ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারিতে হওয়া উচিত বলে মনে করেন দেশের ৮৬ দশমিক ৫ শতাংশ ভোটার। এ নির্বাচনে পিআর (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে ভোট চায় জামায়াত-এনসিপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল।
তবে পিআর সম্পর্কে ধারণা নেই দেশের ৫৬ শতাংশ ভোটারের। আর ৯৪ দশমিক ৩ শতাংশ ভোটার জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে তারা ভোট দিতে আগ্রহী।
বেসরকারি সংস্থা ইনোভেশন কনসালটিংয়ের ‘পিপলস ইলেকশন পালস সার্ভে, রাউন্ড-’এর প্রকাশিত প্রথম প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে একটি হলরুমে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এই জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়। ইনোভেশন কনসালটিং একটি আন্তর্জাতিক পরামর্শক, গবেষণা ও কারিগরি সহায়তা দানকারী প্রতিষ্ঠান। তাদের উদ্যোগে ‘পিপলস পারসেপশন অন ইলেকশন সার্ভে’ পরিচালিত হচ্ছে, যা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছে ভয়েস ফর রিফর্ম ও বাংলাদেশ রিসার্চ এনালাইসিস অ্যান্ড ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক (ব্রেইন)। ইনোভেশন কনসালটিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও জরিপের প্রধান সমন্বয়ক মো. রুবাইয়াত সরোয়ার ফলাফল উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। দেশের ১০ হাজার ৪১৩ জন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের অংশগ্রহণে এই জরিপে অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মদক্ষতা, নির্বাচনকালীন পরিস্থিতি, আইনশৃঙ্খলা ও নির্বাচনি সংস্কার নিয়ে জনমত বিশ্লেষণ করা হয়।
জরিপের ফলাফল
অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মদক্ষতা : ৭৮ দশমিক ৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারী সরকারের কার্যক্রমকে ‘ভালো’ বা ‘মধ্যম মানের’ হিসেবে মূল্যায়ন করেছেন। তবে তরুণ, শিক্ষিত ও নগরবাসীর মধ্যে সন্তুষ্টির হার তুলনামূলক কম।
নির্বাচন ও ভোট নিরাপত্তা : ৬৯ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে সক্ষম। এ ছাড়া ৭৭ দশমিক ৫ শতাংশ বিশ্বাস করেন তারা নিরাপদে ভোট দিতে পারবেন। তবে পুলিশ ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে তরুণ ও নগরবাসীর সংশয় বেশি।
আইনশৃঙ্খলা : ৫৬ দশমিক ৬ শতাংশ নাগরিক মনে করেন গত ছয় মাসে চাঁদাবাজি বেড়েছে। এ ধারণা নগর এলাকায় বসবাসকারী তরুণ ও উচ্চশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেশি। তথ্যের প্রধান উৎস হিসেবে তরুণ ও শিক্ষিতদের বড় অংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল।
নির্বাচনের সময়সূচি ও অংশগ্রহণ : ৮৬ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তরদাতা নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত দেন এবং ৯৪ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তবে শিক্ষার্থী, উচ্চশিক্ষিত এবং কিছু পেশাজীবীর মধ্যে নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে আপত্তি তুলনামূলক বেশি।
নির্বাচনি সংস্কার : সংসদের উচ্চকক্ষে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) পদ্ধতি সম্পর্কে ৫৬ শতাংশ উত্তরদাতা অবগত নন। তবে যারা এ বিষয়ে জানেন, তাদের মধ্যে এই ব্যবস্থার পক্ষে সমর্থনই বেশি। তরুণ ও উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা এবং সমর্থনের হার তুলনামূলকভাবে বেশি। গোলটেবিল বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ও যোগাযোগ বিষয়ের শিক্ষক ড. সাইমুম পারভেজ, বিডিজবস ডটকমের প্রধান নির্বাহী এ কে এম ফাহিম মাশরুর, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রশনা ইমাম ও ব্রেইনের নির্বাহী পরিচালক শফিকুর রহমান। অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে হবে কি না সেই সিদ্ধান্ত দেশের রাজনৈতিক দলগুলোই নেবে। এ বিষয়ে সরকারের বক্তব্য কম হওয়া শ্রেয়।
জরিপের ফলাফল ধরে তিনি বলেন, দেশের প্রায় ৯৫ শতাংশ মানুষের ভোট দিতে চাওয়া মানে সামনে ইনক্লুুসিভ নির্বাচন হবে। সবাই ভোট দিতে এলে ভোট ভালো হতে বাধ্য বলেও মন্তব্য করেন তিনি।