আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মহান স্বাধীনতা দিবসের দিন প্রথম আলোর প্রকাশ করা প্রতিবেদনটি ভুল নয়, ফৌজদারি অপরাধ। অনেকে বলেছেন, ‘এটা তাদের একটা ভুল। আমি তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, স্বাধীনতা দিবস বাঙালি জাতির ৫২ বছরের অর্জন, এ দিনের মর্যাদা নিয়ে তামাশা করা সাধারণ ভুল নয়। একটি ফৌজদারি অপরাধ।’ গতকাল সকালে রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে দলটির প্রেসিডিয়াম-সম্পাদকম-লীর সদস্য এবং ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের যৌথ সভায় ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রথম আলো তাদের নিজস্ব প্রভুদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য জাতির সামনে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে তরুণসমাজের মনে হতাশা ও ক্ষোভ সৃষ্টির জন্য উসকানি দেওয়ার অপচেষ্টা করেছে। যৌথ সভায় আওয়ামী লীগের ড. আবদুর রাজ্জাক, শাহজাহান খান, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সিমিন হোসেন রিমি, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আহমদ হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, প্রকৌশলী আবদুস সবুর, আবদুস সোবহান গোলাপ, আমিনুল ইসলাম আমিন, সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম, সায়েম খান, সাহাবুদ্দিন ফরাজী, আনোয়ার হোসেন, আনিসুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ ও ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা এতে উপস্থিত ছিলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে কয়েক মাস আমাদের দেশের পত্রিকায়, টক শোতে কথা বলেছে। এ জন্য সরকার কি একজনের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিয়েছে? তাহলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে রিপোর্ট করার জন্য এই সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে, এটা কেন বলা হচ্ছে? সাংবাদিকরা আমাদের শত্রু নয়। কিন্তু প্রথম আলো আমাদের সঙ্গে শত্রুতা করছে। বিএনপিকে আমরা ভাবী প্রতিপক্ষ, বিএনপি আমাদের ভাবে শত্রু।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রথম আলো আর বিএনপি একজন আরেকজনকে সাপ্লিমেন্টরি করে। টার্গেট হচ্ছে সরকার। টার্গেট শেখ হাসিনা, টার্গেট গণতন্ত্র, টার্গেট আগামী নির্বাচন ভ-ুল করা। প্রথম আলো এজেন্ডা নিয়ে মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা তুলে ধরে রিপোর্ট করা শুরু করেছে। নেতাদের ধরছে, এমপিদের ধরছে, এভাবে তারা মন্ত্রণালয়কে ধরছে। একেক দিন একেক মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করবে এমন এজেন্ডা তাদের রয়েছে। মন্ত্রণালয়কে ব্যর্থ প্রমাণ করে রিপোর্ট করছে।
বিএনপিকে সাধু বানানোর দায়িত্ব প্রথম আলো নিয়েছে : ওবায়দুল কাদের বলেন, আর একই সঙ্গে প্রথম আলোর এই রিপোর্ট সাপলিমেন্ট করছেন মির্জা ফখরুল। মির্জা ফখরুল ওই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করছেন। এভাবে তারা আজকে একটি জনপ্রিয় সরকারকে হেয় প্রতিপন্ন করতে, বিশ্বসমাজে খাটো করতে, জনবিচ্ছিন্ন করতে, বন্ধুরাষ্ট্রগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হেন কোনো অতৎপরতা নেই, যা বিএনপি নামক দল এবং প্রথম আলো নামক পত্রিকাটি করছে না। সেতুমন্ত্রী বলেন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্টের ক্রিমিনাল চার্জ ইনভেস্টিগেশন হচ্ছে। তিনি গ্রেফতারও হতে পারেন। তাহলে দশ টাকার বিনিময়ে শিশুকে দিয়ে যে ঘটনা ঘটিয়েছে, এটা কি শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয়? এ অপরাধ কি ক্ষমার যোগ্য? ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসেছে এটা এর চেয়েও জঘন্য!
দিনমজুরের বক্তব্য নাকি, প্রথম আলোর বয়ান তা ভাবার সময় এসেছে : স্বাধীনতা দিবসে সমালোচিত সংবাদ ও শিরোনামকে মিথ, বানোয়াট, ষড়যন্ত্র ও দুরভিসন্ধিমূলক অভিহিত করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, এটা সাংবাদিকতার নীতিমালার চরম অপমান। প্রথম আলোর সংবাদটি যে ভাষায় একটি দিনমজুরের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশ করেছে, এটি সাধারণ কোনো দিনমজুরের বক্তব্য, নাকি প্রথম আলোর দেওয়া বয়ান, সেটি ভাবার সময় এসেছে। সাত বছরের একটি শিশুকে দশ টাকা ঘুষ দিয়ে তাকে অসৎ পথে পরিচালিত করা কি দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা? তিনি বলেন, ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ, লক্ষাধিক মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিমিয়ে অর্জিত স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর এ উদ্যোগ জাতিসত্তাবিনাশী অপতৎপরতা নয় কি?
হীন রাজনৈতিক স্বার্থে এ ঘটনা জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদেরও পরিষ্কার পরিপন্থী : ওবায়দুল কাদের বলেন, ঐতিহ্যগতভাব এ দৈনিকটি এক বিশেষ স্বার্থান্বেষী মহলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য যে কাজটি নিষ্ঠার সঙ্গে করে থাকে, তা হচ্ছে আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ-ঘৃণা ছড়ানোর জন্য কুৎসামূলক সংবাদ পরিবেশন। তারা বরাবরই বিরাজনীতিকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করে আসছে। ভুলে গেলে চলবে না এভাবেই ঘুষ দিয়ে ব্রহ্মপুত্রপাড়ের চিলমারীর প্রতিবন্ধী নারী বাসন্তীকে ১৯৭৪ সালে দশ টাকার শাড়ি খুলে ৩০০ টাকার জাল পরিয়ে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ দেখিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পটভূমি রচনা করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রায় তিন দশক বাংলাদেশকে গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত রাখা হয়েছিল।
তিনিই এ দেশের মানুষকে ভয়ের মধ্যে রাখতে চেয়েছিলেন : ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার’ নামের একটি সংগঠনের বিবৃতির সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠান বলছে, সাংবাদিকদের ভয় দেখানোর জন্যই সরকার এ ধরনের মামলা করেছে প্রথম আলোর সম্পাদকের বিরুদ্ধে। সরকার এখানো কোনো মামলা করেনি। মামলা সাধারণ একজন নাগরিকও করতে পারেন, সংক্ষুব্ধ নাগরিক। আর ভয় দেখানোর কথা বলা হচ্ছে, কাকে ভয় দেখাব। যাকে ভয় দেখানোর কথা বলা হচ্ছে, তিনিই এ দেশের মানুষকে ভয়ের মধ্যে রাখতে চেয়েছিলেন। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ভয় দেখিয়েছিলেন। দেশের রাজনীতিকে, সাংবিধানিক সরকারকে ভয় দেখিয়েছিলেন। অসাংবিধানিক সরকারের পক্ষে ওকালতি করেছেন, তাদের পক্ষে কাজ করেছেন। এক-এগারো কি আমাদের মনে নেই? কে কাকে ভয় দেখায়? তিনিই তো এই দেশে ভয় দেখিয়েছেন, ঔদ্ধত্য দেখিয়েছেন, বিরাজনীতিকরণের ফয়সালা নিয়ে পত্রিকায় রিপোর্ট করেছেন, সম্পাদকীয় লিখেছেন। সেগুলো আমরা কি ভুলে গেছি? সেই দিন কি বহু আগে?’
নিজেরা গোলমাল করে আওয়ামী লীগের ওপর দায় চাপায় : এ সময় বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এবার দলের বিভিন্ন ইফতার মাহফিল না করে কৃচ্ছ্র সাধনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা নেতা-কর্মীদের কাছে তুলে ধরেন তিনি। রাজধানীর পল্লবীতে ইফতারির দাওয়াতে সাংবাদিকদের মারধরের বিষয়টি তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, এ ঘটনায় মির্জা ফখরুল দাঁড়িয়ে প্রথমে দুঃখ প্রকাশ করে সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা চান। এর পরপরই বলেন, আওয়ামী লীগের গুন্ডারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। নিজেরা গোলমাল করে আওয়ামী লীগের ওপর দায় চাপায় তারা। এই মিথ্যাচারের রাজনীতি বিএনপি করছে। এর সহযোগী হচ্ছে প্রথম আলো।