পিরোজপুরের সুখরঞ্জন বালি গুম, অপহরণ, নির্যাতনসহ প্রায় পাঁচ বছর ভারতে অবৈধভাবে কারাবন্দি করে রাখার অভিযোগ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহাসহ ৩২ জনের নাম উল্লেখ করে গতকাল সুখরঞ্জন বালি এই অভিযোগ দেন।
অভিযোগে সুখরঞ্জন বালি বলেন, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি না হয়ে তার পক্ষে সাক্ষ্য দিতে ট্রাইব্যুনালে আসায় তাকে গুম, অপহরণ, নির্যাতন করা হয়। প্রায় পাঁচ বছর ভারতে তাকে অবৈধভাবে কারাবন্দি করে রাখা হয়।
সুখরঞ্জন বালি যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম, ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবির, সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ, সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম আউয়াল, ট্রাইব্যুনালের সাবেক চিফ প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী, সাবেক প্রসিকিউটর রানা দাসগুপ্ত, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সাবেক প্রধান মো. সানাউল হক, তদন্তকারী কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।
অভিযোগে সুখরঞ্জন বালি বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে রাজি না হওয়ায় এবং সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে ট্রাইব্যুনালে আসার কারণে আমাকে গুম, অপহরণ, নির্যাতন এবং প্রায় পাঁচ বছর ভারতে অবৈধভাবে কারাবন্দি করে রাখা হয়। আমার ভাই বিশাবালিকে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি সেনারা হত্যা করে। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালের জুলাই-আগস্ট মাসের দিকে তৎকালীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন আমাকে পিরোজপুরের পাড়েরহাটের রাজলক্ষ্মী স্কুলে ডেকে ৭১-এ আমার ভাই বিশাবালির হত্যাকান্ডের বিষয়ে জানতে চায়। আমি তাকে প্রকৃত ঘটনা খুলে বলি। কিন্তু হেলাল উদ্দিন আমাকে আমার ভাইয়ের হত্যাকারী হিসেবে প্রকৃত হত্যাকারীদের নামের সঙ্গে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নামও বলতে বলে এবং তার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে গিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বলে। আমি হেলালকে তখনই স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিই যে, সাঈদী হুজুর আমার ভাই বিশাবালি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত ছিলেন না। সুতরাং তার বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, আমি সাক্ষ্য দিতে রাজি না হলে আমাকে নির্দয়ভাবে পেটায়। পরে আমি আত্মগোপনে চলে যাই। অনেক দিন পর সাঈদী হুজুরের ছেলে মাসুদ সাঈদী আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং বিশাবালি হত্যার প্রকৃত ঘটনা জানতে চায়। আমি তাকে প্রকৃত ঘটনা খুলে বলি। তিনি আমার ভাইয়ের হত্যার প্রকৃত ঘটনা ট্রাইব্যুনালে এসে বলার জন্য অনুরোধ জানান। আমি তার অনুরোধ গ্রহণ করি এবং সত্য ঘটনা তুলে ধরার জন্য সাক্ষ্য দিতে রাজি হই। ২০১২ সালের ৫ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালের মূল গেটের কাছে আমাদের গাড়ি এসে পৌঁছালে পুলিশ আমাদের গাড়ি আটকে দেয়। আটকে দেওয়ার পর সামনের গাড়ি থেকে নেমে মাসুদ সাঈদী পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। এর মধ্যে কিছু বুঝে ওঠার আগেই সাদা পোশাকে থাকা অনেক লোক এবং পুলিশ মিলে অ্যাডভোকেট মিজান স্যারের গড়ি ঘিড়ে ফেলে। সেখানে আমাকে দেখে তারা বলে ‘শুয়োরের বাচ্চা, তোকেই তো আমরা খুঁজছি। নাম নাম।’ এই কথা বলেই একজন পুলিশ আমার কানের নিচে প্রচ জোরে থাপ্পড় মারে। এরপর শার্টের কলার ধরে আমাকে মারতে মারতে গাড়ি থেকে নামিয়ে একটা সাদা রঙের পুলিশ পিকআপে তুলে নেয়। সুখরঞ্জন আরও বলেন, গাড়িতে উঠিয়েই তারা আমার চোখ ও হাত বেঁধে ফেলে। এ অবস্থাতেই তারা আমাকে অজানা একটি স্থানে নিয়ে যায়। এটি ছিল একটি জানালাবিহীন অন্ধকার ঘর। যেখানে প্রায় দুই মাস আমাকে বন্দি রাখা হয় এবং খাদ্য ও আলো থেকে বঞ্চিত করে প্রচ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়।