বুধবার, ১০ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
কারাগারই তাদের ঘরবাড়ি

বিনা বিচারে বন্দী জীবন কাটছে ৫৯ হাজতির

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দী সত্যজিত পাল। ৪২ বছর বয়সে একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাবন্দী হন তিনি। গ্রেফতার হওয়ার পর কারাগারেই কেটে যায় তার জীবনের ১৮টি বছর। কারাগারে প্রবেশ করা যুবকের শরীরে এখন পড়েছে বয়সের ছাপ। এ মামলায় ৭১ বার আদালতে হাজির হলেও এখনো শেষ হয়নি মামলার বিচার কার্য। ফলে কারাগারই যেন তার ‘ঘর-বাড়ি’। শুধু সত্যজিত পাল নয়, তার মতো অন্তত ৫৯ জন বন্দী চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারগারে আটক রয়েছেন বছরের পর বছর ।

বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন-চট্টগ্রাম চ্যাপ্টার সভাপতি জিয়া হাবিব আহসান বলেন, ‘বিনা বিচারে বছরের পর বছর কারাগারে বন্দী থাকা সংবিধান পরিপন্থী। এতে করে বন্দীর মৌলিক অধিকার হরণ হচ্ছে। রাষ্ট্রের উচিত দ্রুততার সঙ্গে এসব বন্দীকে বের করা।’ জানা যায়, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ৫ বছরের বেশি সময় ধরে বিনা বিচারে বন্দী রয়েছেন এমন হাজতির সংখ্যা কমপক্ষে ৫৯ জন। তারা কেউ হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাই, দ্রুতবিচার মামলার আসামি। কেউ এক মামলায় কারাগারে আটক রয়েছেন বছরের পর বছর। কারও কারও রয়েছে একাধিক মামলা। এসব মামলায় তাদের আদালতে হাজির করা হয়েছে ৪০ থেকে ৯০ বার পর্যন্ত। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে মামলার কার্যক্রম চললেও শেষ হয়নি বিচার কার্য। আদালতের একাধিক সূত্র জানায়, যেসব হাজতি কারাগারে বন্দী রয়েছেন তাদের বেশির ভাগেরই মামলার তদবিরকারক নেই। ফলে তাদের পক্ষে নেই কোনো আইনজীবী। আবার কিছু কিছু মামলা সাক্ষীর অভাবে বিচার শুরু করা হচ্ছে না। মামলা অনেক পুরনো হওয়ায় প্রয়োজনীয় নথিও খুঁজে পাওয়া যায় না কিছু মামলার। অনেক মামলার চার্জশিটে আসামির নাম বা ঠিকানা ভুল রয়েছে। অনেক সাক্ষীর নামের সঙ্গে ঠিকানার মিল নেই। এসব কারণে দ্রুততার সঙ্গে শেষ করা যাচ্ছে না বিচার কার্য। ফলে বছরের পর বছর কারাগারে বন্দী রয়েছেন এ আসামিরা। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের একাধিক সূত্র জানায়- চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দীদের ধারণক্ষমতা ২ হাজার ২৪৯ হলেও গড়ে এখানে ৮ হাজার বন্দী থাকেন। তার ওপর বিনা বিচারে পাঁচ বছরের অধিক সময় থাকা বন্দীরা কারাগারের জন্য এক প্রকাশ বোঝা। বিনা বিচারে থাকা বন্দীদের বিষয়ে অসংখ্যবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর