রবিবার, ২১ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

হাতিরঝিল থানায় যুবকের অস্বাভাবিক মৃত্যু, বিক্ষোভ

♦ পরিবারের দাবি হত্যা, পুলিশ বলছে আত্মহত্যা ♦ দুজন বরখাস্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

হাতিরঝিল থানায় যুবকের অস্বাভাবিক মৃত্যু, বিক্ষোভ

আটক এক ব্যক্তির অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর স্বজনদের আহাজারি। হাতিরঝিল থানার সামনে বিক্ষোভ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজধানীর হাতিরঝিল থানা হেফাজতে থাকা অবস্থায় সুমন শেখ (২৫) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশের দাবি, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। এদিকে তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগ তুলে গতকাল বিকালে থানার সামনে বিক্ষোভ করেছেন স্বজনরা। এতে বিকাল ৫টায় হাতিরঝিল থানার সামনের সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ কয়েক দফায় বিক্ষুব্ধদের সরানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। বিক্ষোভে আইনজীবীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ যোগ দেয়। গত রাত ৮টা পর্যন্ত থানার সামনে বিক্ষোভ চলছিল। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সুমনের বাড়ি ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণকান্দি গ্রামে। এর আগে গতকাল বিকালে তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। থানা হেফাজতে আসামির মৃত্যুর ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। বরখাস্ত পুলিশ সদস্যরা হলেন- হাতিরঝিল থানার ডিউটি অফিসার এসআই হেমায়েত হোসেন ও কনস্টেবল মো. জাকারিয়া।

গত রাতে হাতিরঝিল থানায় সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক। বিক্ষোভের সময় থানার সামনে আহাজারি করতে থাকেন সুমনের স্ত্রী জান্নাত আরা। তিনি গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেন, রামপুরা টিভি সেন্টারের পাশে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন সুমন। সেখানে চুরির অভিযোগে তাকে মারধর করা হয়। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ তাকে থানায় আনার সময় মারধর করেছে। এরপর থানা হাজতে নির্যাতনে সুমনের মৃত্যু হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, যুবলীগের কর্মী পরিচয়ে বেশ কয়েকজন যুবক বিক্ষোভকারীদের থানার সামনে থেকে সরে যেতে বলেন। তবে সুমনের মৃত্যুর বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের কর্মকর্তারা। থানাসূত্র বলছেন, উনি থানা হাজতের ভিতরে গ্রিলের সঙ্গে ঝুলে মারা গেছেন। থানার সিসিটিভি ফুটেজে এ বিষয়টি দেখা গেছে। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, সুমন ইউনিলিভারের পিউরিট কোম্পানিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। এরপর তার বিরুদ্ধে কয়েক লাখ টাকা চুরির অভিযোগ তুলে কোম্পানি তার বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় মামলা করে। মামলার পর শুক্রবার একটি পারিবারিক অনুষ্ঠান থেকে তাকে ধরে নিয়ে আসা হয়। পুলিশ বলছে, মাঝরাতে তিনি মারা গেছেন। তাহলে প্রশ্ন হলো, দিন গড়িয়ে দুপুর পার হলেও পুলিশ কেন তার মৃত্যুর বিষয়টি স্বজনদের জানাল না?

হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রশিদ জানান, সুমন একটি কোম্পানির ৫৩ লাখ টাকা চুরি মামলার আসামি। তার কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে থানার ভিতরে ভেন্টিলেটরের রডের সঙ্গে সুমন নিজের ট্রাউজার খুলে গলায় পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন। যা থানার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে। সুমন শেখের ভাইয়ের শ্যালক সোহেল আহম্মেদ জানিয়েছেন, শুক্রবার রামপুরা মহানগর প্রজেক্টের বাসা থেকে বিকাল ৪টায় পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে আসে। পুলিশ তখন বলে ১৩ আগস্ট সুমন চুরি করেন। ওই ঘটনায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর