শিরোনাম
বুধবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

এমন চললে আইন আদালত থাকবে না

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনা নিয়ে হাই কোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুককে গালিগালাজ ও অশালীন আচরণের ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন হাই কোর্ট। আদালত বলেছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিচারকের সঙ্গে আইনজীবীরা যে আচরণ করেছেন তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এ ধরনের ঘটনা অব্যাহত থাকলে আইন-আদালত বলে কিছু থাকবে না। গতকাল বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। এ সময় আইনজীবী নেতাদের উদ্দেশে হাই কোর্ট বলেন, ‘কেউ কোনো কোর্ট বর্জন করবেন না। সবাই মিলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আগুন থামান। অন্যথায় আমাদের সবাইকে জ্বলতে হবে।’ এদিন শুনানির শুরুতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বার নেতাদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, ‘আদালত অবমাননার ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য আমরা দুই মাস সময় প্রার্থনা করছি।’ আদালত বলেন, ‘আপনারা কি কনটেস্ট করতে চাইছেন?’ উত্তরে আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, ‘আমরা ব্যাখ্যা দেব বলে সময় প্রার্থনা করছি।’ আদালত বলেন, ‘আদালত অবমাননার রুল জারির পর থেকে এ বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নজির দেখেছি, পড়েছি। পৃথিবীর কোথাও আদালত কক্ষে এ রকম ঘটনা ঘটেনি। সভ্যতাবিবর্জিত ঘটনা এটি। আমরা কোন দিকে যাচ্ছি সেটা আমাদের সবার ভাবার বিষয়।’ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বার সভাপতিকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, ‘আপনি তো শুধু আইনজীবী নন। আপনি আইনজীবীদের নেতা। মানুষ যখন বড় পদে যায়, তখন আরও বিনয়ী হয়। তার দায়িত্ব বেড়ে যায়।’ হাই কোর্ট বলেন, ‘আদালত তো শক্তি প্রদর্শনের জায়গা নয়। শুধু ভোটের চিন্তা করবেন না। আমাদের সবার ইমেজের বিষয়। আদালতকে অসম্মান করতে থাকলে এটা কারও জন্য শুভ হবে না। আদালতকে সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। তাহলে আপনারা সম্মান পাবেন। আদালত না থাকলে আপনারাও থাকবেন না।’ অনেকে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে বলেও মন্তব্য করেন আদালত। এ সময় সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য সময় আবেদন করেন। তখন আদালত বলেন, ‘আমরা সময় দিতে পারি; তবে আপনারা পরিস্থিতি কুল ডাউন করুন। কোনো কোর্ট বর্জন করবেন না।’ এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সম্পাদক আবদুন নুর দুলাল, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা ও অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জরুল হক আদালতকে বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছি। কাজ শুরু করেছি। আমাদের সময় দিন।’ পরে আদালত সময় আবেদন গ্রহণ করে পরবর্তী শুনানির জন্য ১৪ ফেব্রুয়ারি দিন নির্ধারণ করে দেন। শুনানির পুরো সময় এজলাস কক্ষে দাঁড়িয়ে ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট তানভীর আহমেদ ভূঞা, সম্পাদক (প্রশাসন) অ্যাডভোকেট মো. আক্কাস আলী ও অ্যাডভোকেট জুবায়ের ইসলাম। আরও উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রাব্বানী, সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের কর্মকর্তারা। ৫ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুককে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও অশালীন আচরণের ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট তানভীর আহমেদ ভূঞা, সম্পাদক (প্রশাসন) অ্যাডভোকেট মো. আক্কাস আলী ও অ্যাডভোকেট জুবায়ের ইসলামকে তলব করেন হাই কোর্ট। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার দায়ে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।

সর্বশেষ খবর