যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ইস্যুতে সমঝোতা না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, তারা ৪০ বছরের ব্যবসায়িক জীবনে রপ্তানি খাতে এমন সংকট কখনো দেখেননি। গতকাল রাজধানীতে একটি জাতীয় দৈনিকের গোলটেবিল বৈঠকে এমন হতাশা ব্যক্ত করেন ব্যবসায়ী নেতারা। যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক নিয়ে সরকার কী করছে- তা ব্যবসায়ীরা জানেন না বলেও অভিযোগ করেন তারা।
‘যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক : কোন পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওই গোলটেবিল বৈঠকে হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে আজাদ বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ীরা এ খাতকে সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে এসেছি। কিন্তু এখন হতাশ ও ক্ষুব্ধ।’
এ সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতার ক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘আমার এক বড় ব্র্যান্ড হেড অফিসে ডেকে জানায়, তারা নিজ দেশের সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করেছে। তাদের ভাষ্য ছিল- তোমাদের অবস্থান দুর্বল, ভালো ফল আশা করা যাচ্ছে না।’ এ পরিস্থিতিতে হতাশ হয়ে সরকারের একাধিক উপদেষ্টাকে ফোন করেন বলেও জানান তিনি।
ক্রেতাদের অবস্থান তুলে ধরে এ কে আজাদ বৈঠকে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্ক ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে, তা সরানো না গেলে শুল্কের ৩৫ শতাংশ দেশের ব্যবসায়ীদের বহন করতে হবে। প্রতিযোগী দেশ ইন্দোনেশিয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এই ব্যবসায়ী নেতা আরও বলেন, ‘আমার ইন্দোনেশিয়ায় এক যৌথ উদ্যোগ আছে। সেখানে সরকার ও ব্যবসায়ীরা একসঙ্গে কাজ করছেন। লবিস্ট নিয়োগ করেছেন, প্রতিটি স্তরে আলোচনা করেছেন। অথচ বাংলাদেশে আমরা এমন সুযোগ পাইনি।’ সমঝোতার জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তর ইউএসটিআর-এর পেছনে ধরনা না দিয়ে সরাসরি ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার ওপর গুরুত্ব দেন এ কে আজাদ। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ইউএসটিআর বা যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তর শুল্ক নির্ধারণ করবে না, করবে ট্রাম্প প্রশাসন। আপনারা যদি পারেন, ওই পর্যায়ে কিছু চেষ্টা করেন।’ পাল্টা শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দর-কষাকষির প্রক্রিয়া নিয়ে সরকারের সমালোচনা করে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘সরকার কী করছে বা হালনাগাদ কী অগ্রগতি আছে, তা ব্যবসায়ীরা জানতে পারেননি।’ এই ব্যবসায়ী নেতা আরও বলেন, ‘শুল্ক নিয়ে আলোচনা ও দর-কষাকষির ক্ষেত্রে সরকার যদি মনে করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দর-কষাকষির মাধ্যমে তারা ভারত, ভিয়েতনাম বা কম্বোডিয়ার চেয়ে ভালো সুবিধা আনতে পারবে; ব্যবসায়ীদের সম্পৃক্ত করার দরকার নেই, এ জন্য আমলাতন্ত্রই যথেষ্ট; দর-কষাকষির জন্য যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) একমাত্র জায়গা। তাহলে বলব, আমরা সমস্যা নিজেরাই ডেকে নিয়ে আসছি।’ বিজিএমইএর সাবেক এই সভাপতি আরও বলেন, ‘সরকারের প্রথম যে জিনিসটা প্রয়োজন, সেটি হলো মনোভাবের পরিবর্তন। এ পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি। কারণ, আমরা আসলে কী চাই, তা পরিষ্কার করে জানানো। রপ্তানি খাতটি শুধু বৈদেশিক মুদ্রা আয়েরই মাধ্যম নয়, একই সঙ্গে বৈদেশিক বিনিয়োগ ও বিপুল কর্মসংস্থানও জড়িত। এ বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে খাত-সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে নিয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ভিয়েতনামসহ প্রতিযোগী দেশগুলো কী করছে, তা-ও মাথায় রাখতে হবে। শুল্কের হার যেন শেষ পর্যন্ত প্রতিযোগী দেশগুলোর অন্তত কাছাকাছি থাকে, তা দেখতে হবে।’