আপনি কি কখনো অজ্ঞান হয়েছেন? আপনি একা নন। আপনার মতো অনেকেই জীবনে কখনো না কখনো জ্ঞান হারিয়ে থাকেন। আমরা সবাই জানি, বহুবিধ শারীরিক ও মানসিক কারণে মানুষ জ্ঞান হারায়। প্রায় সব ক্ষেত্রেই এসব কারণ খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ বা কোনো জটিল রোগের লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয় না।
কারণ : যে কোনো কারণে হঠাৎ রক্তচাপ কমে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহের চরম ঘাটতি দেখা দেয় ফলে ব্যক্তি জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরবর্তীতে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এসব কারণ দূরীভূত হয়ে যায়। ফলে রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়ে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ নিশ্চিত হয় এবং ব্যক্তি আবার জ্ঞান ফিরে পায়। তবে কখনো কখনো রোগীর জ্ঞান ফিরে পেতে টোটকা চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। যেমন- রোগীর শরীরে তাপমাত্রা বেশি থাকলে, বিভিন্ন পদ্ধতিতে তা কমিয়ে আনা, তাপমাত্রা কম থাকলে, তা বৃদ্ধি করা। শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দিলে তা পূরণ করা, ভয় পেয়ে অথবা নার্ভাস হয়ে অজ্ঞান হলে চোখে-মুখে পানির ঝাপটা দেওয়া ইত্যাদি।
হৃদরোগের কারণে জ্ঞান হারানো : যদি কেউ ঘন ঘন জ্ঞান হারাতে থাকে, দীর্ঘ সময় অজ্ঞান থাকা, অজ্ঞান হওয়ার আগে বুকে অস্বস্তি অনুভব করা, বুকে ব্যথা অনুভূত হওয়া, শ্বাসকষ্ট হওয়া, বমি বমি ভাব অথবা বমি হতে পারে, তাহলে ধরে নিতে হবে আপনার হৃৎপিণ্ডে কোনো সমস্যা দেখা দিয়েছে। হৃৎপিণ্ডের সমস্যার কারণে অজ্ঞান হওয়ার সঙ্গে কখনো কখনো খিঁচুনি দেখা দিতে পারে। কারও কারও অজ্ঞান হওয়ার আগে দীর্ঘক্ষণ ধরে কাশির উদ্রেক হতে পারে। কাশির সঙ্গে সঙ্গে নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হতে পারে। শরীর অত্যধিক ঘেমে যেতে পারে।আরও যেসব কারণে আপনি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন : ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে সুগারের পরিমাণ খুব বেশি কমে যাওয়া। ডায়াবেটিসের ওষুধ গ্রহণ অথবা ইনসুলিন জাতীয় ইনজেকশন গ্রহণ করে খাদ্য গ্রহণ করতে না পারা, অথবা খাবার খেতে ভুলে যাওয়া, অথবা খাওয়ার পর বমি হওয়া, কিংবা ডায়াবেটিসের ওষুধ বা ইনজেকশন গ্রহণের পর বেশি পরিমাণে ব্যায়াম বা কায়িক শ্রম করা, তার সঙ্গে যদি প্রয়োজনীয় পারিমাণ পানি পান না করা হয়। রক্তে সুগারের মাত্রা খুব বেশি পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে। কোনো কারণে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাত্রা অত্যধিক ঘন হলে। কোনো কিছু দেখে ভয় পেলে, কেউ কেউ হৃদয়বিদারক ঘটনা অবলোকন করলে বা শুনলে অজ্ঞান হতে পারেন। যারা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ সেবন করছেন, ওষুধ পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হিসেবে অথবা ওষুধের মাত্রা অতিরিক্ত হলে জ্ঞান হারাতে পারেন। সাধারণত এসব রোগী বসা অথবা শোয়া থেকে হঠাৎ ওঠে দাঁড়ালে জ্ঞান হারানোর প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। যে কোনো কারণে অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন হলে। হার্ট অ্যাটাকের ফলশ্রুতিতেও কেউ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বাধাপ্রাপ্ত হলে সাময়িকভাবে অজ্ঞান হতে পারে।
ডা. এম শমশের আলী, সিনিয়র কনসালট্যান্ট,
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং
মুন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী।