গত বছরের ২১ জুলাই রাজধানীর বেশ কিছু স্থানে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া আর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেনাবাহিনীকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় টহল দিতে দেখা যায়। রাজধানীসহ জেলায় জেলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় ছাত্র-জনতার। সাভার, গাজীপুর, নরসিংদীতে ঘটে মৃত্যুর ঘটনা। যদিও সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, কিন্তু জুলাইতে তা পরিণত হয় স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে। তাই অবস্থা বেগতিক দেখে গত বছর ২১ জুলাই কোটা নিয়ে হাই কোর্টের রায় বাতিল ঘোষণা করেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এদিন সরকারি চাকরিতে ৭ শতাংশ কোটা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। এর আগে সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান বৈষম্যকে আমলে না এনে আন্দোলন দমাতে চাপ প্রয়োগ, আন্দোলনকারীদের ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘রাজাকার’ সম্বোধনের পর সংক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের মুখে নতিস্বীকার করতে বাধ্য হয় হাসিনার আজ্ঞাবহ আদালত। কিন্তু তত দিনে বড্ড দেরি হয়ে গেছে। এর মধ্যে আবু সাঈদসহ প্রায় তিন শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কারফিউর মধ্যেই হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে অব্যাহত থাকে ছাত্র-জনতার আন্দোলন। পথে পথে বসে সেনাবাহিনীর চেকপোস্ট, চলে টহল। বেপরোয়া পুলিশ। প্রায় তিন দিন ধরে নেই ইন্টারনেট। এমন সময় (২১ জুলাই) দেওয়া আদালতের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ৬৫ জন সমন্বয়কের মধ্যে ৫৯ জন সমন্বয়কের পক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো ওই বিবৃতিতে এ ঘোষণা দেন অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল কাদের। এদিন বিবৃতিতে কোটা আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আবু বাকের মজুমদার ও আসিফ মাহমুদ গুম হয়েছেন বলে দাবি করা হয়। এ ছাড়া ৯ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি চলমান থাকবে বলে ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নিয়ে নিহত প্রায় তিন শতাধিক শহীদের স্মরণে পরদিন ২২ জুলাই বাদ জোহর দেশব্যাপী গায়েবানা জানাজার কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়।
রায়ের বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, সর্বোচ্চ আদালতের রায় আমাদের কাছে অস্পষ্ট মনে হয়েছে। এতে জনমনে বিভ্রান্তির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এ রায়ে সব ধরনের কোটার বিষয়ে সুস্পষ্ট সমাধান নেই। ভবিষ্যতে কোটার পরিমাণ নিয়ে সরকারের যথেচ্ছ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। সর্বোচ্চ আদালত রায় দিলেও সরকার ছাত্র-জনতার হত্যার দায় এড়াতে পারে না। বিবৃতিতে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে স্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে এ সংক্রান্ত (কোটা সংস্কার) আইন পাস করার দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া গণ আন্দোলনকে দমন করতে দুই দিনের বেশি সময় ধরে সারা দেশে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেশের প্রকৃত অবস্থাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়।
ফিরে দেখা ২১ জুলাই ২০২৪-এর রাজধানী : গত বছরের ২১ জুলাই রাজধানীর বেশ কিছু স্থানে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া আর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেনাবাহিনীকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় টহল দিতে দেখা যায়। কোথাও চেকপোস্ট বসিয়ে করা হয় তল্লাশি। এর মধ্যেই ঢাকার দুই-তিনটি এলাকায় অলিগলি থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীরা। যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, সাইনবোর্ড, কাজলা, বছিলা এলাকায় কিছু যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরে এসব এলাকায় র্যাবের হেলিকপ্টার থেকে আন্দোলনকারীদের ওপর টিয়ার শেল আর সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। রাজধানীর উত্তরার হাউস বিল্ডিং, আবদুল্লাহপুর, বিএনএস টাওয়ার এলাকায় পুলিশ আর সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে থেমে থেমে দিনভর ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে ছাত্র-জনতা। জেলায় জেলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে ছাত্র-জনতার। সাভার, গাজীপুর, নরসিংদীতে ঘটে মৃত্যুর ঘটনা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আজও নানা কর্মসূচি পালন করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। জুলাই গণ অভ্যুত্থান থেকে গড়ে ওঠা বিপ্লবীদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) খাগড়াছড়ি আর ফেনীতে পদযাত্রা ও পথসভা কর্মসূচি রয়েছে। এ ছাড়া জুলাই গণ অভ্যুত্থানে পেশাজীবীদের অবদান নিয়ে আলোচনা সভা আছে বিএনপির। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও গণ অভ্যুত্থানের মূল উদ্দেশ্য ও গণপ্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে সেমিনার আয়োজন করেছে।