জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘২০২৪ সালের ১৯ জুলাই আমরা বুঝতে পারি সরকার ইলেকট্রনিক মিডিয়া সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গেছে। আমাদের আন্দোলনের এবং আহত ও নিহতদের কোনো খবর প্রচার হচ্ছিল না। আমরা আন্দোলনের নেতারা জীবনের হুমকির মুখে পড়ি এবং গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যাই।’ জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দেওয়া জবানবন্দিতে এসব কথা বলেন তিনি। গতকাল মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ প্রসিকিউশনের ৪৭তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন নাহিদ ইসলাম।
গণ অভ্যুত্থানের সময়কার নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম জবানবন্দিতে বলেন, ‘গত বছরের ১৪ জুলাই শেখ হাসিনা একটি সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী ছাত্রদের রাজাকারের বাচ্চা এবং রাজাকারের নাতিপুতি অভিহিত করে কোটাপ্রথার পক্ষে অবস্থান নেন। তাঁর এ বক্তব্যে আন্দোলনকারীদের মর্যাদাহানি হয়। এ কারণে সবাই সেদিন রাতেই রাজপথে নেমে আসে।’ তিনি বলেন, ‘এ আন্দোলন দমনে ছাত্রলীগই যথেষ্ট’ ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করতে ছাত্রলীগের প্রতি উসকানি ও নির্দেশ ছিল।’ এদিন জবানবন্দিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ২০১৮ থেকে ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত ঘটনার বর্ণনা দেন তিনি। নাহিদ ইসলামের জবানবন্দি শেষ না হওয়ায় এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আজকের দিন (বৃহস্পতিবার) ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে সকালে প্রসিকিউশনের ৪৬তম সাক্ষী আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে জেরা করা সমাপ্ত করেন শেখ হাসিনাসহ দুই আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
শেখ হাসিনার পাশাপাশি এ মামলার অন্য দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে এ মামলায় রাজসাক্ষী হয়ে জবানবন্দি দিয়েছেন। অন্যান্য দিনের মতো গতকালও তাঁকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম, গাজী এম এইচ তামীম, বি এম সুলতান মাহমুদ, আবদুস সাত্তার পালোয়ান প্রমুখ।
ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে নাহিদ ইসলাম বেলা ২টার আগেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসে হাজির হন। এরপর ২টা ৫২ মিনিটে প্রসিকিউটরদের সঙ্গে এজলাসে আসেন। ২টা ৫৫ মিনিটে তাঁর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
জবানবন্দির শুরুতে নাহিদ তাঁর পরিচয় তুলে ধরে বলেন, ‘আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী। বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। ২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১ নম্বর সমন্বয়ক ছিলাম।’
রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর দাবি : সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় টানা দুই দিন সাক্ষ্য দিয়েছেন আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। জবানবন্দিতে তিনি বর্ণনা দিয়েছেন জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যাসহ গত ১৬ বছরের গুম-খুনেরও। তবে জেরায় তার এসব বক্তব্য অসঙ্গত বলে দাবি করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ মাহমুদুর রহমানকে জেরা শেষে বেরিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে তিনি এমন দাবি করেন। নিজের মক্কেলদের নির্দোষ দাবি করে স্টেট ডিফেন্সের এই আইনজীবী বলেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আমার মক্কেল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল কোনো হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তাদের নির্দেশেও এসব হয়নি। মাহমুদুর রহমানের সাক্ষ্য দিতে আসার বিষয়ে তিনি বলেন, ওনার (মাহমুদুর রহমান) বিরুদ্ধে তৎকালীন সময়ে মামলা হয়েছে, ওনি হাজত খেটেছেন সেই সব কারণে বিদ্বেষ প্রণোদিত হয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ও তার সরকারের অন্যদের বিরুদ্ধে এই ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন।