শুক্রবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

সংকট কাটলেও কাটেনি ভীতি

বাসভবন থেকে বের হননি উপাচার্য

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট ও জুবায়ের মাহমুদ, শাবি

সংকট কাটলেও কাটেনি ভীতি

উত্তপ্ত পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে। অনশন ভাঙার পর উপাচার্যের বাসভবন, একাডেমিক ভবন ও প্রধান ফটক থেকে অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়েছে। অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের হস্তক্ষেপে আপাতত সংকট কেটেছে। কিন্তু কাটেনি উপাচার্য-ভীতি। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মাঝে এই ভীতি বিরাজ করছে। উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ স্বপদে বহাল থেকে যাওয়ায় শিক্ষাজীবন নিয়ে তৈরি হয়েছে তাদের শঙ্কা। তবে আন্দোলনকারীরা কোনোভাবেই হয়রানির শিকার হবেন না- এমন আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। শিক্ষক সমিতির নেতারাও আন্দোলনকারী শিক্ষার্র্থীদের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। আন্দোলনকারীদের মন থেকে তবুও যেন কাটছে না উপাচার্য-ভীতি। এদিকে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেওয়া হলেও বাসভবন থেকে বের হননি উপাচার্য। অন্যদিকে অনশন ও অবরোধ প্রত্যাহার করলেও উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে অহিংস আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে অনড় রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে যখন শাবি উত্তাল সেই সময় গত ২৩ জানুয়ারি গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মিটিং করেন। এ সময় শিক্ষামন্ত্রী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেন তারা কোনো ধরনের হয়রানির শিকার বা তাদের শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। শিক্ষামন্ত্রীর এমন আশ্বাসেও ভরসা রাখতে পারছেন না আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তারা মনে করেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এক দফায় গড়িয়েছিল। উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে তারা আমরণ অনশন করেছে। তাই অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ উপাচার্য পদে বহাল থেকে গেলে তিনি এর প্রতিশোধ নেবেন। আন্দোলনকারী ও অনশনকারীদের তিনি ছেড়ে দেবেন না। নানা অজুহাতে তিনি তাদের শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত করবেন। এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শর্মিলা সিদ্দিকা মিলা বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী ও জাফর ইকবাল স্যারের আশ্বাসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন স্থগিত করেছে। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, আগামী দিনে শিক্ষার্থীদের ওপর এই আন্দোলনের কোনো প্রভাব যে পড়বে না তার নিশ্চয়তা কতটুকু? পরীক্ষার খাতা, ল্যাব অথবা ভাইভায় পড়তে পারে এর প্রভাব। তখন কাকে গিয়ে আমাদের কথা বলব? আর বললেও কি আমাদের কথা তখন কেউ শুনবে? তখন তো আমরা শিক্ষামন্ত্রীর কাছেও যেতে পারব না। তাই এই উপাচার্য আমাদের জন্য মোটেই নিরাপদ নন।’ ফেস মার্কিংয়ের ব্যাপারে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী তানভীন হাসান বলেন, কোনো শিক্ষার্থীকে টার্গেট করলে তার ক্ষতি করা যায়। অধিকাংশ শিক্ষার্থীই বর্তমানে ফেস মার্কিং নিয়ে শঙ্কিত এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি খুব বেশি চলমান।’ পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আবেদীন বলেন, ‘প্রত্যেক আন্দোলনের পর আমরা দেখি যে বা যারা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকেন তাদের শিক্ষা জীবনে প্রশাসন কিংবা বিভাগ থেকে খড়গ নামে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মাঝে এই শঙ্কা রয়েই গেছে।’ তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন নিয়ে কোনো সংকট তৈরি হলে শিক্ষক সমিতি শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবে এবং এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে বলে নিশ্চয়তা দেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহম্মদ মহিবুল আলম।

অবরোধ প্রত্যাহার : আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক, চারটি একাডেমিক ও দুটি প্রশাসনিক ভবন থেকে অবরোধ প্রত্যাহার করে তালা খুলে দিয়েছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে মোহাইমিনুল বাশার রাজ বলেন, ‘উপাচার্যের পদত্যাগসহ আমাদের সব দাবি দাওয়া পূরণ করা হবে- জাফর ইকবাল স্যার এ রকম প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় আমরা অনশন ভেঙেছি এবং তাঁর অনুরোধে অবরোধও প্রত্যাহার করেছি। অবরোধের আওতায় থাকা সব ভবনের তালা খুলে দেওয়া হয়েছে ও অবরোধ উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের দাফতরিক কার্যক্রমের ব্যাপারে কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম উজ্জ্বল বলেন,  অবরোধ প্রত্যাহার হওয়ায় গতকাল বিভিন্ন দফতরে কিছু কর্মকর্তা আসলেও কোনো কার্যক্রম চলেনি।

উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রভোস্টের অসদাচরণের অভিযোগ তুলে গত ১৩ জানুয়ারি রাতে আন্দোলনে নামেন ওই হলের ছাত্রীরা। এর জের ধরে তারা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে এবং পরে পুলিশের লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেডে শিক্ষার্থীসহ ক্যাম্পাসের অর্ধশত লোক আহত হয়। আন্দোলনের একপর্যায়ে তারা অনশনে যান। তাদের এক দফা দাবি ‘উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত’ অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। অবশেষে সাত দিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী ইয়াসমিন হকের প্রতিশ্রুতিতে সেই অনশন ভাঙেন অনশনকারীরা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর