শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৪ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

সীমানা নিয়ে হট্টগোল হাতাহাতি

শুনানি শেষে সিদ্ধান্ত দেবে ইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রথম ধাপে গতকাল কুমিল্লা অঞ্চলের সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের বিষয়ে শুনানি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শুনানিতে অংশ নিয়ে আসন বহালের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেছেন আবেদনকারীরা। এ সময় নাঙ্গলকোট উপজেলায় আলাদা আসন দেওয়ার দাবি তুলেছেন তারা। ইসি জানিয়েছে, নাঙ্গলকোট যেহেতু একসময় একটি ইনডিভিজুয়াল আসন ছিল, সেটিকে পুনর্বহালের আবেদন এসেছে। অন্যদিকে কুমিল্লা-১ ও ২ আসনের উপজেলা পরিবর্তনের দাবি জানানো হয়। বর্তমানে কুমিল্লা-১ আসনের মধ্যে দাউদকান্দি ও মেঘনা উপজেলা রয়েছে। কুমিল্লা-২ আসনে রয়েছে হোমনা ও তিতাস উপজেলা। ইসি জানিয়েছে, কুমিল্লার মেঘনাবাসীর দাবি, তারা প্রশাসনিক ও ভৌগোলিকভাবে দাউদকান্দি এবং হোমনার সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। সুতরাং সেটি কুমিল্লা-১ থেকে সরিয়ে কুমিল্লা-২ আসনের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেন তারা। একইভাবে কুমিল্লা-২ আসনের সঙ্গে যে বিদ্যমান তিতাস উপজেলা আছে সেটিকে হোমনা থেকে বাদ দিয়ে দাউদকান্দির সঙ্গে সংযুক্ত করার কথা তারা জানিয়েছেন। গতকাল কুমিল্লার এই দুটি আসন নিয়ে শুনানির সময় নির্বাচন কমিশনারদের সামনে হলরুমেই হট্টগোল করেন আসন বহালের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থানকারীরা। পরে মিছিল নিয়ে শুনানি থেকে বের হয়ে দুপুরে নির্বাচন ভবনের সামনে হাতাহাতিতে জড়িতে পড়েন সংক্ষুব্ধরা। তবে বড় কোনো ঘটনা ঘটনার আগেই পুলিশ এসে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরই মধ্যে এক নারীর আঘাতে অন্য এক নারীর কপাল কেটে যায়। এ ছাড়া একটি হাইয়েস গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর ও একটি প্রাইভেট কারকে ধাওয়া করেন তারা। এ সময় ‘মেঘনার মাটি, জালাল ভূঁইয়ার ঘাঁটি’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে শোনা যায়। শুনানি শেষে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে শুনানি শেষে। গতকাল নির্বাচন ভবনে প্রথম দিনের শুনানি শেষে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন। ইসি সচিব বলেন, ‘যতগুলো আবেদন আমাদের কাছে আছে সবগুলো কমিশন শুনবে। যেসব তথ্য-উপাত্ত দেওয়া হয়েছে তা কমিশন বিশ্লেষণ করবে। এখানে একটি নীতিমালা আছে, যেমন প্রশাসনিক অখণ্ডতা, ভৌগোলিক অখণ্ডতা, জনসংখ্যা, ভোটারসংখ্যা, পারিপার্শ্বিক বিষয়- এগুলো বিবেচনা করে এরপর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে এবং সেটা গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দেবে ইসি। জুলাই মাসের মধ্যে এটি শেষ করার কথা রয়েছে।’ সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচনী আসন-সংক্রান্ত বিন্যাসের কার্যক্রম শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় নির্বাচন কমিশনার আলমগীরের নেতৃত্বে একটি কমিটি ছিল। সেই কমিটি একটি খসড়া প্রস্তাবনা কমিশনে উপস্থাপন করে, যা ইতোমধ্যে গণবিজ্ঞপ্তি আকারে দেশবাসীকে অবহিত করা হয়েছে। গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বেশ কয়েকটি আসনের পক্ষে-বিপক্ষে আবেদন জমা পড়েছে। সেগুলোর শুনানি হচ্ছে।’ সচিব বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের নবীনগরের একটি অংশ আরেকটি আসনের সঙ্গে বিভক্ত ছিল। এর পক্ষে-বিপক্ষে আবেদন জমা পড়েছে। কেউ চাইছেন আগের মতো তথা ইসির খসড়া বহাল রাখার জন্য। আবার কেউ চাইছেন কয়েকটি ইউনিয়ন অন্য জায়গা থেকে সংশোধন করে আরেকটি আসনের সঙ্গে সংযুক্ত করতে।’ কুমিল্লা-১ আসনের মধ্যে রয়েছে কুমিল্লার দাউদকান্দি ও মেঘনা উপজেলা। কুমিল্লা-২-এ আছে হোমনা ও তিতাস উপজেলা। কুমিল্লার মেঘনাবাসীর পক্ষ থেকে ওখানকার আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিক এবং তার পক্ষে অনেক জনপ্রতিনিধি আবেদন করে বলেছেন, মেঘনা উপজেলাটিতে তারা প্রশাসনিক ও ভৌগোলিকভাবে দাউদকান্দি ও হোমনার সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। সুতরাং সেটি কুমিল্লা-১ থেকে কুমিল্লা-২-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একইভাবে কুমিল্লা-২-এর সঙ্গে যে বিদ্যমান তিতাস উপজেলা আছে সেটিকে হোমনা থেকে বাদ দিয়ে দাউদকান্দির সঙ্গে যেন সংযুক্ত করা হয়। এর পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, স্থানীয় সুশীল সমাজ এবং তাদের বিজ্ঞ আইনজীবীরা বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। কমিশনের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, যতগুলো আবেদন পড়েছে সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর তারা পূর্ণাঙ্গ মিটিং করে এরপর প্রজ্ঞাপন আকারে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে। মো. জাহাংগীর আলম বলেন, প্রথমে ছিল দাউদকান্দি উপজেলা। সেখান থেকে হোমনা উপজেলা হয়েছে। এরপর মেঘনা উপজেলা হয়েছে। পরে তিতাস উপজেলা হয়েছে। ২০০৮ সালে বিভক্তির মাধ্যমে দাউদকান্দির সঙ্গে মেঘনা উপজেলাকে সংযুক্ত করে কুমিল্লা-১ আসন করা হয়েছে। আর হোমনা উপজেলার সঙ্গে তিতাস উপজেলাকে সংযুক্ত করে কুমিল্লা-২ আসন করা হয়েছে। মেঘনার রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বক্তব্য হচ্ছে, যেহেতু হোমনা থেকে বেশির ভাগ অংশ নিয়ে মেঘনা উপজেলা গঠিত হয়েছে, এতে দাউদকান্দি উপজেলা দূরবর্তী হয়েছে। এ কারণে তাদের যাতায়াতে অসুবিধা হওয়ায় তারা হোমনার সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। সচিব বলেন, কুমিল্লায় একসময় ১২টি আসন ছিল। ২০০৮ সালে একটি আসন সমন্বয় করে ১১টি করা হয়েছে। নাঙ্গলকোটের পক্ষে সাবেক এক সংসদ সদস্য এবং অন্যরা আবেদন করেছেন। এখানে একটি নতুন আসন অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন করেছেন তারা। নাঙ্গলকোট যেহেতু একসময় একটি ইনডিভিজুয়াল আসন ছিল, সেটিকে পুনর্বহালের আবেদন জানিয়েছেন তারা।

সর্বশেষ খবর