চলছে ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতা মাস। অক্টোবর মাসব্যাপী পালন করা হয় এই সচেতনতা; এটি একটি বার্ষিক প্রচার যাতে ব্রেস্ট ক্যান্সার সম্পর্কে মানুষদের বিশেষভাবে জানানোর জন্য করা হয়। এ মাসে বিভিন্ন প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে সবাইকে সচেতন করা হয়। প্রথম এ মাসটি পালন করা শুরু হয় ১৯৮৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে। নারীদের কান্সারের মধ্যে সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে ব্রেস্ট ক্যান্সার। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগটি নির্ণয় করা গেলে বেশির ভাগ ব্রেস্ট ক্যান্সার চিকিৎসায় সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যেতে পারে।
ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি :
অপরিবর্তনযোগ্য ঝুঁকি: ১. পুরুষেরও ব্রেস্ট ক্যান্সার হতে পারে, তবে নারীদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ১০০ গুণ।
২. বয়স: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে, পশ্চিমা বিশ্বে সাধারণত ৫০ বছর বয়সের পর ঝুঁকি বেশি বাড়ে। তবে অজানা কারণে আমাদের দেশে ৪০-এর পরই বেশি দেখা যায়।
৩. জিনগত: বিআরসিএ-১ ও ২ জিনের অস্বাভাবিক মিউটেশন ৫ থেকে ১০ শতাংশ দায়ী ব্রেস্ট ক্যান্সারের জন্য।
৪. বংশগত: কারও পরিবারের কোনো নিকটাত্মীয় যেমন- মা, খালা, বড় বোন বা মেয়ে ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে তার ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি।
৫. পিরিয়ড: ১২ বছর বয়সের আগে পিরিয়ড শুরু এবং ৫০ বছর বয়সের পর পিরিয়ড বন্ধ হলে, তাদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
পরিবর্তনযোগ্য ঝুঁকি:
১. সন্তান সংখ্যা: নিঃসন্তান নারীদের ঝুঁকি বেশি।
২. বেশি বয়সে সন্তান: ৩০ বছর বয়সের পর বিয়ে ও প্রথম সন্তানের মা হওয়া ঝুঁকি বাড়ায়।
৩. ব্রেস্টফিডিং না করানো: সন্তানকে বুকের দুধ না খাওয়ানোর অভ্যাস ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
৪. খাদ্যাভ্যাস: শাকসবজি ও ফলমূল কম খেয়ে, চর্বি ও প্রাণিজ আমিষ জাতীয় খাবার বেশি খেলে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। ৫. ওজন : অতিরিক্ত ওজন ও শারীরিক পরিশ্রমের অনভ্যাস ঝুঁকি বাড়ায়। অন্যান্য কারণের মধ্যে ব্রেস্টে সাধারণ কোনো চাকা বা পি-।
ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে করণীয় :
১। ক্যান্সার প্রতিরোধী খাবার খান : বেশি আঁশযুক্ত খাবার ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমাতে পারে। এর ফলে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা ৫০% পর্যন্ত কমে। মটরশুঁটি, তাজা ফল, আস্ত শস্য এবং ফ্ল্যাভনয়েড, ক্রুসিফেরাস ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট (ব্রোকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি) ও ক্যারোটিনয়েডসমৃদ্ধ সবজি খান। পিঁয়াজ, রসুন, পিঁয়াজ পাতা ইত্যাদি সবজি ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ফ্রি র্যাডিকেলকে নিরপেক্ষ করে এবং ক্যান্সার কোষের বিভক্ত হওয়া প্রতিরোধ করে। এ ধরনের সবজি কাঁচা খেলেই ভালো ফল লাভ হয়।
২। শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকুন : যেসব নারী দৈনিক ৩০-৪৫ মিনিট ব্যায়াম করেন তাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি যারা ব্যায়াম করেন না তাদের চেয়ে ২০-৪০% কমে। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট সাধারণ ব্যায়াম যেমন- দ্রুত হাঁটার লক্ষ্য নির্ধারণ করুন।
৩। ওজন ঠিক রাখুন : গবেষণায় দেখা গেছে, অধিক ওজন ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। ক্যান্সার ও ওজনের এ সম্পৃক্ততার জন্যই সবার উচিত দেহের স্বাভাবিক ওজন বজায় রাখা।
৪। নিউট্রিশনাল সাপ্লিমেন্ট : অত্যাবশ্যকীয় ভিটামিন ও মিনারেলসমৃদ্ধ সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে ব্রেস্ট ক্যান্সার ও অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ করা যায়। পর্যাপ্ত মাত্রার ভিটামিন এ, ডি ও ই ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৫। ভালো ফ্যাট গ্রহণ : খারাপ ফ্যাট বর্জন করে ভালো ফ্যাট গ্রহণ করা উচিত।
৬। ধূমপান বর্জন করুন : যেসব নারী ধূমপান করেন বা ক্রমাগত পরোক্ষভাবে ধোঁয়ায় আক্রান্ত হন তাদের মধ্যে ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ৪০% এরও বেশি। যাদের অ্যালকোহল সেবনের অভ্যাস আছে তাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তাই এ অভ্যাসগুলো অবশ্যই পরিবাহার করতে হবে। কথায় আছে প্রতিকার নয়, প্রতিরোধ সর্বোদা উত্তম। তাই এ বিষয়ে সচেতন ও যত্নবান হোন।
লেখক : গ্রুপ মেডিকেল ডিরেক্টর বাংলাদেশ, এভারকেয়ার হসপিটাল
বিডি প্রতিদিন/এমআই