বয়স্ক ব্যক্তিরা প্রায়ই বাতব্যথায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন, কারও মাজায়, কোমরে অথবা হাঁটুতে আবার কারও ঘাড়-মাথায় ব্যথা হতে পারে এবং এ ধরনের অসুস্থতায় আক্রান্ত লোকের সংখ্যা অনেক বেশি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের ঘাড়-মাথা ব্যথা অস্থিক্ষয়জনিত কারণে ঘটে থাকে। অস্থিক্ষয় হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে বয়স, ৫০ ঊর্ধ্ব ব্যক্তিদের মধ্যেই এ ধরনের অস্থিক্ষয় সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়ে থাকে।
মাথা ব্যথা অনেক কারণেই ঘটে থাকে তার মধ্যে শতকরা ৫০ ভাগের মতো কারণ চিকিৎসকগণ নির্ণয় করতে না পারায় ওই ধরনের সমস্যাকে একটি ঢালাও নামে ডাকা হয়ে থাকে, মাইগ্রেন। মানে মাথা ব্যথায় প্রায় ৪০-৫০ শতাংশই মাইগ্রেন এবং এর গ্রহণযোগ্য কারণ এখনো জানা সম্ভব হয়নি। মাইগ্রেন সাধারণভাবে উঠতি বয়সের ব্যক্তিদের বেলাই বেশি পরিলক্ষিত হয়।
উচ্চরক্তচাপ সাধারণভাবে প্রাথমিক পর্যায়ে কোনরূপ উপসর্গের সৃষ্টি করে না, তাই বহুদিন ধরে হাইপ্রেসার অনেক রোগীদের কাছে অজানাই থেকে যায়। অনেকে বুঝতেই পারেন না যে তারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। এভাবেই অনেক ব্যক্তি বছরকে বছর যাবৎ অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ নিয়ে দিব্যি সব ধরনের কাজকর্ম যথাযথভাবে পালনও করতে পারছেন।
উচ্চরক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত থাকলে আপনার হৃৎপিন্ডকে অধিক শক্তি ব্যয় করে রক্ত পাম্প করতে হয়। অধিক কাজের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে গিয়ে প্রাকৃতিক নিয়মেই হার্টের কলেবর বৃদ্ধি পেয়ে যায়। যাকে হার্ট মোটা হওয়া, হার্ট বড় হওয়া, হার্টের দেয়াল মোটা হওয়া বলা হয়। এ অবস্থা চলতে থাকলে একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ে পৌঁছার পর হার্ট আরও বেশি কাজ করতে অপারগ হয়ে পরে।
ঠিক তখনই এ ধরনের রোগীরা বেশ কিছু সমস্যায় আক্রান্ত হন, যেমন- বুক ব্যথা বিশেষ করে ভরা পেটে হাঁটতে গেলে, তার সঙ্গে কারও কারও পরিশ্রমে হয়রান হয়ে যাওয়া বা শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হওয়া বা শ্বাসকষ্ট হওয়া, এর সঙ্গে অনেকের পা ফুলে পানি আসা, পেট ফুলে যাওয়া, গ্যাস, বদহজম, অরুচি ইত্যাদি হয়ে থাকে। কাজেই দেখা যাচ্ছে যে, উচ্চরক্তচাপ বিনা লক্ষণে হার্টের ক্ষতি করার পর রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। তাই অনেকে উচ্চরক্তচাপকে নীরব ঘাতক হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন।
কখনো কখনো উচ্চরক্তচাপ কারও কারও বেলায় কিছু উপসর্গের প্রকাশ ঘটায় যেমন- অস্থিরতা, কাজে মন না বসা, ঠান্ডা এবং গরম সহ্য করার ক্ষমতা কমে যাওয়া, কারও কারও ঘাড়-মাথা ব্যথা হয়ে থাকে। তবে এ ধরনের উপসর্গ মাত্র শতকরা ১০ ভাগ উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেলায় পরিলক্ষিত হতে পারে।
যে কোনো ধরনের অস্বস্তিকর অবস্থায় মানুষের রক্তচাপ সাময়িক বৃদ্ধি ঘটে, কোনো ধরনের সিদ্ধান্তহীনতা বা দোদুল্যমানতার ফলেই রক্তচাপ সাময়িকভাবে বৃদ্ধি ঘটতে পারে, আরও একটি এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, যদি আপনি যে কোনো ধরনের তীব্র ব্যথায় আক্রান্ত হন যেমন তীব্র পেট ব্যথা, বুক ব্যথা, হাত-পা ব্যথা, মাথাব্যথা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যথার কারণে রক্তচাপ সাময়িকভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে।
ঘাড়-মাথা ব্যথা হলে যদি প্রেসার বেশি পরিমাপিত হয়, তাতে কিন্তু সঠিকভাবে বলা যাবে না যে, প্রেসার থেকে মাথা ব্যথা হচ্ছে অথবা ঘাড়-মাথা ব্যথা হওয়ার ফলে প্রেসার বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ আগেই বলেছি ব্যথা থেকেও প্রেসার বাড়তে পারে। কখনো কখনো টেনশনের জন্য রক্তচাপ বৃদ্ধি ও মাথা ব্যথা দুটোই এক সঙ্গে ঘটে থাকে তবে এর সঙ্গে অনিদ্রারও একটি যোগসূত্র আছে।
ঘাড়-মাথাব্যথার সঙ্গে হাইপ্রেসার পাওয়া গেলেই যে রক্তচাপের বৃদ্ধি পেয়েছে তা মোটেই সঠিক নয়। বয়স্ক ব্যক্তিদের বেলায় ঘাড়ে অস্থিক্ষয়জনিত সমস্যা আছে কিনা জানতে হবে এবং উঠতি বয়সের ব্যক্তিদের বেলায় মাইগ্রেন আছে কিনা তা জানা দরকার। তবে ব্যক্তি বিশেষে হাইপ্রেসার এ ধরনের ঘাড়-মাথা ব্যথার সৃষ্টি করতে পারে। সুতরাং এত সব জটিল হিসাব এবং ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্তের জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই যুক্তিযুক্ত। তাই এসব ক্ষেত্রে অবহেলা না করে সচেতন হতে হবে।
লেখক : চিফ কনসালটেন্ট, শমশের হার্ট কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ