শনিবার, ২৮ মে, ২০২২ ০০:০০ টা
ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে : দুদক কমিশনার

১১ দিনের জেল হেফাজতে পি কে হালদার

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

১১ দিনের জেল হেফাজতে পি কে হালদার

পি কে হালদারসহ ছয় অভিযুক্তকে ১১ দিনের বিচার বিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতার নগর দায়রা আদালত। ১০ দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল আদালতের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে তোলা হয় তাদের। এ সময় ইডির আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী আদালতের কাছে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের আবেদন জানান। অভিযুক্তদের আইনজীবী সোমনাথ ঘোষ ও আলী হায়দার চার দিনের জেল হেফাজতের আবেদন জানান। দুই পক্ষের সওয়াল-জবাব শেষে ১১ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ দেন ভারপ্রাপ্ত বিচারক সৌভিক ঘোষ। সেক্ষেত্রে আগামী ৭ জুন ফের অভিযুক্ত সবাইকে আদালতে তোলা হবে। তদন্তের স্বার্থে কারাগারে গিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)র কর্মকর্তারা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন। জিজ্ঞাসাবাদের ওই বয়ানও রেকর্ড করা হবে।

সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া পি কে হালদার ১৪ মে কলকাতায় গ্রেফতার হন।

কয়েক দিন ধরে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে তদন্তকারী কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, শুধু অশোকনগর বা পশ্চিমবঙ্গ নয়, পি কে হালদার এবং তার সহযোগীরা গোটা ভারতে প্রতারণার জাল ছড়িয়েছিলেন। তাদের জেরা করে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তিরও হদিস পাওয়া গেছে। যদিও সেই আয়ের উৎস পি কে হালদার বা তার সহযোগীরা কেউই দেখাতে পারেননি। কলকাতা এবং তার উপকণ্ঠে এমন ১৩টি সংস্থার খোঁজ পেয়েছে যেগুলো হালদার বা তার সহযোগীদের হাতে গড়া। ইডির আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী জানান, ‘আমরা পি কে হালদারকে ১৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমন কিছু তথ্য-প্রমাণ হাতে এসেছে যাতে প্রমাণিত হয়েছে যে পি কে হালদার এবং তার সহযোগীরা গোটা ভারতে প্রতারণার জাল ছড়িয়েছিলেন। তাদের জেরা করে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। কিন্তু সেই আয়ের উৎস পি কে হালদার বা তার সহযোগীরা দেখাতে পারেননি। তাকে জেরা করে প্রায় ১৩টি বাড়ি, ফ্ল্যাট, বোট হাউস এবং অসংখ্য জমির হদিস পাওয়া গেছে সেগুলোর কোনোটা পি কে হালদার ও সহযোগীদের নামে, কোনোটা আবার বেনামে।  আইনজীবী জানান, ‘বাংলাদেশ থেকে আসা অর্থ মূলত রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করা হয়েছে। কলকাতা এবং তার উপকণ্ঠে এমন ১৩টি সংস্থার খোঁজ পেয়েছে যেগুলোকে হালদার বা তার সহযোগীদের হাতে গড়া।’ বাংলাদেশ থেকে আত্মসাৎ করা টাকা বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে ইডির আইনজীবী বলেন, ‘এটি দুই দেশের ব্যাপার। সব রকম আইনি জটিলতা সরিয়ে রেখে যেভাবে তারা এগোবে এবং বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি- সব কিছুর ওপর ভিত্তি করে তাকে হস্তান্তর করা হতে পারে, যদিও সেটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। পি কে হালদার তদন্তে সম্পূর্ণ সহায়তা না করলেও যতটুকু করছেন তা দিয়ে তদন্তের কাজ এগোচ্ছে বলেও এদিন জানান অরিজিৎ চক্রবর্তী।

যদিও অভিযুক্তদের আইনজীবী সোমনাথ ঘোষ ও আলী হায়দার জানান, ‘পি কে হালদার নামে তারা কাউকে জানেন না, চেনেন না। যাকে পি কে হালদার বলা হচ্ছে, তিনি শিবশংকর হালদার, তিনি ভারতীয় নাগরিক। তাদের প্রশ্ন শিবশংকর যদি বাংলাদেশি নাগরিকই হন, তবে তার বিরুদ্ধে এখনো ১৪ ফরেনার্স আইনে মামলা দায়ের করা হলো না কেন। এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য-প্রমাণ আদালতে দাখিল করা হয়েছে তা ভুয়া বলেও দাবি করেন তারা।

গতকাল দুপুর ১.২০ মিনিট নাগাদ ইডির আঞ্চলিক কার্যালয় সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বেরিয়ে কলকাতা নগর দায়রা আদালতের দিকে রওনা হন পি কে হালদারের ভাই ও তার চার সহযোগী- প্রাণেশ কুমার হালদার, স্বপন মিস্ত্রি ওরফে স্বপন মৈত্র, উত্তম মিস্ত্রি ওরফে উত্তম মৈত্র এবং ইমাম হোসেন ওরফে ইমন হালদার। আদালতে যাওয়ার পথে কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি কেউই। সাংবাদিকদের নজর এড়িয়েই এদিন সিজিও কমপ্লেক্স থেকে আদালতে নিয়ে আসা হয় মূল অভিযুক্ত পি কে হালদারকে। অন্যদিকে আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের নারী সেল থেকে আদালতে নিয়ে আসা হয় নারী অভিযুক্ত শর্মী হালদারকে।

এদিন পি কে হালদারসহ পাঁচ পুরুষ অভিযুক্তকে এজলাসের একদিকে রাখা হয়। সেখানে নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা সারতে দেখা যায় তাদের। নারী অভিযুক্ত শর্মীকে রাখা হয় আরেক প্রান্তে। শুনানি শেষে শর্মীকে যখন কড়া নিরাপত্তায় পৃথকভাবে আদালত থেকে বাইরে বের করা হয় তখন সাংবাদিকরা শত চেষ্টা সত্ত্বেও তার মুখ থেকে একটি কথাও বের করতে পারেননি। বিকাল পাঁচটা ১০ মিনিট নাগাদ যখন আদালত থেকে পি কে হালদারসহ পাঁচ অভিযুক্তকে কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয় তখনো তাদের কেউই একটি প্রশ্নেরও উত্তর দেননি। গত ১৪ মে অশোকনগরসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে ইডি। এরপর প্রথম দফায় তিন দিন এবং দ্বিতীয় দফায় ১০ দিনের ইডি রিমান্ডের নির্দেশ দেয় আদালত।

পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা চলছে : মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িত, ভারতে গ্রেফতার হওয়া প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার) দেশে ফিরিয়ে আনতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান। গতকাল সকালে মাদারীপুরের পাঁচখোলা এলাকায় কলেজে দুর্নীতিবিরোধী আন্তঃকলেজ মডেল বিতর্ক প্রতিযোগিতার উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

দুদক কমিশনার আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সজাগ থাকার জন্য, সোচ্চার হওয়ার জন্য, দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব তৈরি করার জন্য একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। দুদক কমিশনার বলেন, ভারত এবং বাংলাদেশের দুই আদালতে পি কে হালদারের বিচার হবে। পি কে হালদার যেহেতু বাংলাদেশের নাগরিক, দেশের অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত। অর্থ পাচার কর্মকাে র তিনি মহানায়ক। ইতোমধ্যে তার কয়েক সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ৩৫টি মামলা হয়েছে। পি কে হালদারের সহযোগীরা অর্থ পাচারের বিষয়টি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। পি কে হালদারকে দেশে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারলে অজানা তথ্য বেরিয়ে আসবে। দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান বলেন, আমরা মূলত দুর্নীতি প্রতিরোধে বেশি গুরুত্বারোপ করে থাকি। যখন কোনো অর্থ পাচারের অভিযোগ আসে তখন ঘটনায় জড়িতদের নামের তালিকা করা হয়। অপরাধীদের তালিকা আপডেট হচ্ছে। যারা টাকা পাচার করে বাইরে পালিয়ে গেছে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক (আইসিটি ও প্রশিক্ষণ) এ কে এম সোহেল, ঢাকা বিভাগের পরিচালক মো. আক্তার হোসেন, ন্যাশনাল ডিবেট ফেডারেশনের চেয়ারম্যান এ কে এম শোয়েব, মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন, ড. মো. মোজাম্মেল হক খান কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবদুল হালিম, মাদারীপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শ্রীনিবাস, মাদারীপুর দুর্নীতি দমন কমিশনের উপপরিচালক মো. আতিকুর রহমান, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাইনউদ্দিনসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ, শিক্ষকবৃন্দ।

সর্বশেষ খবর