রাজধানীসহ সারা দেশে গতকাল বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিএনপি। রাজধানীর নয়াপল্টনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ভালোয় ভালোয় সরে পড়েন। নইলে জনগণ জানে কীভাবে সরাতে হয়। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের দেশ শাসনের আর কোনো অধিকার নেই। তাই অবিলম্বে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। বিকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সারা দেশে ধরপাকড়, মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার, জামিন বাতিল করে নেতা-কর্মীদের কারাগারে প্রেরণ, পুলিশি হামলা ও ‘আওয়ামী সন্ত্রাসী’দের নির্যাতনের প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি দেয় দলটি। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আমান উল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভুইয়া, জয়নুল আবদিন ফারুক, নাজিম উদ্দিন আলম, মীর সরাফত আলী সপু, তাবিথ আউয়াল, সাইফুল আলম নীরব, হাসান জাফির তুহিন, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আবদুল মোনায়েম মুন্না, এস এম জিলানী, রাজীব আহসান, হেলেন জেরিন খান, সাদেক আহমেদ খান, আবুল কালাম আজাদ, আবদুর রহিম, হুমায়ূন কবির খান, জাকির হোসেন রোকন, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন রফিকুল আলম মজনু ও আমিনুল হক। বেলা ২টায় সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের আগেই খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন ঢাকা মহানগরীর থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। কয়েক হাজার নেতা-কর্মী সমাবেশে জড়ো হওয়ায় ফকিরাপুল মোড় থেকে কাকরাইলের নাইটিংগেল মোড় পর্যন্ত সড়কের দক্ষিণ দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের চলমান আন্দোলনের মূল লক্ষ্য এই সরকারের গণবিরোধী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে আমাদের আন্দোলন। সারা দেশে বিভিন্ন স্থানে নেতা-কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলন। আমরা বলতে চাই আমাদের যেসব সহযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন তাদের রক্ত ও আত্মত্যাগ কখনো বৃথা যাবে না। আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগ চাই। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, অবিলম্বে মিথ্যা মামলা ও গুলি করে মানুষ হত্যা বন্ধ করেন। সাধারণ মানুষের মনের ভাষা বুঝতে শিখুন। তিনি বলেন, সরকার সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বিদ্যুৎ আছে, পাবেন। কিন্তু আমাদের তো চলে না। দিনে পাঁচ-ছয় বার লোডশেডিং হয়। মানুষ অতিষ্ঠ। দেশের কলকারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম। কলকারখানা বন্ধ হলে লাখ লাখ কর্মী বেকার হবে। আজকে তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের অবসরে পাঠাচ্ছে। আমান উল্লাহ আমান বলেন, যেখানেই বাধা সেখানেই সমাবেশ। ১০ ডিসেম্বর ঢাকা হবে সমাবেশের শহর। সরকার কত বাধা দেবে? হাসিনা সরকারের দিন শেষ। পুলিশ ও প্রশাসনকে বলব- আপনারা নিরপেক্ষ থাকুন। শেখ হাসিনার অধীনে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না এবং হতে দেওয়া হবে না। সভাপতির বক্তব্যে আবদুস সালাম বলেন, খেলা শুরু হয়ে গেছে। আর আওয়ামী লীগ হাবুডুবু খাচ্ছে। তারা লেজ গুটিয়ে দৌড় দিয়েছে। আমরা অনেক সহ্য করেছি আর নয়। আমরা যে কোনো ত্যাগ শিকারে প্রস্তুত।
দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশের খবর পাঠিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধিরা-
ঝালকাঠি : ঝালকাঠিতে পুলিশের লাঠিচার্জে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল প- হয়ে যায়। এর আগে বিকাল ৩টায় জেলা কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শাহাদাৎ হোসেন, সদর উপজেলার সভাপতি প্রফেসর এজাজ হাসান, পৌর বিএনপির সাভাপতি অ্যাডভোকেট নাসিমুল হাসান, মিজানুর রহমান মুবিন প্রমুখ। প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের ধস্তাধস্তি হয়। পুলিশের লাঠিচার্জ ও মারমুখী আচরণে বিক্ষোভ মিছিল প- হয়ে যায়।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সমাবেশে বক্তব্য দেন মহনগরের আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, এম এ আজিজ, মোহাম্মদ মিয়া ভোলা, অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার, এস এম সাইফুল আলম, এস কে খোদা তোতন, নাজিমুর রহমান, শফিকুর রহমান স্বপন, কাজী বেলাল উদ্দিন, আবদুল মান্নান, মো. কামরুল ইসলাম, মহিলা দলের জেলী চৌধুরী প্রমুখ।
বরিশাল : সকাল ১১টায় নগরীর সদর রোডের দলীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুকের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবিরের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলী হায়দার বাবুল, যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান টিপু ও কে এম শহিদুল্লাহ সহিদ এবং মহানগর যুবদলের সভাপতি আক্তারুজ্জামান শামীম প্রমুখ।
নোয়াখালী : নোয়াখালীতে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন- এ সরকার ক্ষমতায় থাকলে আগামীতে দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। তাই এ সরকারের পতন ঘটাতেই হবে। বিকালে জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে নোয়াখালী প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার বিএসসি সভাপতিত্ব করেন। জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট এ বি এম জাকারিয়া, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।