অনুমোদনহীন হাসপাতাল-ক্লিনিকে রোগীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত অর্থ আদায় ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভুল রিপোর্ট দেওয়াসহ নানান অভিযোগ এখন নিত্যদিনের ঘটনা। অভিযান চালালেও জরিমানা দিয়েই আবারও শুরু করে ব্যবসা। তবে এবার কঠোর হচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দফতর থেকে অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিকের তালিকা ১১ জেলার সিভিল সার্জনের কাছে পাঠানো হয়েছে। তার মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় অনিবন্ধিত হাসপাতালের সংখ্যা ছয়টি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ১১টির কথা উল্লেখ করা হয়। চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ইফতেখার আহমেদ জানান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী তালিকা তৈরি করে সিভিল সার্জনদের কাছে পাঠানো হয়েছে। তারা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। যেসব প্রতিষ্ঠানে লাইসেন্স ছাড়াই সেবাদান কার্যক্রম চলছে, তাদের তালিকা দেওয়া হয়েছে। জানা যায়, চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি লাইসেন্স না থাকাসহ নানান অভিযোগে চট্টগ্রামের চারটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং হাসপাতাল সাময়িক বন্ধের নির্দেশ দেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী। এগুলো হলো- অগ্রণী ল্যাব ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সেবা ডেন্টাল অ্যান্ড ফিজিওথেরাপি সেন্টার, নিউ চাঁদের আলো হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ন্যাশনাল চক্ষু হাসপাতাল। এ ছাড়া চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় ৩০টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই নিবন্ধনহীন। আবার নিবন্ধন থাকলেও নবায়ন করা হয় না। এসব চিকিৎসা কেন্দ্রে নোংরা পরিবেশ, অদক্ষ নার্স এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়াই চলছে চিকিৎসা। একই চিত্র বোয়ালখালীতেও। আনোয়ারায় বাধা ছাড়াই চলছে ১৮টিরও বেশি অনুমোদনহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক। বাঁশখালীতে নামে-বেনামে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বেসরকা?রি হাসপাতাল, ল্যাব ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সম্প্রতি উপজেলা স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থে?কে ভ্রাম্যমাণ আদালত বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে বাঁশখালী পেশেন্ট কেয়ার হাসপাতাল, মাতৃসদন হাসপাতাল, সিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মিনি ল্যাব, প্রাইম ডায়াগনস্টিক সেন্টার সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়। হাটহাজারীতে ১২টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার অভিযানে বৈধ কাগজপত্র পাওয়া যায়নি, মিলেছে নানান অনিয়ম। ফটিকছড়ির তকিরহাটে এক বছর ধরে কোনো ধরনের কাগজপত্র ছাড়াই অবৈধভাবে চলছিল মডেল ল্যাব নামে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। খবর পেয়ে ৩ ফেব্রুয়ারি ল্যাবটি বন্ধ করে দেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আরেফিন আজিম। এ ছাড়া রাঙ্গুনিয়ায় ২৮টি রোগনির্ণয় কেন্দ্র, ছয়টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মধ্যে বেশির ভাগেরই নিবন্ধন নেই। তবে কেউ কেউ নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছেন। গত মাসে রাউজান সদরের রাউজান ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মেডিকো ডায়াগনস্টিক সেন্টার, স্টার ল্যাব ডায়াগনস্টিক সেন্টার, লাইফ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ইনটেনসিভ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারায় এবং অনিয়মের কারণে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করতে নির্দেশ দেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুমন ধর। মিরসরাইয়ে ৩৩টি ক্লিনিক, ল্যাব ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে। সেখানে নেই বিশেষ তদারকি। সাতকানিয়ায় ৯টি হাসপাতাল এবং ১৯টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি হাসপাতালের অধীনে চলছে ৯টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারও। প্রকৃতপক্ষে জেলা ও উপজেলায় অবৈধভাবে চলমান হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে মত ভুক্তভোগীদের। জেলায় স্বাস্থ্যসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫৮০টিরও বেশি। শুধু লাইসেন্স কিংবা পরিবেশগত ছাড়পত্র নয়, অনুমোদন থাকা অনেক হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সদের নিয়োগপত্রও নেই। এমনকি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তালিকা না থাকা, প্যাথলজিক্যাল ল্যাবের লাইসেন্স, প্যাথলজিস্ট, রিপোর্ট প্রদানকারী চিকিৎসক ও মেডিকেল টেকনোলজিস্টের নামও নেই অনেক হাসপাতাল-ক্লিনিকে। বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে শৃঙ্খলা ফেরাতে ১০টি নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সেগুলো হলো- বেসরকারি ক্লিনিক হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্সের কপি প্রতিষ্ঠানের মূল প্রবেশপথের সামনে দৃশ্যমান স্থানে স্থায়ীভাবে প্রদর্শন। সব বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় তথ্যাদি সংরক্ষণ ও সরবরাহের জন্য একজন নির্ধারিত দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকতে হবে। একই সঙ্গে তার ছবি ও মোবাইল নম্বর দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করা বাধ্যতামূলক।