সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

কার্যালয়ে তল্লাশিতে অর্ধকোটি টাকার ক্ষতি : মোশাররফ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশি তল্লাশির ঘটনায় নগদ অর্থসহ অর্ধকোটি টাকার বেশি সম্পদ ক্ষতি ও লুট হয়েছে। গতকাল রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মলনে এ অভিযোগ করেন তিনি। ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এর সঙ্গে জড়িত পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্যদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার দাবি করেন মোশাররফ। একই সঙ্গে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ গ্রেফতার নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি ও সব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশি তল্লাশির ঘটনা তুলে ধরে খন্দকার মোশাররফ বলেন, এ ঘটনায় নগদ অর্থসহ ক্ষতি ও লুট হওয়া সম্পদের পরিমাণ আনুমানিক ৫০ লাখ ৮২ হাজার ৫০০ টাকা। তিনি বলেন, কোনো অফিস বা গৃহ তল্লাশির সময় মালিকপক্ষ এবং নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের সাক্ষী হিসেবে রাখার সাধারণ আইন অগ্রাহ্য করে পুলিশ যা করেছে তা হানাদার বাহিনীর আচরণকে স্মরণ করিয়ে দেয়। মোশাররফ বলেন, পুলিশ তাদের মামলায় বলেছে, বিএনপির নেতা-কর্মীরা নাকি ইট-পাথর, বাঁশের লাঠি ও ককটেল নিয়ে তাদের ওপর আক্রমণ করেছে। বিপুল ও মারাত্মক সব আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত কয়েক হাজার পুলিশকে ইট-পাথর, বাঁশের লাঠি ও তাদের ভাষায় ককটেল দিয়ে আক্রমণ করার মতো হাস্যকর অভিযোগ জনগণ বিশ্বাস করে না। ড. মোশাররফ বলেন, পুলিশের এজাহারেই বলা হয়েছে তারা ৭ ডিসেম্বর বিকালে মোট ১৭৯টি টিয়ার শেল ও ৪৬০টি শটগানের গুলি ছুড়েছে এবং ছয়টি সাউন্ড বোমা নিক্ষেপ করেছে। প্রকৃতপক্ষে এ সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, এর বিপরীতে তাদের ওপর আক্রমণকারী বিএনপি নেতা-কর্মীদের ব্যবহৃত অস্ত্র হিসেবে আলামত দেখানো হয়েছে ফুটপাত ও রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পাওয়া পাঁচ বস্তা ইটের টুকরা, যা শহরের যে কোনো সড়ক থেকে যে কোনো সময় সংগ্রহ করা যায়, ৮০টি বাঁশের লাঠি, যা শহরের বহু স্থানে প্রকাশ্যে বিক্রির জন্য রাখা হয় ও লাল টেপে মোড়ানো কথিত ককটেলের ভগ্নাংশ, যা ব্যবহৃত টিয়ার গ্যাসের শেল কিংবা পথের আবর্জনারও অংশ হতে পারে। এমন অসম যুদ্ধের বিবরণ ছোটদের গল্প কিংবা স্বৈরাচারী শাসকদের প্রেস নোটেই শুধু দেখা যায়। তিনি বলেন, তথাকথিত ক্রসফায়ারের গল্পের মতো এসব গল্প এখন শুধুই কৌতুকের খোরাক এবং অক্ষমের আর্তনাদ। ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, দলের মহাসচিবকে অফিসের নিচে বসিয়ে রেখে এবং দলের অন্য নেতাদের কয়েকটি কক্ষে আটকে রেখে অসংখ্য টিয়ার শেল, গুলি, সাউন্ড বোমা নিক্ষেপ করে গোটা এলাকাকে রণক্ষেত্র বানিয়ে পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তা ও সদস্য দলীয় কর্মীর মতো সাদা ব্যাগে করে নিজেরাই ককটেল নিয়ে মহাসচিব ও জাসাস কার্যালয়ের টয়লেটে ১৫টি ককটেল রেখে তা উদ্ধারের যে নাটক করেছে তা মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে দিবালোকের মতো পরিষ্কার হয়েছে। বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, অফিস থেকে ল্যাপটপ, কম্পিউটার, হার্ডডিস্ক, নথিপত্র, ব্যাংকের কাগজপত্র, নগদ অর্থ লুট করা প্রকৃতপক্ষে একটি ডাকাতির ঘটনা। তিনি বলেন, ৭ ডিসেম্বর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশি হামলার পর পুলিশের ছত্রছায়ায় ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা কার্যালয়ে ঢুকে বিভিন্ন কক্ষ ভাঙচুর ও মালামাল লুটে অংশ নেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। এ ঘটনার পর সারা দেশে এখন পর্যন্ত ১৩০০ নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব ঘটনা জনগণের তীব্র ঘৃণা ও অনাস্থার শিকার পতনোন্মুখ সরকারের স্বৈরাচারী কায়দায় টিকে থাকার ব্যর্থ প্রয়াস বলেই দেশবাসী মনে করে। সংবাদ সম্মেলনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর