বৃহস্পতিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

কর্মস্থল ত্যাগে নিতে হবে অনুমতি মনিটরিংয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানরা

সতর্ক করে চিঠি দেবে স্থানীয় সরকার বিভাগ, জনপ্রতিনিধিদের নিয়ন্ত্রণ করতেই এ নির্দেশনা : বিইউপিএ

উবায়দুল্লাহ বাদল

এখন থেকে নিজ নির্বাচনী এলাকায় নিয়মিত অবস্থান করতে হবে উপজেলা চেয়ারম্যানদের। কোনো কারণে নিজ এলাকা বা কর্মস্থল ত্যাগ করতে হলে স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুমতি নিতে হবে। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা যাতে কর্মস্থল ত্যাগ না করতে পারেন, সে বিষয়ে মনিটরিং জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এর পরিপ্রেক্ষিতে শিগগিরই দেশের সব উপজেলা চেয়ারম্যানদের সতর্ক করে চিঠি দেবে স্থানীয় সরকার বিভাগ। তবে সরকারের এ সিদ্ধান্তে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে উপজেলা চেয়ারম্যানদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশন (বিইউপিএ)’। তাদের দাবি, দেশের সংবিধান, আইন ও হাই কোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করে জনপ্রতিনিধিদের নিয়ন্ত্রণ করতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠিতে বলা হয়, ‘গত ২১ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় কমিশনার সমন্বয় সভায় তার বিভাগ-সংশ্লিষ্ট দুটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এক. উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানগণের কর্মস্থলে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। দুই. যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানগণ যেন কর্মস্থল ত্যাগ না করেন সে বিষয়ে মনিটরিং জোরদার করতে হবে। এমতাবস্থায় উল্লিখিত দুটি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের নিমিত্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গৃহীত ব্যবস্থা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অবহিত করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠি পেয়েছি। এখন এ বিষয়ে  স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে সব উপজেলা চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে সতর্ক করে শিগগিরই চিঠি দেওয়া হবে।’ এত দিন পর কেন এ নির্দেশনা- এমন প্রশ্নে হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘শুনেছি বিভাগীয় কমিশনারদের সমন্বয় সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। কমিশনাররা বলেছেন, সরকারের উন্নয়ন কর্মকা  ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করেই করতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ উপজেলা চেয়ারম্যান নিজের এলাকায় থাকেন না। সরকারি বিভিন্ন মিটিংয়ে তাদের পাওয়া যায় না। ফলে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এসব কিছু বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক উপজেলা চেয়ারম্যান জেলা শহরে বসবাস করেন। কালেভদ্রে তারা নিজ উপজেলায় যান। আবার কেউ কেউ ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করানো বা ব্যবসায়িক কারণে রাজধানীতেই স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। ফলে এসব জনপ্রতিনিধিকে সাধারণ মানুষ সহজে পান না। এ নিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ আছে। এসব বিষয় স্থানীয় সরকার বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দফতরের নজরে এসেছে। ২১ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে বিভাগীয় কমিশনারদের সমন্বয় সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। সভায় বিভাগীয় কমিশনাররাও বিষয়টি তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। এ সময় তারা বলেন, দেশের অনেক জেলায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানরা কর্মস্থলে নিয়মিত উপস্থিত থাকেন না। কিন্তু উপজেলা পর্যায়ে অনেক ক্ষেত্রে উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য তাদের কর্মস্থলে অবস্থান জরুরি। কারণ স্থানীয় সমস্যাগুলো জনপ্রতিনিধিরা যত সহজে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন, স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষে ততটা সহজ হয় না। জনপ্রতিনিধিরা সতর্ক থাকলে স্থানীয় পর্যায়ে বহু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়ানো সম্ভব। তারা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনার সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারতেন। অনেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেনও। এ জন্য উপজেলা চেয়ারম্যানদের কর্মস্থলে উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত কর্মস্থল ত্যাগ না করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানান তারা। এর পরই মূলত এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

সরকারের এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ। তিনি গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যে কোনো অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, অনেক উপজেলা চেয়ারম্যান নিয়মিত এলাকায় থাকেন না, অফিস করেন না। তারা বেতন-ভাতাসহ সরকারের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে জনগণের পাশে থাকেন না। সারা বছর সরকারি গাড়ি নিয়ে রাজধানীতেই বসবাস করছেন। তারা নিয়মিত অফিস না করায় তাদের অধীনস্থ দফতরগুলোর ফাইল পেন্ডিং থাকছে। সরকারি গাড়ি উপজেলা পরিষদকে দিলেও তারা সেই গাড়ি ব্যক্তিগতভাবেই ব্যবহার করছেন। এমনকি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানরা চাইলেও গাড়ি দেওয়া হয় না। এমন অভিযোগ ভূরি ভূরি রয়েছে। জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সব সময় জনগণের কাছে থাকবেন এটাই হওয়া উচিত।’ তবে সরকারের এ সিদ্ধান্ত সঠিক নয় বলে মনে করছে বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির সভাপতি ও পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশীদ হাওলাদার বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত অবহিত ন?ই। উপজেলা পরিষদসহ সব স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কাজ করছেন। সংবিধান, আইন ও হাই কোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ না করে জনপ্রতিনিধিদের নিয়ন্ত্রণে এবং ভিন্ন দিকে দৃষ্টি নিতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’ সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ও নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলা চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম খান বীরু বলেন, ‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার কারণে যদি এ নির্দেশনা হয়ে থাকে, তাহলে বলব সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ও চিহ্নিত অপরাধীদের বাঁচাতেই এ অপ্রাসঙ্গিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর