শুক্রবার, ২২ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা
বাংলাদেশ ব্যাংককে এফবিসিসিআইর চিঠি

অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতায় ব্যাপক চাপে ব্যবসায়ীরা

♦ সব ঋণগ্রহীতার জন্য সমান সুযোগ কামনা ♦ সব ঋণের ক্ষেত্রেই গ্রেস পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ মেয়াদ আট বছর নির্ধারণের দাবি ♦ ন্যূনতম ডাউন পেমেন্টের হার সবার জন্য ২.৫০ শতাংশ নির্ধারণের দাবি

রুহুল আমিন রাসেল

বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতায় বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ব্যাপক চাপে রয়েছেন বলে জানিয়েছে এফবিসিসিআই। ব্যবসায়ীদের এ শীর্ষ সংগঠনটি বাংলাদেশ ব্যাংককে দেওয়া চিঠিতে এ কথা উল্লেখ করে বলেছে, বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে ব্যবসায়ীদের ওপর ব্যাপক অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ব্যবসায়ীদের পক্ষে শর্তসাপেক্ষে ঋণ শ্রেণিকরণ সুবিধা গ্রহণ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য সব শ্রেণির ঋণগ্রহীতার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা জরুরি। কেননা কভিড-১৯ ও ইউক্রেন সংকট প্রভৃতি কারণে সবাই একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। দেশের আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংককে দেওয়া প্রস্তাবে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন-এফবিসিসিআই আরও বলেছে, কভিড-১৯ ও ইউক্রেন সংকটসহ প্রভৃতি কারণে বৈশি^ক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা মোকাবিলার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিগত সহায়তা প্রয়োজন। এ জন্য ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ ও পুনর্গঠনে বৃহৎ ও ক্ষুদ্র নির্বিশেষে সব শ্রেণির ঋণগ্রহীতার জন্য মেয়াদি, চলমান ও তলবি ঋণ সব ক্ষেত্রেই গ্রেস পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ মেয়াদ আট বছর নির্ধারণের অনুরোধ করেছে এফবিসিসিআই। পাশাপাশি  ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ ও পুনর্গঠনেও ন্যূনতম ডাউন পেমেন্টের হার বৃহৎ ও ক্ষুদ্র সবার জন্য একই হারে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে এফবিসিসিআই। এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কভিড পরিস্থিতিতে দেশের ব্যবসা- বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত। তারপরও সরকারের ইতিবাচক নীতিসহায়তার ফলে অর্থনীতি সচল রয়েছে। সরকার সব ধরনের ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা হিসেবে ঋণ সহায়তা দিয়েছে। এখানে ছোট বা বড় ঋণ গ্রহিতা বলে কিছু নেই। ফলে আমরা ছোট-বড় সব ব্যবসায়ীর জন্য একই ধরনের ঋণ সুবিধা চাই। এক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য যাতে না হয়, সে বিষয়টি দেখতে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করেছি। এফবিসিসিআইর এই নেতা বৈশি^ক অস্থিতিশীলতায় ব্যবসায়ীদের চাপে থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে আরও বলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার যুদ্ধের কারণে জ্বালানি খাতে সমস্যা হচ্ছে। ডিজেলের দাম বাড়ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। ফলে শিল্প-কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে সঠিকভাবে পণ্য রপ্তানি না করতে পারলে, দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আয় কমে রিজার্ভে চাপ পড়তে পারে। এ ধরনের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে নীতি সহায়তা চেয়েছে এফবিসিসিআই।  বাংলাদেশ ব্যাংককের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের কাছে গতকাল ওই চিঠি দিয়েছেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। চিঠিতে বলা হয়, কভিড-১৯-এর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ও বৈশি^ক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিগত সহায়তা অব্যাহত রাখা হোক। কভিড পরিস্থিতি ও ইউক্রেন সংকটকে বিবেচনায় নিয়ে ঋণ শ্রেণিকরণ সুবিধা শর্তসাপেক্ষে চলতি বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে ব্যবসায়ীদের ওপর ব্যাপক অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি হওয়ায় তাদের পক্ষে শর্তসাপেক্ষে ঋণ শ্রেণিকরণ সুবিধা গ্রহণ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ঋণ শ্রেণিকরণ সুবিধা গ্রহণ করতে প্রদেয় কিস্তিসমূহের ন্যূনতম পরিমাণ পরিশোধের শর্ত শিথিল করে সিএমএসএমই ও কৃষি খাতের জন্য সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ এবং বৃহৎ শিল্প খাতের জন্য সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ নির্ধারণের জন্য এফবিসিসিআই ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ জানিয়েছে। বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে বলে বিশ্বাস করছে এফবিসিসিআই। এফবিসিসিআই বলেছে, কভিড-১৯-এর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব, বৈশি^ক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা প্রভৃতিকে বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ ও পুনর্গঠন সংক্রান্ত নতুন মাস্টার সার্কুলার (বিআরপিডি-১৬) জারি করেছে। এ পদক্ষেপ বিদ্যমান সংকটময় পরিস্থিতিতে আর্থিক খাতে সুস্থিতি বজায় রাখতে নিঃসন্দেহে অত্যন্ত সহায়ক হবে। তবে এ সার্কুলারে ঋণ পুনঃতফসিলিকরণে মেয়াদি ঋণ এবং চলমান বা তলবি ঋণের ক্ষেত্রে বৃহৎ ও ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতাদের জন্য পৃথক সর্বোচ্চ মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে। এফবিসিসিআই বলেছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কভিড-১৯-এর নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় অর্থনীতির বাস্তব সমস্যাসমূহ সঠিকভাবে চিহ্নিত করে তা থেকে উত্তরণের নিমিত্তে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিতভাবে আর্থিক ও নীতি সহায়তা দিয়েছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী পলিসি সহায়তা দেওয়ায় দেশের অর্থনীতিতে কভিড-১৯ পরবর্তী ধকল সন্তোষজনকভাবে মোকাবিলা করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এফবিসিসিআইর চিঠিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ শ্রেণিকরণ সুবিধা, চলমান ঋণের ওপর আরোপিত অনাদায়ী সুদ ত্রৈমাসিক কিস্তিতে পরিশোধের সুবিধা, তলবি ঋণ ত্রৈমাসিক কিস্তিতে পরিশোধ সুবিধা প্রভৃতি কভিডকালীন অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত ও ব্যবসা-বাণিজ্যের গতিকে সমুন্নত রাখতে সহায়তা করেছে। দেশের রপ্তানি বাণিজ্য সচল রাখার স্বার্থে শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরি বাবদ সরকারি তহবিল থেকে বিশেষ প্রণোদনা প্রদান, শিল্প ও সেবা খাতে চলতি মূলধন হিসেবে ঋণ প্রদান, প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট খাতে পুনঃঅর্থায়ন স্কিম, সিএমএসএমই খাতের জন্য বিশেষ ঋণ সুবিধাসহ কৃষি খাতে চলতি মূলধন সরবরাহ, নিম্নআয়ের পেশাজীবী, কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য পুনঃঅর্থায়ন স্কিম ইত্যাদি অর্থনীতিকে সচল রাখতে অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর