বুধবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

সীমান্তে মাদক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে কারা

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

সীমান্তে মাদক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে কারা

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় চলছে মাদক মাফিয়াদের রাজত্ব। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে অর্ধশতাধিক ইয়াবা কারখানায় তৈরি হওয়া ইয়াবা বান্দরবান এবং কক্সবাজারের বিভিন্ন পয়েন্ট হয়ে ঢুকছে দেশে। এরই মধ্যে মিয়ানমারের সীমান্তে ৩৭ ইয়াবা কারখানা ও মাদক মাফিয়াকে শনাক্ত করেছে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর বিভিন্ন বৈঠকে মিয়ানমারের সেন্ট্রাল কমিটি ফর ড্রাগ অ্যাবিউজ কন্ট্রোলের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে উল্টো মাদক মাফিয়াদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে মিয়ানমার সরকার। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত উপপরিচালক মজিবুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘মিয়ানমারের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠকে সীমান্ত এলাকায় ইয়াবা কারখানাগুলো ধ্বংসের জন্য অনুরোধ করা হয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। তারাও আমাদের বিষয়টা গুরুত্বসহকারে দেখার আশ্বাস দেন প্রত্যেকবার। আশা করছি মিয়ানমারের সেন্ট্রাল কমিটি ফর ড্রাগ অ্যাবিউজ কন্ট্রোল এ বিষয়ে আন্তরিক হবে।’

মাদকনিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বাংলাদেশের মাদকনিয়ন্ত্রণ অধিদফতর এবং মিয়ানমারের সেন্ট্রাল কমিটি ফর ড্রাগ অ্যাবিউজ কন্ট্রোলের মহাপরিচালক পর্যায়ের গত ডিসেম্বরের বৈঠকে মাদক কারবার নিয়ে তথ্য বিনিময়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর পরই মিয়ানমারের ইয়াবা কারখানা এবং ব্যবসায়ীদের তালিকা পাঠায় বাংলাদেশ। যাতে ৩৭টি ইয়াবা কারখানার নাম-ঠিকানা এবং নিয়ন্ত্রণকারীদের নাম উল্লেখ করা হয়। মিয়ানমারের কাছে সুনির্দিষ্ট তালিকা পাঠানোর পরও কার্যত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি মিয়ানমার। উল্টো মিয়ানমার সরকারের পৃষ্টপোষকতায় সীমান্ত এলাকায় অপ্রতিরোধী হয়ে উঠেছে মাদক মাফিয়ারা। অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ-লাগোয়া মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় ইয়াবা তৈরির কারখানা রয়েছে অর্ধ শতাধিক। মিয়ানমারের রাখাইন, মংডু ও শান এলাকার এসব কারখানা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী, কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন এবং আন্তর্জাতিক ড্রাগ সিন্ডিকেট। যার মধ্যে ৩৭টি কারখানার সুনির্দিষ্ট অবস্থান চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশি একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। এর মধ্যে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নবাদী সংগঠন কাচিন ডিফেন্স আর্মির (কেডিআই) নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ১০টি ইয়াবা কারখানার। এ সংগঠনের নিয়ন্ত্রিত কুখাই এলাকায় পানসাই খেও মেও ইয়াং মৌলিয়ানের অধীনে নামখামে এলাকায় দুটি, হো স্পেশাল পিলিস জে হোলি ট্রাক্টের অধীনে কুনলং এলাকায় একটি, মং মিলিটা শান স্টেট আর্মির (নর্থ) ১ নম্বর ব্যারিকেড ট্যানগিয়ান এলাকায় একটি এবং আনজু গ্রুপের একটি কারখানা আছে। শান ন্যাশনালিটিজ পিপল লিবারেশন (এসএনপিএল) বাহিনীর নামজাং এলাকায় দুটি, একই বাহিনীর মাহাজা ও হোমোং এলাকায় দুটি, ইউনাইটেড ?উই স্টেট আর্মি (ইউডব্লিউএসএ) বাহিনীর মংটন এলাকায় তিনটি, একই বাহিনীর মংসাত এলাকায় আরও দুটি এবং ত্যাছিলেক এলাকায় তিনটি এবং মংইয়াং এলাকায় চারটি কারখানা, পাংসাং এলাকায় আরও দুটি কারখানা রয়েছে। শান ন্যাশনাল পিপল আর্মির মওখামি এলাকায় দুটি এবং মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মির (এমএনডিএ) কোকান এলাকায় একটি ইয়াবা তৈরির কারখানা রয়েছে। রাখাইন এবং মংডুতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রিত মাদক সিন্ডিকেটের কয়েকটি ইয়াবা তৈরির কারখানা রয়েছে। সীমান্ত এলাকায় ইয়াবার নিয়ন্ত্রণ করেন কমপক্ষে অর্ধশত মাদক ডন। তাদের মধ্যে রয়েছে বাদগাজুবিলিং এলাকার নূর, গুনাপাড়া এলাকার হারুন, সুদাপাড়া এলাকার আলী জহুর, ফাইজাপাড়া এলাকার সৈয়দ করীম, গুনাপাড়া এলাকার জায়ার, মংডুর আকিয়াব এলাকার সাঈদ, মংগোলা এলাকার আলম, গাজুবিল এলাকার কালাসোনা, মহিবউল্লাহ, দইলাপাড়া এলাকার আবদুর রশীদ, নূরুল ইসলাম ও শাফি অন্যতম। এক সময় মাদকের রাজধানী হিসেবে পরিচিত কক্সবাজারের টেকনাফ দিয়ে দেশে ইয়াবা প্রবেশ করলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কড়াকড়ির কারণে রুট পরিবর্তন করেছে মাফিয়ারা। তারা এখন বান্দরবন দিয়েই ইয়াবা নিয়ে আসছে দেশে। সবচেয়ে বেশি ইয়াবা আসছে জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে। এ উপজেলার কমপক্ষে ১৫টি পয়েন্ট দিয়ে পাচার হচ্ছে ইয়াবা। জেলার বৈদ্যছড়া বাজার, গর্জনবনিয়া, সোনাইছড়ি হেডম্যানপাড়া, লামারপাড়া, চাকঢালা বাজার, আশারতলী ব্রিজ, আমতলী মাঠ, নাইক্ষ্যংছড়ি থানা মোড়, উপজেলা পরিষদ চত্বর, সোনাইছড়ি বটতলী, নাইক্ষ্যংছড়ি মসজিদঘোনা, বিছামারা, রূপনগর, জারুলিয়াছিড়, কচ্ছপিয়ার তুলাতলী স্টিল ব্রিজ, সিকদারপাড়া-শাহ সুজা সড়ক, মৌলভীর কাটা, তিতারপাড়া, রামুর বাইপাস, রাবারবাগান আসছে ইয়াবা ঢল।

সর্বশেষ খবর