আপলোড করতেন। প্রবাসীদের টার্গেট করে ফ্রেন্ড বানিয়ে গড়ে তুলতেন প্রেমের সম্পর্ক। এরপর বিয়ে। কখনো স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স আবার সংসারে আর্থিক সংকটসহ নানা কারণ দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা নিতেন। এরপর কৌশলে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও ধারণ করে তা ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে লিখে নিতেন বাড়ি-গাড়ি-টাকা। অভিনেত্রীর এই কাজে তাকে সহায়তা করত তার পরিবার।

কামরুল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘স্বর্ণা আমার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলে। এরপর বিভিন্ন সময়ে আমার কাছ থেকে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা নেয়। আমি দেশে আসার পর বাসায় ডাকে। আমি যাই। তারা আমাকে কিছু একটা খাইয়ে অজ্ঞান করে। আমার খারাপ ছবি তোলে এবং স্ট্যাম্পে সই করিয়ে নেয়। সে আমাকে জোর করে বিয়ে করে। আবার আমাকে ডিভোর্স দিয়েছে বলেও স্বর্ণা জানায়। পরে আইনের আশ্রয় নিই’।

এভাবেই বিয়ের নামে প্রতারণা করে স্বর্ণা ও তার পরিবার একাধিক প্রবাসীর কাছ থেকে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রতারণার স্বীকার হওয়া কয়েকজন। পুলিশ বলছে, এই পরিবারের প্রত্যেক সদস্যই বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে একই প্রক্রিয়ায় প্রেম ও বিয়ের সম্পর্কের অভিনয় করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। তবে এ ব্যাপারে কামরুল ছাড়া থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দেননি।

সর্বশেষ খবর