রাশিয়ার সঙ্গে কয়েক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিরক্ষাসহ ১৬টি চুক্তি সম্পন্ন করেছে ভারত। এর মধ্যে রয়েছে মিসাইল সিস্টেম, সামরিক হেলিকপ্টার এবং রণতরী। শনিবার ভারতের গোয়ায় ব্রিকস সম্মেলন শুরু হওয়ার আগেই দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একান্ত বৈঠকে বসেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আর এই বৈঠকের পরই দুই দেশের মধ্যে কয়েক শ’ কোটি টাকা মূল্যের একাধিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে।
এদিন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সামনে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪০ হাজার কোটি রুপি) মূল্যের ‘এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ’ বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী ভূমি থেকে আকাশ (স্যাম) মিসাইল সিস্টেম চুক্তি স্বাক্ষর করে দুই দেশ।
চীন ও পাকিস্তান থেকে সম্ভাব্য হামলা ঠেকাতে ও নিজেদের আকাশসীমাকে নিরাপদ করতে বেশ কিছুদিন ধরেই অত্যাধুনিক ‘এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ’ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম কিনতে ইচ্ছা পোষণ করে আসছিল ভারত। চুক্তি অনুযায়ী, রাশিয়া থেকে পাঁচটি এই সিস্টেম কিনতে চলেছে ভারত।
এর সঙ্গে থাকবে প্রায় হাজার মিসাইল। শব্দের চেয়েও দ্রুতগামী শত্রু-বিমান, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন বিধ্বংসী এই মিসাইলের পাল্লা প্রায় ৪০০ কিলোমিটার। একসঙ্গে ৩৬টি লক্ষ্যবস্তুকে ধ্বংস করতে সক্ষম এস-৪০০। এক কথায় দেশের আকাশসীমার ওপর শত্রুর আঘাত থেকে সুরক্ষায় এর জুড়ি মেলা ভার।ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে খবর, এই সিস্টেমগুলো চীন ও পাকিস্তান সীমান্তে মোতায়েন করা হবে।
প্রসঙ্গত, ভারত হল দ্বিতীয় দেশ যাকে রাশিয়া এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বিক্রি করেছে। এর আগে চীন ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে এই সিস্টেম কিনেছে।
প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের মধ্যে আরও একাধিক চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে এদিন। ঘোষণা অনুযায়ী, ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য চারটি অত্যাধুনিক স্টেলথ ফ্রিগেট যুদ্ধজাহাজ তৈরি করবে রাশিয়া।
জানা গেছে, প্রজেক্ট ১১৩৫৬-এর আওতায় ভারতকে ‘অ্যাডমিরাল গ্রিগোরোভিচ’-শ্রেণির গাইডেড-মিসাইল স্টেলথ ফ্রিগেট কিনবে ভারত। চুক্তি অনুযায়ী, দুটি রাশিয়া থেকে আসবে। বাকি দুটি রুশ প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি হবে ভারতে।
পাশাপাশি, অত্যাধুনিক সামরিক অ্যাটাক হেলিকপ্টার ‘কামোভ-২২৬টি’ যৌথভাবে তৈরি করবে দুই দেশ। এক্ষেত্রে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। অত্যাধুনিক এই হেলিকপ্টারের ২০০টি ইউনিট নেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছে নয়াদিল্লি। ভারতের ইচ্ছা, কামোভ হাতে এলে, বুড়ো হয়ে যাওয়া চিতা ও চেতক হেলিকপ্টারকে বসিয়ে দেওয়া হবে।
শনিবার থেকেই শুরু হচ্ছে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে গঠিত ব্রিকস সম্মেলন। এই সম্মেলনে পাকিস্তান মদতপুষ্ট নাশকতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য বাকি দেশগুলোকে তুলে দেবে ভারত। পাশাপাশি, নাশকতা নির্মূল করতে ভারতের বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করা হবে। তার আগে পুতিনের সঙ্গে এই গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সেরে নিল ভারত।
প্রতিরক্ষা পাশাপাশি, অসামরিক ক্ষেত্রেও একাধিক চুক্তি স্বাক্ষরিত করেছে দুই দেশ। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল তামিলনাড়ুর কুড়ানকুলামে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের তিন ও চার নম্বর চুল্লি নির্মাণ চুক্তি। পাশাপাশি, আরও ৮টি ইউনিট গঠন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এছাড়া, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বেসরকারি তেল সংস্থা এসার অয়েলকে ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে কিনে নিয়েছে রুশ সরকার-পরিচালিত রসনেফ্ট। পাশাপাশি নগরোন্নয়ন ও স্মার্ট সিটি গঠন, যৌথ মহাকাশ গবেষণা, রেল পরিবহণ সহযোগিতা, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ এবং লজিস্টিক্স নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/১৬ অক্টোবর, ২০১৬/মাহবুব