বৃহস্পতিবার, ৬ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

ছয় শর্তে চলবে গণপরিবহন

লকডাউন ১৬ মে পর্যন্ত, ঈদের ছুটিতে থাকতে হবে কর্মস্থল এলাকায় দোকানপাট-শপিং মল ১০টা-৮টা খোলা, ব্যাংকে লেনদেন ২টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানও

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলমান লকডাউনের (বিধিনিষেধ) মেয়াদ ১৬ মে পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। এক্ষেত্রে ঈদের ছুটিতে সবাইকে নিজ নিজ কর্মস্থলের এলাকাতেই থাকতে হবে এবার। আজ থেকে জেলার অভ্যন্তরে শুরু হচ্ছে গণপরিবহন চলাচল। তবে বন্ধ থাকবে আন্তজেলা গণপরিবহন। সেইসঙ্গে আগের মতো ট্রেন ও লঞ্চ বন্ধ থাকবে। জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানও বন্ধ থাকবে। কিছু শর্তে গণপরিবহন চলার অনুমতি দিয়ে চলমান লকডাউন যে বাড়ছে, দুই দিন আগেই তা জানিয়েছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে সেই প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আগে যেসব বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল, তার সঙ্গে নতুন কিছু শর্ত যুক্ত করে ৫ মে মধ্যরাত থেকে ১৬ মে মধ্যরাত পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরোপের সময়সীমা বাড়ানো হলো।

নতুন শর্তে বলা হয়েছে, সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদের ছুটিতে আবশ্যিকভাবে নিজ নিজ কর্মস্থলে (অধিক্ষেত্রে) অবস্থান করতে হবে। সরকারি পঞ্জিকায় এবার ঈদের ছুটি ধরা হয়েছে ১৩ থেকে ১৫ মে। এর মধ্যে শেষ দুই দিন পড়েছে সাপ্তাহিক ছুটি। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ঈদের ছুটির হিসাবে এক দিন এদিক-ওদিক হতে পারে। তবে মহামারীর মধ্যে ঈদুল ফিতর ঘিরে এবার কোনো প্রতিষ্ঠান কর্মীদের অতিরিক্ত ছুটি দিতে পারবে না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছে সরকার।

নতুন মেয়াদের এই বিধিনিষেধ আজ বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার চলতি বছর প্রথমে ৫ এপ্রিল থেকে সাত দিনের জন্য গণপরিবহন চলাচলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ জারি করেছিল। পরে তা আরও দুই দিন বাড়ানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত আরও কঠোর বিধিনিষেধ দিয়ে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ শুরু হয়। সেটি পরে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। এরপর আবার তা ৫ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়, যা আবার বাড়ল। তবে গত ২৫ এপ্রিল থেকে দোকান ও শপিং মল খুলে দেওয়া হয়েছে। খোলা রয়েছে ব্যাংকও। এ ছাড়া জরুরি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত অফিসগুলোও খোলা।

নতুন প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, দোকানপাট ও শপিং মল আগের মতোই সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। তবে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালন নিশ্চিত না করলে দোকানপাট ও শপিং মল বন্ধ করে দেওয়া হবে। ট্রেন ও লঞ্চ এবং আন্তজেলা বাস আগের মতোই বন্ধ থাকবে। তবে আজ বৃহস্পতিবার থেকে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে জেলার ভিতরে গণপরিবহন চলাচল করতে পারবে।

সরকারের আদেশে বলা হয়েছে, মাস্ক ব্যবহার শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কভিড-১৯ প্রতিরোধে সিটি করপোরেশন, জেলা সদর, পৌরসভা এলাকাগুলো বাধ্যতামূলক মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের জন্য তথ্য মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা মাইকিংসহ ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করবে। জনসমাবেশ হয়- এমন সব সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে বিধিনিষেধের এই সময়ে।

সড়ক, নৌ ও রেলপথে দূরপাল্লার যাত্রী বহন বন্ধ থাকলেও বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ইতিমধ্যে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ বিবেচিত দেশগুলো বাদে অন্য সব গন্তব্যে ‘কঠোর শর্তসাপেক্ষে’ নিয়মিত বাণিজ্যিক ফ্লাইটে যাত্রী পরিবহনের অনুমতি দিয়েছে।

নতুন ছয় শর্ত : কভিড-১৯ সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আগের সব বিধিনিষেধ ও কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় ছয়টি শর্ত যুক্ত করে ৫ মে মধ্যরাত থেকে ১৬ মে মধ্যরাত পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরোপের সময় বাড়ানো হয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়। নতুন শর্তগুলো হলো- ১. সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঈদের ছুটিতে আবশ্যিকভাবে নিজ নিজ কর্মস্থলে (অধিক্ষেত্রে) অবস্থান করবেন। ২. দোকানপাট/শপিং মল আগের মতো সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। সব দোকানপাট ও শপিং মলে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালন নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় দোকানপাট শপিং মল তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে। ৩. আন্তজেলা গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। তবে ৫ মে (আজ থেকে) পর যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন সাপেক্ষে জেলার অভ্যন্তরে গণপরিবহন চলাচল করতে পারবে। উল্লেখ্য, ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল আগের মতোই বন্ধ থাকবে। ৪. মাস্ক ব্যবহার শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৫. জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। ৬. কভিড-১৯ প্রতিরোধে সিটি করপোরেশন, জেলা সদর, পৌরসভা এলাকায় বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের জন্য তথ্য মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন/পৌরসভা মাইকিংসহ ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ ছাড়া জেলার মধ্যে বাস চলাচল এবং আন্তজেলা বাস চলাচল বন্ধ রাখার বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবের কাছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

আজ থেকে জেলার মধ্যে বাস চালু : টানা তিন সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর আজ বৃহস্পতিবার থেকে গণপরিবহন চালু হচ্ছে। এ জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন পরিবহনের মালিক-শ্রমিকেরা। সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সব জেলায় বাস চালুর ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। তবে আন্তজেলা গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। এ ক্ষেত্রে সমিতির পক্ষ থেকে পরিবহনের মালিক, শ্রমিক ও যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। এগুলো হচ্ছে মাস্ক ছাড়া কোনো যাত্রী ওঠানো যাবে না। যানবাহনের শ্রমিকদের মাস্ক সরবরাহ করবে ওই যানের মালিক। যাত্রীবাহী যানের অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখতে হবে। অর্থাৎ দুই আসনের সারিতে একজন করে বসবেন। দাঁড়িয়ে কোনো যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। লকডাউনের কারণে এমনিতেই সাধারণ মালিক-শ্রমিকেরা কষ্টে আছেন। এ অবস্থায় পরিবহন সমিতি বা কোম্পানির নামে কোনো জিপি (গেটপাস) আদায় করা যাবে না। এদিকে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ এক বিবৃতি জানান, আজ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঢাকা মহানগরসহ সব জেলা শহরের মধ্যে গণপরিবহন চলাচল করবে।

আজ থেকে ব্যাংকে লেনদেন বেলা ২টা পর্যন্ত : সরকারঘোষিত ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ আরও ১০ দিন বাড়িয়ে ১৬ মে পর্যন্ত করা হয়েছে। এ জন্য আজ থেকে ব্যাংকে লেনদেন চলবে সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত। গতকাল বুধবার পর্যন্ত ব্যাংকিং লেনদেন চালু ছিল সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা। ঈদের কারণে ব্যাংকে চাপ বাড়ায় ব্যাংকিং লেনদেনের সময় বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন করে এ সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ৬ মে থেকে ১৬ মে পর্যন্ত ব্যাংকে লেনদেন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলবে। আর আনুষঙ্গিক কাজের জন্য ব্যাংক খোলা থাকবে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। এদিকে ঈদের ছুটিতে ব্যাংকের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আবশ্যিকভাবে নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে ঈদের ছুটিতে কেউ কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবেন না। এ ছাড়া ঈদের আগে তৈরি পোশাকশিল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য এবং রপ্তানিবাণিজ্য অব্যাহত রাখতে ঢাকা মহানগরী, আশুলিয়া, টঙ্গী, গাজীপুর, সাভার, ভালুকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের অবস্থিত ব্যাংক শাখা ১০ মে থেকে ১৩ মে পর্যন্ত খোলা রাখতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অন্যদিকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, পুঁজিবাজারে লেনদেন বেলা দেড়টা পর্যন্ত চলবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর