হাঁপানি একটি শ্বাসকষ্টজনিত বক্ষব্যাধি। অনেক সমস্যার কারণে এই হাঁপানি হয়ে থাকে। কয়েক বছর আগে হাঁপানির কারণ সম্বন্ধে চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের যে ধারণা ছিল আজ কিন্তু সেই ধারণার অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। অর্থাৎ অনেক বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব এবং তথ্যসমৃদ্ধ হয়ে আজকাল বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ হাঁপানির চিকিৎসা শুরু করেছেন। বিশ্বজুড়েই হাঁপানি রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের চেয়ে হাঁপানি নিয়ন্ত্রণ অনেক সময় বেশি কঠিন। কারণ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ভিত্তি হলো খাদ্য নিয়ন্ত্রণ বা রোগীর নিজের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। অথচ হাঁপানি নিয়ন্ত্রণের ভিত্তি ঠাণ্ডা, ধুলা, ভাইরাস বা পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ যার বেশিরভাগের ওপর রোগীর কোনো হাত নেই। এই মৌসুমে সারা দেশের হাঁপানি রোগীরা কম-বেশি সংকটের সম্মুখীন, পৃথিবীতে যখন হার্ট অ্যাটাক, উচ্চ রক্তচাপ ক্যান্সারের মতো মরণ ব্যাধির কারণে মৃত্যুর হার কমছে ঠিক সেই সময় পুরো পৃথিবীতে পরিবেশ দূষণের কারণে হাঁপানি সমস্যাও বাড়ছে। মৃত্যুর হার বাড়ছে। আগেই লিখেছি পরিকল্পনাবিহীন এবং অবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে প্রচুরসংখ্যক হাঁপানি রোগী হয় অসুস্থ নয়তো মৃত্যু পথযাত্রী। জড়ি, বুটি, সালসা, গরুর পিত্তথলি, মাদুলী, তাবিজ ইত্যাদি দিয়ে এখনো হাঁপানি রোগীকে সুস্থ হওয়ার গ্যারান্টি দিয়ে অহেতুক প্রতারণা করা হচ্ছে। আমাদের দেশে বিশেষ করে গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে কিভাবে চিকিৎসার ব্যাপারে প্রতারণা করা হচ্ছে সেটা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। অল্প বয়সী মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয় এবং এই আশায় যে, বিয়ের পর হাঁপানি ভালো হয়ে যায়। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। বিয়ের সঙ্গে হাঁপানি ভালো হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই, বরং বিয়ের পর সংসারের বিভিন্ন টানাপড়েনে এবং মানসিক চাপে নতুন করে হাঁপানির শিকার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। হাঁপানি একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ। শ্বাসকষ্টের কারণ তিনটি। প্রথমত. শ্বাসনালি সংকুচিত হওয়া, দ্বিতীয়. মিউকাস জাতীয় আঠালো রস নির্গত হওয়া এবং তৃতীয়ত. প্রদাহের ফলে শ্বাসনালির মিউকাস আবরণী ফুলে যাওয়া। প্রদাহবিরোধী ওষুধ সরাসরি শ্বাসনালির অভ্যন্তরে ফুলা কমাবে এবং সঙ্গে সঙ্গে মিউকাস জাতীয় রস তৈরি কমে যাবে এবং শ্বাসনালি প্রসারক ওষুধের কার্যকারিতা বাড়াবে। এই প্রদাহবিরোধী ওষুধগুলো শ্বাসনালির সংবেদনশীলতা কমিয়ে দেয় এবং এর ফলে হাঁপানির প্রকোপ কমতে থাকে।
বিক্লোমেথা সোনকে অর্থাৎ স্টেরয়েড ইনহেলার আজকাল হাঁপানির প্রতিষেধক হিসেবে গণ্য করা হয়। এই ওষুধটি সরাসরি শ্বাসনালির প্রসারণ ঘটায় না, তাই তাৎক্ষণিক উপকার হয়তো পাওয়া যায় না, তবে দীর্ঘদিন যাবৎ নিয়মিত ব্যবহার করলে শ্বাসনালিতে প্রদাহ হতে পারে না। সে কারণে শ্বাসনালি সংকুচিত হয় না। ফলে শ্বাসকষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
লেখক : অধ্যাপক, বক্ষব্যাধি বিভাগ, এমএইচ শমরিতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।