রবিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা
ঢাকায় আওয়ামী লীগ রংপুরে বিএনপির শোডাউন

গোটা দেশ গিলে খেতে চায় সরকার : ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

গোটা দেশ গিলে খেতে চায় সরকার : ফখরুল

রংপুরে সমাবেশ :- রংপুর শহরের কালেক্টরেট মাঠে গতকাল গণসমাবেশ করে বিএনপি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বিএনপির গণসমাবেশ ঘিরে গতকাল শোডাউনের নগরীতে পরিণত হয় বিভাগীয় শহর রংপুর। বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে জড়ো হন। বিভাগের আট জেলা ছাড়াও উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য জেলা থেকেও নেতা-কর্মীরা যোগ দেন। সমাবেশস্থল ঐতিহাসিক কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠসহ আশপাশের এলাকা বিএনপি নেতা-কর্মীদের দখলে চলে যায়।

রংপুরে কৃষক বিদ্রোহের নেতা নুরুলদ্দিনের ঐতিহাসিক ‘জাগো বাহে কোনঠে সগায়’-স্লোগান দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিভাগীয় গণসমাবেশে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে বলেছেন, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। জাতীয়  সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে।

গতকাল সকালে রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে অংশ নিতে নগরীতে লাঠি হাতে শোডাউন করতে দেখা গেছে একদল নেতা-কর্মীকে। লালমনিরহাট থেকে আসা নেতা-কর্মীদের একটি শোডাউনে দেখা গেছে প্রায় প্রত্যেকের হাতে  লাঠি। জাতীয় পতাকা ও ধানের শীষের সঙ্গে বড় বড় লাঠি রয়েছে। প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিয়ে সমাবেশে এসেছেন বলে জানিয়েছেন অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীরা। সাইফুল ইসলাম নামে বিএনপির এক কর্মী বলেন, আমাদের কেউ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে আমি যাতে প্রতিহত করতে পারি এ জন্য লাঠি নিয়ে এসেছি। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতা-কর্মীরা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া সম্বলিত ব্যানার-পোস্টার নিয়ে মিছিল করে শোডাউন করেন। নগরীর প্রবেশপথ মডার্ন মোড়, সাতমাথা, মেডিকেল মোড়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। নগরীতে কোনো যানবাহন ছাড়াও অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ঢুকতে দেয়নি।   বিভিন্ন জেলা থেকে নেতা-কর্মীরা হেঁটে সমাবেশস্থলে আসেন।

শুক্রবার রাত ১০টার দিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সমাবেশ মঞ্চে যান। এ সময় তিনি মঞ্চ থেকে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে হাত নেড়ে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান। গতকাল বিকালে বিএনপির গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে গতকাল সকাল থেকে নগরীর দেওয়ানবাড়ী রোডে মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিউর রহমান সফি ও সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডলের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। বিএনপি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করলে কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু সমাবেশের নামে বিশৃঙ্খলা করা হলে বিএনপিকে ছাড় দেওয়া হবে না।

বিএনপির গণসমাবেশ গতকাল বেলা আড়াইটায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও প্রায় দুই ঘণ্টা আগে শুরু হয়। এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্য একটি চেয়ার খালি রাখা হয়। নিত্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং বিভিন্ন স্থানে গুলিতে দলের নেতা-কর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদসহ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে দেশব্যাপী বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশ করছে বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল রংপুরে তাদের চতুর্থ বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। রংপুরের ঐতিহাসিক কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য। সেই অধিকার এখনো আদায় হয়নি। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যে বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন, তা গড়তে হলে বাংলাদেশকে আবার স্বাধীন করতে হবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াতে চেয়ে আওয়ামী লীগ এখন ৯০ টাকায় চাল খাওয়াচ্ছে। চিনির দামও বেড়েছে। শাক-সবজিও মানুষ কিনতে পারছে না। এটা দুর্ভিক্ষের লক্ষণ। মির্জা ফখরুল নাট্যকার মুনতাসীর মামুুনের নাটকের একটি উদাহরণ টেনে বলেন, ওই নাটকের মূল চরিত্র ছিল খাওয়া। এ সরকারের চরিত্র সেই ধরনের। তিনি বলেন, রংপুরে ঐতিহ্য রয়েছে। এখানে কৃষক বিদ্রোহ হয়েছে। প্রজা বিদ্রোহ হয়েছে। সন্ন্যাস বিদ্রোহ হয়েছে। আজকের সমাবেশ দেখে মনে হচ্ছে, এ অঞ্চলের মানুষ বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে। তাই নুরুলদ্দিনের মতো আবার সবাইকে ডাক দিতে হবে- ‘কোনঠে বাহে জাগো সগাই’।

তিনি সরকারের সমালোচনা করে বলেন, এ সরকার কাউকে কথা বলতে দেয় না। ভোট চাইতে দেয় না। তিনি বলেন, এ সমাবেশকে সফল করতে তিন দিন থেকে মানুষ রংপুরে অবস্থান করছে। একটি গোডাউনে গিয়ে দেখেছি, তারা চিড়া-মুড়ি নিয়ে অন্ধকার ঘরে  নিদারুণ কষ্ট করে রয়েছে সমাবেশে এসে।

মির্জা ফখরুল বলেন, এ সরকার বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ৩৫ লাখ মামলা দিয়েছে। ৬০০ নেতা-কর্মীকে গুম করেছে। সহস্রাধিক মানুষকে হত্যা করেছে। যারা গুম হয়েছেন তারা কেউ ফিরে আসেননি। মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। এ সরকার দেশ ও দেশের মানুষকে ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশের ৪২ শতাংশ মানুষ এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছেন। তিনি বলেন, বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাস করে না, জঙ্গিবাদেও জড়ায় না। বরং আওয়ামী লীগই অগ্নিসন্ত্রাস করেছে। মির্জা ফখরুল বলেন, এ সমাবেশের উদ্দেশ্য  হচ্ছে- ১৫ বছরের বঞ্চনার অবসান ঘটানো। সরকার দেশটাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। তাই সমাবেশ থেকে এক দাবি- শেখ হাসিনা কবে যাবে। কবে পদত্যাগ করবে। কারণ, গত ১৫ বছরে শুধু চুরি হয়েছে। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পাওয়া, ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ থেকে আরম্ভ করে সব জায়গায় ঘুষ ছাড়া কিছুই হয় না। 

তিনি বলেন, সরকার নাকি জনগণকে ভয় পায় না। তাহলে সমাবেশের আগে গাড়ি বন্ধ করলেন কেন। নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হচ্ছে কেন।

তিনি বলেন, এ সমাবেশের দিকে শুধু দেশ নয়, সারা বিশ্ব মিডিয়া তাকিয়ে রয়েছে। এ সমাবেশ থেকে শুরু হলো সরকারের পদত্যাগের সংগ্রাম।

মহানগর বিএনপির সভাপতি সামসুজ্জামান সামুর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ, যুগ্ম মহাসচিব হারুন উর রশিদ, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সমাবেশের প্রধান সমন্বয়কারী আসাদুল হাবিব (দুলু), সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল খালেক, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী, কৃষক দলের মহাসচিব শহিদুল ইসলাম (বাবুল), ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনোকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মোহাম্মদ জুয়েল প্রমুখ। যুবদল নেতার মৃত্যু : বিএনপির রংপুর বিভাগীয় গণসমাবেশে এসে মারা গেছেন দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান (৪৫)। গতকাল বিকালে সমাবেশস্থলে তিনি মারা যান। কাহারোল উপজেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম মোস্তফা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন- অসুস্থ হয়ে তিনি মারা যান।

সর্বশেষ খবর