শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

ভিতরে-বাইরে সংকটে হেফাজত

সরকারের সঙ্গে আপসের চেষ্টা, শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কেউ কেউ করছেন পদত্যাগ, গ্রেফতার এড়াতে অনেকে আত্মগোপনে

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

একের পর এক সংকটে পড়ে টালমাটাল আলোচিত-সমালোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। একদিকে শতাধিক নাশকতার মামলার খড়গ, শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কেউ গ্রেফতার, কেউ আত্মগোপনে, অন্যদিকে সিনিয়র নেতাদের পদত্যাগ কিংবা হেফাজতে ইসলামের অপর একটি অংশের প্রকাশ্যে বর্তমান কমিটির বিরোধিতা। সব মিলিয়ে বিগত যে কোনো সময়ের সবচেয়ে কঠিন সংকটে পড়েছে আলোচিত সংগঠনটি। এমন পরিস্থিতি উত্তরণে সরকারের সঙ্গে আপস আলোচনা করে সংকট নিরসন করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়জী বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধির পাশপাশি সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা করছি, আমরা সরকারবিরোধী নই। আমরা আগেও সরকারের বিরোধী ছিলাম না। যারা গ্রেফতার হয়েছেন তাদের স্থলে ভারপ্রাপ্ত নেতা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাই সাংগঠনিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে না।’

আল্লামা আহমদ শফী অনুসারী সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মাঈনুদ্দীন রুহী বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের বর্তমান কমিটি আদর্শচ্যুত হয়েছে। তারা রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেই তৎপর। তাই হেফাজতে ইসলামের বর্তমান কমিটির দোষগুলো তুলে ধরছি।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে হেফাজতে ইসলামের একাধিক নেতা বলেন, ‘হেফাজতের বর্তমান সংকট নিয়ে ১৮ এপ্রিল ভার্চুয়াল বৈঠকে বসেন সংগঠনের সিনিয়র নেতারা। ওই বৈঠকে সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য সংগঠনের সিনিয়র কয়েকজন নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। দায়ের হওয়া মামলার আইনি মোকাবিলা এবং অর্থ সংগ্রহের জন্য পৃথক কমিটি গঠন করা হয়। সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য এরই মধ্যে তোড়জোড় শুরু করেছেন হেফাজতে ইসলামের নেতারা।’ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর ঘিরে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তান্ডব চালান হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা। এর পরপর সংগঠনের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের সোনারগাঁ-কান্ড এবং আল্লামা আহমদ শফীকে হত্যার দায়ে আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীসহ ৪৩ নেতাকে অভিযুক্ত করে পিবিআইর আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল। এসব ঘটনায় বিব্রত হয়ে সংগঠন থেকে পদত্যাগ করেছেন নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মোহাম্মদ হাসান ও মাওলানা হাবিবুর রহমান হাজি সাহেব। আরেক নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল আওয়াল পদত্যাগ করার ঘোষণা দিলেও সিনিয়র কয়েকজন নেতার অনুরোধে পরে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। এ ছাড়া নাশকতার মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, সহকারী মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসেন রাজী, মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, সহকারী অর্থ সম্পাদক মুফতি ইলিয়াস হামিদী, সহকারী প্রচার সম্পাদক মুফতি শরীফ উল্লাহসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপন করেছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকে। এমন পরিস্থিতি চরম সংকটে ফেলেছে হেফাজতে ইসলামকে। এর আগে হেফাজতে ইসলামের প্রয়াত আমির আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ফাটল ধরে এ সংগঠনে। তখন থেকে হেফাজতে ইসলামের বর্তমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আল্লামা আহমদ শফীকে খুন, স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নসহ নানা অভিযোগ করে আসছেন শফী অনুসারীরা। দেশব্যাপী নাশকতা, মাওলানা মামুনুলকান্ড এবং আল্লামা আহমদ শফী হত্যা ইস্যুতে বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে মাঠে সরব রয়েছে শফীপন্থিরা। এমন পরিস্থিতিতে চরম সংকটে পড়েছে আলোচিত সংগঠনটি।

সর্বশেষ খবর