শনিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

কোরিয়া প্রবাসী কর্মীদের হাহাকার

তিন মাসের ছুটিতে এসে দেড় বছর পর চাকরি হারানোর শঙ্কা

জুলকার নাইন

কোরিয়ার শ্রম আইন অনুযায়ী এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেম (ইপিএস) এর কর্মী একই কোম্পানিতে চার বছর ১০ মাস কাজ করলে তারা কমিটেড হিসেবে দেশে গিয়ে আবার কোরিয়ায় কাজে যোগ দিতে পারেন। কমিটেডের নিয়ম অনুযায়ী ৩ মাসের জন্য বাংলাদেশে আসা ৮৬২ প্রবাসী আটকে আছেন প্রায় দেড় বছর। একই সময়ে নতুন ভিসা পেয়েও যেতে পারেননি ১১০০ কর্মী। ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার কোনো আশাও দেখছেন না তারা। ফলে হতাশাগ্রস্ত এসব প্রবাসী কর্মীর মধ্যে দেখা দিয়েছে হাহাকার।

পুনরায় কাজে যোগ দেওয়ার অপেক্ষায় থাকা জাহিদ হোসেন জানান, একই কোম্পানিতে বেসিক বেতনে কষ্টের কাজ করেছি শুধু কমিটেড ওয়ার্কার হিসেবে দেশের ভাবমূর্তি রক্ষা আর কোরিয়াতে আবার ফিরব বলে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিগত দেড় বছর আমাদের অপেক্ষা করার পরামর্শই দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখনো কোনো আশার বাণী পেলাম না।

অপর কর্মী নাজমুল ইসলাম বলেন, কমিটেড কর্মী হয়ে কোরিয়ায় ফেরার প্রত্যাশায় ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে দেশে এসেছিলাম। দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার এই আশায় দেশেও কোনো কিছু শুরু করার সুযোগ পাচ্ছি না। এমন অনিশ্চিত ভাগ্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাতে হচ্ছে। হঠাৎ মালিক ফোন করে বলে দিল, ‘তুমি না আসতে পারলে কিছু করার নেই। আমি অন্য দেশ থেকে লোক নিয়ে নিচ্ছি।’

জানা যায়, দক্ষিণ কোরিয়া ২০০৮ সাল থেকে ইপিএসের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে কর্মী সংগ্রহ করে আসছে। বাংলাদেশি কর্মীরা ‘বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড’ বোয়েসেলের মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রবেশ করেন। ২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২১ হাজার ৯৩৩ জন বাংলাদেশি কর্মী দক্ষিণ কোরিয়ায় গেছেন। কিন্তু করোনা মহামারীর ফলে ২০২০ সালের মার্চ থেকে বাংলাদেশ ভিসা নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে। বাংলাদেশের করোনার পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশের ভিসা নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে দেয় দক্ষিণ কোরিয়া সরকার। গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত দেশটিতে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে প্রবেশ করা ৩৩ জন কর্মীর শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ এপ্রিল থেকে আবারও বন্ধ হয়ে যায় বাংলাদেশের জন্য কোরিয়ার দরজা। আটকে থাকা কর্মীরা রাজপথে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জানিয়ে বলেন,  আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এখন প্রয়োজনে প্রত্যেক ইপিএস কর্মীকে কভিডের টিকা প্রয়োগ, বাংলাদেশে কোয়ারেন্টাইন এবং কোরিয়ায় প্রবেশ করার পরও কোয়ারেন্টাইন করার মাধ্যমে কোরিয়া প্রবেশের পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বোয়েসেল ও এইচআরডিকে বারবার অনুরোধ করছি। এ জন্য এখন বেশির ভাগ ইপিএস কর্মী কভিড টিকা প্রথম-দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছে এবং অনেকেই অপেক্ষায় আছেন। পাশাপাশি আটকে পড়া ইপিএস কর্মীদের মধ্য থেকে কিছু প্রস্তাবও পেশ করা হয়েছে। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে আছে- কভিড টিকা দিয়ে কর্মীদের প্রেরণ করা, ফ্লাইটের আগে ৭ দিন কোয়ারেন্টাইন করা, দক্ষিণ কোরিয়ায় গমনের পর যদি ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইন করতে হয় তার খরচ শ্রমিকের বহন করা, কোনো কর্মী যদি কভিড পজিটিভ হয় তখন চিকিৎসার খরচ কর্মীর নিজের বহন করা,  প্রত্যেক কর্মীর স্বাস্থ্যবীমা করা এবং বিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইটের মাধ্যমে কর্মী প্রেরণ।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর