‘সামান্য জ্বর, সর্দি, কাশি বা ভাইরাল ইনফেকশনের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। অ্যান্টিবায়োটিক ক্রয় বা খাওয়ার পূর্বে বার বার চিন্তা করুন। কোনো ফার্মেসির কথায় অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না। শুধুমাত্র রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শেই অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন। কারণ আমি, আপনি বা আমাদের পরিবারের যে কেউ অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের ভয়াবহ পরিণতির শিকার হতে পারি। আমরা হয়তো এমন একটা প্রজন্ম রেখে যাচ্ছি যারা ছোট ইনফেকশনের জন্যও কোনো কার্যকরী অ্যান্টিবায়োটিক পাবে না।’
চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ (সিআইএমসি), চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ডেন্টাল কলেজ ও চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল নার্সিং কলেজের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সচেতনতা সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত বৈজ্ঞানিক সেমিনারে মূল প্রবন্ধে এসব কথা বলা হয়।
মঙ্গলবার সকালে ‘অ্যাক্ট নাও, প্রোটেক্ট আওয়ার প্রেজেন্ট, সিকিউর আওয়ার ফিউচার’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যে সিআইএমসিএইচ'র অডিটোরিয়ামে আয়োজিত বৈজ্ঞানিক কনফারেন্সে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম ইন্টান্যাশনাল মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. টিপু সুলতান।
অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন সিআইএমসি’র উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ মুসলিম উদ্দিন সবুজ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হাসপাতালের ফার্মাকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফাতিহা তাসমিন জিনিয়া। বিশেষজ্ঞ প্যানেল বক্তা ছিলেন চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ডেন্টাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. আকরাম পারভেজ চৌধুরী, ফার্মাকোলজি বিভাগের প্রধান ডা. এজেডএম আশেক-ই-ইলাহি, চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ মিসেস ইলা দাশ।
মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ডা. ফাতিহা তাসমিন জিনিয়া বলেন, ইনফেকশনের বিরুদ্ধে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ হিসেবে অ্যান্টিবায়োটিক বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অ্যান্টিবায়োটিক একটি অনুজীবনাশক ওষুধ, যা শুধুমাত্র ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করে। কিন্তু বর্তমানে সামান্য জ্বর, সর্দি, কাশি বা ভাইরাল ইনফেকশনের জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে, যার ফলাফল হিসেবে কার্যকারিতা হারাচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক।
সম্প্রতি দ্যা ল্যানসেটের গবেষণায় উঠে এসেছে, অ্যান্টিবায়োটিকের অকার্যকারিতায় বিশ্বব্যাপী ৩ কোটি ৯০ লক্ষ মানুষের আশঙ্কার কথা। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা।
সিআইএমসি’র অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. টিপু সুলতান বলেন, অবশ্যই সময়মতো ও পরিপূর্ণভাবে অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স শেষ করতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অন্য সদস্যদের সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক শেয়ার করার কোনো সুযোগ নেই।
সিআইএমসি’র উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. মুসলিম উদ্দিন সবুজ বলেন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং ফুটানো পানি পান করা অনেকাংশে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ রোধ করে এবং ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে। সুতরাং সাবান দিয়ে হাত ধোবেন। পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন এবং বিশুদ্ধ পানি পান ও ডাক্তারের পরামর্শে টিকাদানের মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স প্রতিরোধ করা যায়। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালের সঠিক ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়িয়ে আপনিও হয়ে উঠুন একজন অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সযোদ্ধা।
বিডি প্রতিদিন/এমআই