শনিবার, ৮ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

করোনা ডেকে আনছে অন্য জটিল রোগ

জয়শ্রী ভাদুড়ী

করোনা ডেকে আনছে অন্য জটিল রোগ

কভিড-১৯ রোগ থেকে মুক্তি পেলেও আক্রান্ত রোগীদের শরীরে বাসা বাঁধছে নতুন রোগ। অনেক রোগীর ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, অনেকের ফুসফুসে পানি জমেছে। অনেক রোগী করোনার থাবা থেকে পেয়েছেন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, চর্মরোগ, মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথার মতো নতুন যন্ত্রণা। অনিদ্রা, স্মৃতিভ্রংশ, দুর্বলতা, মানসিক অবসাদও ডেকে আনছে করোনা।

এ ব্যাপারে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. আফজালুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরে সুস্থ মানুষের শরীরেও হৃদরোগের বিভিন্ন অনুষঙ্গ দেখা দিচ্ছে। করোনা নেগেটিভ হলেও অনেক সময় অন্য সমস্যার কারণে অবস্থার অবনতি ঘটছে রোগীর। করোনা আক্রান্ত হলে শরীরে প্রদাহ হয়। এতে হার্টের পাম্পিং কমে যায়। হার্টের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ায় অনেক রোগীর ফুসফুসে পানি আসছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘হার্টের কার্যকারিতা অনেকটা শ্যালোমেশিনের মতো। করোনা রোগীদের নিয়মিত ফলোআপে থাকতে হবে। নয়তো অগোচরে শরীরে বাসা বাঁধবে দুরারোগ্য ব্যাধি। করোনা আক্রান্ত হলে মনোবল হারানো যাবে না। শক্ত মনোবল শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম ধরে রাখে।’

রাজধানীর বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক মাহমুদা খানম গত ২২ ফেব্রুয়ারি করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। ১ মাস ২০ দিন পর করোনা থেকে মুক্তি মিললে তিনি বাসায় যান। কিন্তু এরপরও তীব্র কাশি ও শ্বাসকষ্ট তার পিছু ছাড়ছিল না। তিনি বলেন, ‘কাশি ও শ্বাসকষ্ট থাকায় আবার চিকিৎসকের কাছে যাই। টেস্ট শেষে দেখা যায় ফুসফুসে পানি জমেছে এবং নিউমোনিয়া দেখা দিয়েছে। এ জন্য আবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। কাশি কিছুটা কমলেও শরীর ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়েছে। আগে আমার কোনো রোগই ছিল না। চিকিৎসক বলেছেন এগুলো সবই করোনা পরবর্তী প্রভাব।’ করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমি এবং আমার স্ত্রী করোনা আক্রান্ত হয়েছিলাম। আমার স্ত্রী ২১ দিনে এবং আমি ২৫ দিনে করোনা মুক্ত হই। করোনা নেগেটিভ আসার পর থেকে আমরা ভীষণ দুর্বল বোধ করছি। আমার প্রায় ঘনঘন পেটে সমস্যা হচ্ছে। হজমে সমস্যা হচ্ছে প্রায়ই। রাত তিনটা-চারটা বাজলেও ঘুম আসে না। দেড় মাস ধরে অনিন্দ্রা নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে। আমার স্ত্রীর শরীর অ্যালার্জিতে ভরে গেছে। শরীর জুড়ে লাল ফোসকা উঠেছে। টানা ওষুধ চললেও কাজ হচ্ছে না। ইনজেকশনও দিতে হয়েছে। চিকিৎসক এটাকে পোস্ট কভিড সিনড্রম বলছেন।’

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনা পরবর্তী রোগীদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা যাচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় যাদের বেশি অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ে, আইসিইউতে যেতে হয়, তারা সুস্থ হওয়ার পর এ ধরনের সমস্যা বেশি হয়। আগে না থাকলেও করোনা পরবর্তীতে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস দেখা দিয়েছে এমন রোগীও পেয়েছি আমরা। করোনা পরবর্তীতে দুর্বলতা কিংবা অন্য সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো খাবার ও ওষুধ সেবন করতে হবে।’ চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা নেগেটিভ হওয়ার পর মাঝেমধ্যে অনেকের শ্বাসকষ্ট হতে পারে। সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা বা সামান্য পরিশ্রমে হাঁপিয়ে উঠতে পারেন। বিশেষ করে, যারা নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) থেকেছেন, তাদের শ্বাসক্রিয়া স্বাভাবিক হতে বেশ সময় লেগে যাচ্ছে। করোনা সেরে যাওয়ার পরও কয়েক সপ্তাহ কাশি থাকতে পারে। অবসাদ আর ক্লান্তি থেকে যায় দীর্ঘদিন। হাসপাতালের বিছানায় দীর্ঘদিন শুয়ে থাকার কারণে দেহের পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। খাবারে অরুচিও থেকে যায় বেশ কিছুদিন। এমনকি খাবার গিলতে, চিবুতে সমস্যা হতে পারে। যারা আইসিইউতে ছিলেন বা গলায় টিউব দেওয়া হয়েছিল, তাদের এই সমস্যা বেশি হয়। করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর অনেক রোগীর মানসিক বিপর্যস্ততা দেখা দেয়। মনোযোগ ও চিন্তাশক্তির সমস্যা, স্মৃতি হারানো, বিষণœতার মতো সমস্যা হতে পারে। প্রিভেনটিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, কভিডের পর কিছু রোগে মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে যাকে আমরা পোস্ট কভিড বলছি। এর মধ্যে অবসাদ বা ক্লান্তি থেকে শুরু করে নানান সমস্যা রয়েছে। এর কারণ হচ্ছে, কভিড আক্রান্ত হওয়ার কারণে শরীরের বিপাক প্রক্রিয়ার ওপর ঝড় বয়ে যায়। এ কারণে পরবর্তী সময়ে নানা রকম উপসর্গ দেখা যায়। কভিড আক্রান্তরা হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরলেও তার চিকিৎসা শেষ হয়ে যায় না। তাকে নিয়মিত ফলোআপে থাকতে হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর