জিইউকে রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বিশ্বমানের এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি উত্তরের জেলা গাইবান্ধায় নতুন চমক। প্রতিষ্ঠানটি উদ্ভাবনী শিখন পদ্ধতি, সৃজনশীলতা, সমালোচনামূলক ভাবনা, যোগাযোগ দক্ষতা এবং সহযোগিতার বিকাশকে অগ্রাধিকার দিয়ে শিক্ষার্থীদের শুধু একাডেমিকভাবে নয়, নৈতিকভাবেও দক্ষতা অর্জনে সহায়ক হবে। গাইবান্ধা শহরসংলগ্ন গাইবান্ধা-সাঘাটা আঞ্চলিক সড়কের নশরৎপুর এলাকায় ২০ বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠে ‘জিইউকে রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজটি’। এ বছর শিক্ষাকার্যক্রম শুরু হয়। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণ-উন্নয়ন কেন্দ্র (জিইউকে) এটি বাস্তবায়ন করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে প্রযুক্তিনির্ভর সব সুবিধা নিশ্চিত করছে, অপরদিকে দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকদের সমন্বয়ে শিক্ষার্থীদের বাস্তবমুখী পাঠদানে নিয়েছে বৈচিত্র্যময় পদক্ষেপ। প্রতিষ্ঠানটির নিবেদিত শিক্ষাকর্মীরা পাঠ্যক্রমের মধ্যে কোডিং এবং রোবটিক্স অ্যাপ্লিকেশনগুলো একীভূত করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সক্রিয় জ্ঞান সৃষ্টিকে উৎসাহিত করছেন। সরেজমিন, মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করেই চোখে পড়ে নানান জাতের ফুল, ফলদ ও ওষুধি গাছ। পুরোপুরি কোলাহলমুক্ত ও মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশে দুটি পৃথক খেলার মাঠ রয়েছে। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে নিরাপদ ও মানসম্মত আবাসন ব্যবস্থা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য রয়েছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ অডিটোরিয়াম ও পৃথক সাংস্কৃতিক চর্চা কক্ষ। ভবনের নিচতলায় থাকছে সুবিশাল কাফেটেরিয়া। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য এটি তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে অত্যাধুনিক জিম ও সুইমিংপুল। স্কুল ভবনের সঙ্গেই দূরের দর্শনার্থী ও অভিভাবকদের জন্য নির্মিত হয়েছে আবাসিক সুবিধা। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য থাকছে বেশ কয়েকটি পরিবহন সুবিধা। পাঠদানের পাশাপাশি কালচারাল ক্লাব, বিতর্ক ক্লাব, ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব, বিজ্ঞান, লোগো ও রোবোটিকস ক্লাবের মাধ্যমে সহপাঠক্রমিক কার্যক্রম যুক্ত করা হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের অন্যতম বৈশিষ্ট্যের মধ্যে প্লে থেকে কেজি পর্যন্ত ক্যামব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল কারিকুলামে পাঠদান করা হয়। শিক্ষার্থীদের কমপক্ষে তিনটি ভাষায় দক্ষ করে গড়ে তোলার প্রক্রিয়া চলছে। তবে এ বছর প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কারিকুলামে পাঠদান শুরু হয়েছে। এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ৩০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। পর্যায়ক্রমে নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৩ জন শিক্ষক পাঠদান করাচ্ছেন। চার কর্মকর্তাসহ এ প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী রয়েছেন ১৯ জন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১০০ জন ধারণক্ষমতার আবাসিকে বর্তমানে ৩২ শিক্ষার্থী আছেন। এর মধ্যে রংপুর, দিনাজপুর, লালমনিরহাট ও বগুড়া থেকে আসা শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ জহুরুল কাইয়ুম বলেন, ২০২৫ সালে প্লে থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া হয়েছে। পড়ালেখার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ভালো নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য। এজন্য শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মনো পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যাতে সাবলীলভাবে বাংলা ও ইংরেজিতে কথা বলতে ও লিখতে পারে এজন্য বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। শ্রেণিকক্ষে সর্বোচ্চ ৩০ শিক্ষার্থী নিয়ে নিবিড়ভাবে পাঠদান করা হচ্ছে।
জিইউকে রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও গণ-উন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী প্রধান এম আবদুস সালাম জানান, গণ-উন্নয়ন কেন্দ্র তিন যুগের বেশি সময় ধরে উপানুষ্ঠানিক, প্রাক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কারিগরি শিক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে আসছে। এ অভিজ্ঞতা থেকে বিশ্বমানের এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। অভিভাবকরা সন্তানদের ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করিয়ে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন, আর আমরা সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে অভিভাবকদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে স্কুল ও কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেছি। বিশ্বের যে কোনো দেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যাতে এখানকার শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে, সে পরিবেশ এখানে নিশ্চিত করা হয়েছে। এখানে বিদেশি শিক্ষক ও ভলানটিয়ার দিয়ে পাঠদানের ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য দেশের ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থানে শিক্ষা সফরের পাশাপাশি বিদেশে শিক্ষা সফরের সুযোগ থাকবে। থাকবে সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ ও নীতিনৈতিকতার চর্চার ব্যবস্থা। তিনি বলেন, উত্তরাঞ্চল ও দেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে সাধ্যের মধ্যেই রাখা হয়েছে, যাতে করে সব শ্রেণিপেশার মানুষ তাদের সন্তানদের ভর্তি করাতে পারেন। দেশের যে কোনো অঞ্চল ও দেশের বাইরের শিক্ষার্থীরাও এখানে ভর্তি হতে পারবেন। নির্বাহী প্রধান এম আবদুস সালাম বলেন, ব্যবসার উদ্দেশ্যে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়নি। এ প্রতিষ্ঠান থেকে যা আয় হবে তা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের পাশাপাশি সংস্থার উপানুষ্ঠানিক, প্রাক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কারিগরি শিক্ষা কর্মসূচিতে ব্যয় করা হবে। এতে আর বিদেশিদের সাহায্যের অপেক্ষা করতে হবে না বলে জানান তিনি।