অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ হচ্ছে বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের। শিগগিরই দেশে ফিরছেন দলের কান্ডারি ও তাদের প্রিয় নেতা তারেক রহমান। সম্প্রতি নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘শিগগিরই আপনাদের সঙ্গে সরাসরি দেখা হবে। মানুষের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। আর এজন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’ তার আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গোটা দেশের মানুষ দুটি বিষয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। একটি হলো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। কিন্তু এর আগে তারা তারেক রহমানের ফেরার অপেক্ষায় আছে। তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। এদিকে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তারেক রহমান দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এবং জাতীয় নির্বাচনের বহু আগেই দেশে ফিরবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। দেশে থেকেই তিনি আগামী নির্বাচনে দলকে নেতৃত্ব দেবেন।
তারেক রহমানের আগমনকে ঘিরে দলীয়ভাবে বিভিন্ন রকমের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে ঘুরেফিরে এমন আলোচনাই চলছে। যদিও তারেক রহমান ঠিক কবে নাগাদ দেশে ফিরছেন, সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ নির্ধারণ করা না হলেও ঢাকায় বিএনপির নেতারা বলছেন, স্বল্প সময়ের মধ্যেই তারেক রহমান দেশে ফিরছেন। তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘিরে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই অথবা অক্টোবরের শেষ বা নভেম্বরের প্রথমার্ধে তারেক রহমানের দেশে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে। দলের এই শীর্ষ নেতার দেশে ফেরার পর তাঁর নিরাপত্তা, বাসভবন, রাজনৈতিক কার্যালয়সহ অন্যান্য বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, দলের এই শীর্ষ নেতাকে দেশের মাটিতে গণ অভ্যর্থনা জানাতে বিএনপি প্রস্তুত। আগামী জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তাসহ নানা দিক মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। তাই কোন সময় দেশে ফিরলে বিএনপির রাজনৈতিক অর্জনের পাশাপাশি ব্যক্তি তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনটা ফলপ্রসূ হয়, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই তারেক রহমানের ফেরা নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে একটি জোরালো আলোচনা আছে। তাঁর অভ্যর্থনা উপলক্ষে ঢাকায় বড় সমাবেশ করার পরিকল্পনা আছে বিএনপির। ওই সমাবেশে তারেক রহমান সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারেন।
সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে স্মরণীয় করে রাখতে চায় বিএনপি। দিনটিতে বিমানবন্দরসহ রাজধানীতে বৃহত্তম জমায়েত করার পরিকল্পনা রয়েছে দলের। সে ক্ষেত্রে বিমানবন্দরসহ ঢাকায় বিএনপির বিশাল একটি শোডাউনের পরিকল্পনা রয়েছে। এমতাবস্থায় তারেক রহমানের দেশে ফেরার সম্ভাব্য সময় নিয়ে একাধিক আলোচনা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, এটি হতে পারে আগামী জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ঠিক আগে অথবা তফসিল ঘোষণার পরপরই। এ সময়ে দেশে ফিরে তিনি দলের পক্ষে একটি জোয়ার সৃষ্টি করে নির্বাচনে ভালো ফল আদায়ে ভূমিকা রাখবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তারেক রহমানের দেশে ফেরার দিন-তারিখ নিয়ে নানামুখী চিন্তা রয়েছে বিএনপির। ধারণা করা হচ্ছে, তারেক রহমান দেশে ফেরার পর গুলশান-২ অ্যাভিনিউ রোডের ১৯৬ নম্বর বাড়িতেই থাকবেন। ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তৎকালীন সরকার তাঁর স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এই বাড়ি বরাদ্দ দেয়। সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকার এই বাড়ির নামজারি সম্পন্ন করে এ-সংক্রান্ত কাগজপত্র খালেদা জিয়ার হাতে হস্তান্তর করে। এর পাশের বাড়ি ফিরোজায় ভাড়া থাকেন বেগম খালেদা জিয়া। গুলশানের ১৯৬ নম্বর বাড়িটি ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ-এর কাছে ভাড়া দেওয়া ছিল। কোম্পানিটি চলতি বছরের শুরুর দিকে বাড়িটি ছেড়ে দেয়। এখন নতুন করে বাড়ির ভিতরে-বাইরে রং করাসহ প্রয়োজনীয় সংস্কারকাজ চলছে। ২০০৭ সালের ৭ মার্চ এক-এগারোর ফখরুদ্দীন-মইন উদ্দিন সরকারের সময় তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পেয়ে ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য তিনি সপরিবার লন্ডনে যান। পরে সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর ধরে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থান করছেন তিনি। এর মধ্যে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেওয়া হলে তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ক্রমান্বয়ে তারেক রহমান তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা প্রায় সব মামলা থেকেই অব্যাহতি পান। তাঁর দেশে ফেরার ক্ষেত্রে সরকারের দিক থেকে কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এ ব্যাপারে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও মিডিয়া সেলের সদস্যসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন। তাঁর আগমনের প্রস্তুতি শুধু দলের মধ্যে নয়, জাতীয় পর্যায়েও নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘তারেক রহমান বীরের বেশে, আসবে ফিরে বাংলাদেশে।’