পঞ্চগড়ে বিএনপি ও পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচটি মামলা করেছে পুলিশ। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাহিরুল ইসলাম কাচ্চু, সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেনসহ ৮১ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন আটজন।
এদিকে বিএনপি-পুলিশের সংঘর্ষের সময় নিহত বিএনপি নেতা আবদুর রশিদ আরেফিনের লাশ ময়নাতদন্তের পর গতকাল দুপুরে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বিকাল সাড়ে ৪টায় পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার ময়দানদিঘি ইউনিয়নের হরিপুর জোতদেবীকান্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এছাড়া পঞ্চগড়ে গণমিছিলে গুলিতে নিহত বিএনপি নেতা আবদুর রশিদ আরেফিনের গায়েবানা জানাজা হয়েছে রাজধানীসহ সারা দেশে। গতকাল বাদ আসর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ জানাজা নামাজে বিএনপির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। এতে ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা এবং সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন। জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। পরে মরহুমের রূহের শান্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, পঞ্চগড় সদর থানায় গতকাল দায়ের হওয়া মামলাগুলোতে বিএনপি-জামায়াত নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা প্রদান, পুলিশের ওপর বল প্রয়োগ, সড়ক অবরোধ, জানমালের ক্ষয়ক্ষতি, হামলা, ভাঙচুর এবং ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগ আনা হয়েছে। এরই মধ্যে শনিবার রাতে অভিযান চালিয়ে বিএনপি-জামায়াতের আট নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। পরে তাদের ওই ৫ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মোস্তফা কানন (২৮), আকতারুজ্জামান আতা (৪৫), সিদ্দিকুল ইসলাম (৩৫), মেহেদি হাসান তুহিন (৩৫), রেজাউল ইসলাম (৪৫), রাজু আহমেদ (২৮), জয়নাল আবেদিন (৪০) ও সাইফুল ইসলাম (৬৫)। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল লতিফ মিঞা।
এদিকে আবদুর রশিদ আরেফিনের জানাজায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন নেতাসহ জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা জানাজায় অংশ নেন। আবদুর রশিদ আরেফিনের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মাহি বলেন, ‘প্রশাসনের কাছে বিচার চেয়ে লাভ নেই। এদেশে মানুষ মরছে আরও মারা যাবে। আমার বাবাকে যারা হত্যা করেছে আমি তাদের বিচার চাই।’
পঞ্চগড় পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা বলেন, ‘বিএনপি নেতারা পুলিশের ওপর হামলা ও ভাঙচুর করেছে। যানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করতে বাধ্য হয়। এ ঘটনায় পাঁচটি মামলা হয়েছে।’
এদিকে কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার পঞ্চগড়ে বিএনপির গণমিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান আবদুর রশিদ আরেফিন। পুলিশের গুলিতে তার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ বিএনপির। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরও তাকে পুলিশ লাঠিপেটা করে বলেও অভিযোগ করেছে দলটি। তবে পুলিশের দাবি, ওই ব্যক্তি হৃদরোগ ও স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। নিহত আবদুর রশিদ পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার ময়দানদিঘি ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। তার মৃত্যুতে গতকাল সারা দেশে জেলা ও মহানগরে বিএনপি গায়েবানা জানাজার আয়োজন করে।
নয়াপল্টনে অনুষ্ঠিত গায়েবানা জানাজা নামাজে- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, বরকতউল্লা বুলু, অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আযম খান প্রমুখ অংশ নেন।
নোয়াখালীতে ৫৩৬ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা: নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, বিশেষ ক্ষমতা আইনে বিএনপি ও জামায়াতের প্রায় ৫৩৬ নেতা-কর্মির বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। শনিবার রাতে সুধারাম মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মোজাম্মেল বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে এ মামলাটি করেন।
সুধারাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, শনিবার সকাল ৯টার দিকে জেলা শহর মাইজদীতে জামায়াতের গণমিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে এই মামলা করা হয়। মামলায় ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করা হয়। এরমধ্যে ১৯ জন জামায়াতের নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান বলেন, ‘গতকাল আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছি। পুলিশের সঙ্গে কোনো সংঘর্ষ হয়নি।’